না বসেছে স্মোক ডিটেক্টর, না স্প্রিঙ্কলার।
থাকার মধ্যে রয়েছে শুধু জলের ব্যবস্থা আর পাম্প। কিন্তু তা-ও যথাযথ নয় বলে অভিযোগ।
বছর তিনেক আগে কলকাতার আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে যথাযথ অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী এত দিনেও সম্পূর্ণ অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। সম্প্রতি জেলার দমকল বিভাগের একটি দল হাসপাতালটি পরিদর্শন করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই দমকল বিভাগের পরামর্শ মতো অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য একটি পরিকল্পনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছেন। তা নিয়ে দমকলের সঙ্গে ফের আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে অনেকে মারা যান। আহতও হন অনেকে। হাসপাতালের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ না থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও হন হাসপাতালের কর্মকর্তারা। আমরি-কাণ্ডের পরই রাজ্য সরকার হাসপাতালগুলিকে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক ভাবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু উলুবেড়িয়া হাসপাতালে সেই নির্দেশ এখনও ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা দমকল কর্তারাই।
কেন ওই অভিযোগ তুলছে দমকল?
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেই জল পাম্প করে ভবনের উপরে তোলারও ব্যবস্থা থাকা উচিত। হাসপাতালের কোথাও আগুন লাগলে তা দ্রুত নির্ণয় করার জন্য ‘স্মোক ডিটেক্টর’ (ধোঁয়া চিহ্নিত করার যন্ত্র) থাকতে হবে। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘স্প্রিঙ্কলার’ (মুখে কাচের আচ্ছাদন-সহ জলের পাইপ। যে আচ্ছাদন নির্দিষ্ট তাপে ফেটে পাইপ থেকে জল আপনা থেকেই পড়তে শুরু করে) বসাতে হবে। এ ছাড়া, হাসপাতাল ভবনে পর্যাপ্ত সংখ্যক দরজা রাখতে হবে। ভবন সংলগ্ন ফাঁকা জায়গাও থাকতে হবে।
কিন্তু উলুবেড়িয়া হাসপাতালে এখনও ‘স্মোক ডিটেক্টর’ এবং ‘স্প্রিঙ্কলার’ বরসানো হয়নি। জলের ব্যবস্থা এবং তা উপরে তোলার পদ্ধতিও যথাযথ নয় বলে দমকল কর্তাদের দাবি। মূল ভবনের একতলায় ৫টি ‘প্রবেশ’ ও ‘বাহির’ পথ রয়েছে। দোতলা থেকে নামার জন্য দু’প্রান্তে দু’টি সিঁড়ি রয়েছে। এ ছাড়া, দোতলায় হাসপাতাল সুপারের ঘরের কাছে এবং ক্যান্টিনের কাছে ফাঁকা জায়গা রয়েছে।
হাওড়ার আঞ্চলিক দমকল কর্তা সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ জলের ব্যবস্থা রাখা এবং স্মোক ডিটেক্টর এবং স্প্রিঙ্কলার বসানোর পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। আমাদের কাছে পুরো নকশা পাঠালে সিঁড়ি, দরজা-সহ বিভিন্ন জায়গার মাপজোকের পরে প্রয়োজনীয় আরও পরামর্শ দেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে গড়ে তিনশোরও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন হাজার খানেক রোগী আসেন। বছর খানেক আগে হাসপাতালের দোতলায় একটি ঘরে আগুন লেগেছিল। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। কিন্তু তার পরেও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা হয়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, সেই প্রক্রিয়া চলছিলই। হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আমরা একটি পরিকল্পনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছি। তারা ছাড়পত্র দিলে দমকলের সঙ্গে ফের কথা বলা হবে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দালের আশ্বাস, এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy