Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

জীবনের যাত্রাপথে ক্যানসারজয়ীরা

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন বছর তেতাল্লিশের সুতপা মজুমদার। মনে হয় যেন দুঃস্বপ্ন। ‘‘এই ভাবে আবার হেঁটে বেড়াব, ভাবতেও পারিনি তখন।’’ শনিবার বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আয়োজিত পদযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে এমনটাই বলছিলেন তিনি।

জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসে পদযাত্রা। শনিবার, আর জি কর হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ

জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসে পদযাত্রা। শনিবার, আর জি কর হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৯
Share: Save:

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন বছর তেতাল্লিশের সুতপা মজুমদার। মনে হয় যেন দুঃস্বপ্ন। ‘‘এই ভাবে আবার হেঁটে বেড়াব, ভাবতেও পারিনি তখন।’’ শনিবার বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আয়োজিত পদযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে এমনটাই বলছিলেন তিনি।

বলছিলেন, পঁচিশ বছর আগে হঠাৎ এক দিন বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করেন সুতপাদেবী। চিকিৎসক জানান, তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। তখন তাঁর ছেলের বয়স মাত্র আড়াই বছর। ‘ছেলেটাকে আর বড় হতে দেখতে পারব না,’ সব সময়ে এমনটাই ভয় হত। তখন তাঁকে সাহস দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিজনেরা।

শুধু সুতপাদেবীই নন, চুয়ান্ন বছরের রিঙ্কু চৌধুরী, বাষট্টির ছায়া মিত্র এবং আরও অনেকেই লড়াই চালিয়েছেন ক্যানসারের মতো মারণ রোগের সঙ্গে। তাঁরা সকলেই
বিজয়ী। কারণ তাঁরা জয় করতে পেরেছেন ক্যানসারকে। এখন তাঁরাই অসংখ্য ক্যানসার আক্রান্ত মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের মনোবল জোগাচ্ছেন। বলছেন, ‘হাল ছেড়ো না। তোমরাও পারো।’

শনিবার এমনই নানা ছবি দেখা
গেল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির আয়োজিত পদযাত্রায়। বিকেল সাড়ে চারটেয় এই পদযাত্রা ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় মোহরকুঞ্জে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিজয়া মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি নিজেও এক সময়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিবার পাশে থাকলে লড়াইটা কিছুটা হলেও সহজ হয়। যাঁরা আজ সুস্থ, পরিবার পাশে না থাকলে হয়তো তাঁরা আজকের দিনটা দেখতেই পেতেন না।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার দিনভর বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি এবং আর জি করের ‘ফাইট ক্যানসার’ মঞ্চ। সকাল সাড়ে আটটায় পদযাত্রার দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তাতে যোগ দেন উত্তর কলকাতার বহু মানুষ এবং আর জি করের চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীরা। আর জি করের রেডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির মানুষ এবং চিকিৎসক ছাড়াও যে সব কর্মী চিকিৎসায় সাহায্য করেন, তাঁদের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ।
তিনি বলেন, ‘‘সময় মতো বুঝতে পারলে ক্যানসারঘটিত মৃত্যুকে রুখে দেওয়া যায়।’’

একই মত অন্যান্য ক্যানসার বিশেষজ্ঞদেরও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে, রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় অবশ্যই সম্ভব।’’ চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অঙ্কোলজি বিভাগের ডিরেক্টর জয়দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সচেতনতাই হল ক্যানসারের সঙ্গে মোকাবিলা করার সর্বপ্রথম উপায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মিডিয়া ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ক্যানসার সচেতনতা প্রচারের কাজ অনেকটাই সফল হয়ে উঠছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE