কম বাজেটেই ঘর ঝকঝকে করে তুলুন।
পুজোর বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তবে খুব একটা সময়ও নেই। তবে ইচ্ছা করলে এরমধ্যেই বাড়ির অন্দরসজ্জায় বেশ খানিকটা বদল আনতে পারেন আপনি। খুব আহামরি কিছু যদি না-ও হয়, ঘরের আবহাওয়ার বদল ঘটানো যেতেই পারে। একটু এদিক-ওদিক করলেই হবে। তেমনই কিছু দরকারি টিপস রইল আজ।
বাড়ির সবক’টি ঘরেই হালকা কিছু পরিবর্তন এনে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ঘর। প্রতিটা পরিবর্তনকেই কিন্তু করতে হবে খুব বুঝে, যা কিনা পকেটসই-ও হবে আবার একটা আলগা চটকও আনবে আপনার বাড়িতে।
ঘর সাজানো মানে অনেকে ধরেই নেন, সে সব খুব খরচের বিষয়। কিন্তু একটু শ্রম আর বুদ্ধি খরচ করলে কিন্তু খুব সহজেই ঘরবাড়ি সেজে উঠতে পারে এই উৎসবের মরসুমে। দেখে নিন কেমন কৌশলে সাজিয়ে তুলবেন সে সব।
আরও পড়ুন: বেড়াতে যাচ্ছেন? বাড়ির সুরক্ষার কথা কী ভেবেছেন?
মেঝে মার্বেলের অথবা পুরনো মোজাইক দানার হলে,ঘর,রান্নাঘর এবং বাথরুমের মেঝে পালিশ করে নিন। আজকাল অনেকেই পার্টেক্স করিয়ে নেন, তেমন হলে মেঝে নিয়ে চিন্তা অনেকটাই কমে যায়। তবে পার্টেক্সের মেঝে যদি কম ঘষা থাকে, তা হলে পুজোর আগে তাকে আর একটু ঘেষেমেজে তেলা করে নিতে পারেন। মেঝেতে টাইলস থাকলে ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে চকচকে করুন।বাথরুমে ফ্লোর টাইলস থাকলে জয়েন্টগুলোতে মাঝেমাঝে হোয়াইট সিমেন্টের প্রলেপ দিন। এতে জলের লিকেজ হবে না। বাথরুমের, রান্নাঘরের ওয়াল টাইলস কিংবা কিচেন কাউন্টার ভালভাবে পরিষ্কার করিয়ে নিন।
ঘরের আসবাবপত্র একটু এদিক-ওদিক করে নিন।পারলে খাট-টেবিল, ডাইনিং টেবিল এগুলোকেই একটু অদলবদল করে নিন। মাঝেমধ্যে আসবাবের জায়গার হেরফের ঘটালে ঘর অন্যরকম দেখতে লাগে। পুরনো কাঠের আসবাব থাকলে এই সুযোগে পালিশ করিয়ে নিন। ন্যাচারাল পালিশ করাবেন।যাতে আগের রঙটা থাকে। তবে একটা চকচকে ভাবও যেন আসে। আসলে পুরনো দিনের পালিশের ঐতিহ্যই আলাদা। ঘরের মধ্যে কয়েকটি গাছসুদ্ধ টব রাখুন।তবে মাটির টবগুলো প্লাস্টিক,পিতল বা সেরামিকের টবের মধ্যে রাখবেন, বা প্লেট জাতীয় কিছুর উপরে টবগুলো বসাবেন। এতে টবের অতিরিক্ত জলে মেঝে ভিজবে না আবার দেখতেও ভাল লাগবে।
আরও পড়ুন: ঘরের কোণ সাজান মনের মতো করে
বসার ঘরের দেওয়ালে দু’-একটা ক্যানভাস পেইন্টিং ফ্রেম করিয়ে লাগিয়ে নিন।নানা প্রদর্শনী থেকে ছবি সংগ্রহ করতে পারেন।তবে পেইন্টিংয়ের রং যেন উজ্জ্বল হয়। খাবার টেবিলে সুন্দর একটা ঝুড়িতে ফল রাখুন। তার পাশেই রাখুন কাটলারির সেট। টেবিলের কভারটা পুজোর ক’দিন বদলে বদলে দিন। টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন ডিনার সেট। পর্দা,কুশন কভার,বালিশের কভার, বিছানার চাদরগুলো পুজোর আগে পাল্টে দিতে পারেন।নতুন কিনলে থিম নির্ভর কিছু কিনুন।
ফলস সিলিংয়ের আলোগুলো দেখেরাখুন।লাইট কেটে গেলে পাল্টে নিন।উৎসবের দিনে সব আলো একসঙ্গে জ্বলে ওঠে যেন। ঘরের যে কোনও একটি কোণাকে সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলুন। ঝুল ঝেড়ে নানা র্যাক বানিয়ে সেখানে রাখতে পারেন ঘর সাজানোর টুকটাক জিনিস। কোণার দিকে আসবাব কম থাকলে লতানো গাছও রাখতে পারেন কোণায়। প্রবেশপথের সামনেই একটা বড় আয়না রাখবেন।সঙ্গে ড্রয়ার এবং টেবিল টপ।কনসোল বলা হয় একে। কেউ বা খুব সুন্দর লম্বা কোনও পেন্টিং রাখেন প্রবেশ পথের দেওয়ালে। এই পদ্ধতিও বেশ আকর্ষক। প্রবেশ পথের বাইরে সুন্দর একটা নেমপ্লেট বসিয়ে নিন। আগেরটা পুরনো হয়ে গেলে পাল্টে দিন।টেরাকোটার নেমপ্লেটওবসাতে পারেন। দেখতে বেশ ভালো লাগবে। উৎসবের আগে সারা বাড়ির রং করানো সম্ভব হলে করিয়ে নিন। অন্যথায় কোনও একটি দেওয়াল বেছে আর্টিস্টিক পেন্ট অথবা ওয়াল পেপার লাগাতে পারেন।ঘরটা নতুন লাগবে।
উৎসবের কিছুদিন ড্রইংরুমের সোফার সামনে কার্পেট পেতে রাখতে পারেন।এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন ডাস্ট ক্লিন করতে হবে। শোওয়ার ঘরে একটা প্রকৃতির ছবি রাখুন। পাহাড়ের ছবি হলেই ভাল।এমন জায়গায় রাখবেন যাতে শুয়ে শুয়েও দেখা যায়। কেমন একটা বেড়ানোর স্বাদ মনে উঁকি দেবে। কিচেন গার্ডেন থাকলে একটু পাল্টে পাল্টে কখনও লঙ্কার গাছ, কখনও টম্যাটো, কখনও আবার বেগুন গাছ লাগানো যায়। টাটকা সবজি প্রতিদিন দেখলে উৎসবের আনন্দ বেড়ে যাবে। বাথরুমে যদি শাওয়ার এলাকাটা একেবারে শেষপ্রান্তে হয়, তাহলে একটা ভারীপর্দা লাগিয়ে নিতে পারেন।এতে শাওয়ারের জল বাইরে ছিটকে আসবে না।
একটু পুরনো বাড়ি যদি হয় এবং যদি প্রচুর বই থাকে, তাহলে পুজোর আগে একবার টারমাইট ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন। খরচ খুবই সামান্য।তবে বাচ্চারা থাকলে অন্তত একদিন সেই ঘরে ঢুকতে দেবেন না। প্রবেশ পথের সামনেই কোনও একটা টেবিলের উপর একটা কাচের পাত্রে জল রাখুন।তাতে সুবাসিত ফ্লোটিং ক্যান্ডেল ভাসিয়ে দিন। সঙ্গে কয়েকটা গোলাপের পাপড়িও দিয়ে দিতে পারেন। সোফার কভারটা একটু বদলে দিতে পারেন। বেশ নতুন লুক হয়ে যাবে। একটা ছোট ফাউন্টেন অথবা একটা অ্যাকোরিয়াম এই উৎসবের দিনে ঘরে নিয়ে আসতে পারেন। ফলস সিলিং থাকলে সিলিংয়ে বা দেওয়ালে ভাল সাউন্ড বক্স লাগিয়ে নিন।উৎসবের দিনগুলোয় কখনও আবৃত্তি, কখনও গানবাজতে থাকুক। পরিবারের সকলের সঙ্গে আপনি গানে-কবিতায় মেতে উঠুন। ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।
(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy