সতর্ক না হলেই সমস্যায় ফেলতে পারে কনজাংটিভাইটিস। ছবি: শাটারস্টক।
নামেই বসন্ত! এ দিকে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে হু হু করে। গরমে অস্বস্তি বাড়লেই বিকেলের দিকের ঝড়বৃষ্টিতে উষ্ণতা খানিকটা কমে যাচ্ছে। তীব্র গরম আবার হটাৎ করেই সেলসিয়াসের নেমে যাওয়া, সব মিলিয়ে জীবাণুরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে এই সময়। বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাসবাহিত অসুখও জাঁকিয়ে বসতে থাকে শরীরে।
এমন আবহাওয়ায় কনজাংটিভাইটিসের হানাও শুরু হয়। আগে প্রবল গরম বা বর্ষায় এ সব অসুখের দেখা মিললেও আজকাল প্রায় সারা বছরই এ সব সংক্রমণ দেখা যায়। ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়ার কারণে এই অসুখ হয়। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি থেকেও এই অসুখের শিকার হয় মানুষ। চোখের কনজাংটিভায় সংক্রমণ হলে এই অসুখ দেখা যায়। সাধারণত, কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই অসুখ সহজে সেরে যায়। কিন্তু এই অসুখ নিয়ে নানা মিথ অনেক সময়ই ভুল পথে চালিত করে আমাদের। এতে অসুখ সারতে তো দেরি হয়ই উল্টে তা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
‘‘কারও কনজাংটিভাইটিস হলেই আমরা ধরে নিই, যেহেতু এই অসুখ ছোঁয়াচে, তাই তার দিকে তাকালেই আমাদেরও তা হবে। এ অসুখ কাশি নয় যে এর জীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে আর তাকালেই হয়ে যাবে। এ অসুখ ছোঁয়াচে ঠিকই, তবে তখনই হবে, যদি রোগীর চোখের কোনও রকম সংস্পর্শে কেউ আসেন। যেমন রোগী নিজের চোখে হাত দিয়ে তার পর হয়তো কিছু একটা ধরলেন, সে জিনিস তার পর আপনিও ধরলেন, আর সে হাত চলে গেল চোখে। তখনই এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে এ গুলো সবই ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস ঘটিত কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে হয়।’’— জানালেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্ত। এই অসুখের লক্ষণ, চোখের যত্ন ও সতর্কতার বিষয়ে জানেন?
আরও পড়ুন: মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে টিবি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
লক্ষণ
এই অসুখে চোখ লালচে হয় চোখ থেকে অনবরত জল পড়ে। পিচুটি জমতে থাকে। চোখে ব্যথা যন্ত্রণা তো থাকেই, সঙ্গে চোখ চুলকোতে থাকে। অতিরিক্ত আলোয় কষ্ট বাড়ে। পিচুটি জমতে থাকে ঘন ঘন ও চোখ ফুলে যায়। চোখে কিছু পড়লে যেমন কড়কড় করে, অনেকটাই সে রকম বোধ হয়। দৃষ্টিশক্তিও কিছুটা ঘোলা লাগে।
এই রোগ হলে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এই সময় আবহাওয়ার কারণে জীবাণু অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই ওষুধের চেয়েও নিয়ম মানাটা জরুরি হয়ে পড়ে। তবে চোখের কোনও অ্যালার্জি থেকে এই অসুখ হলে তাতে অবশ্যই বাড়তি কিছু ওষুধপত্রের দরকার পড়ে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চোখে ব্যথা হওয়া এই অসুখের অন্যতম সমস্যা, তাই চোখের বিরাম দিন।
রোগ হওয়ার পরের সতর্কতা
মাঝে মাঝেই গরম জলে তুলো ভিজিয়ে জল নিংড়ে সেই গরম তুলোর ভাপ নিন চোখে। দিনে চার-পাঁচ বার জলে সামান্য নুন ফেলে চোখে ঝাপটা দিন। হাত দিয়ে পিচুটি সরাবেন না, বরং কোনও তুলো গরম জলে ভিজিয়ে তা দিয়ে পরিষ্কার করুন চোখ। রোগ সেরে না যাওয়া অবধি রোগীর ব্যবহৃত তোয়ালে, রুমাল, বালিশ আলাদা করুন। সূর্যালোকে না বেরনোই শ্রেয়, একান্ত বেরতেই হলে চোখে সানগ্লাস রাখতে হবে। টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করবেন না। কোনও জরুরি কাজ থাকলে চোখে সানগ্লাস পরে করতে হবে সে সব কাজ। দিনে চার-পাঁচ বার অ্যান্টিবায়োটিক আইড্রপ দিতে হবে। রাতে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করুন। ঘুমনোর আগে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে রাখলে চোখ আঠালো হয়ে জুড়ে যাবে না। চোখে হাত দিলে হাত ভাল করে পরিষ্কার করুন। স্টেরয়েড দেওয়া আইড্রপ সাময়িক আরাম দিলেও একেবারেই তা ব্যবহার করা যাবে না। চোখে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে কনজাংটিভাইটিস হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তখন কিন্তু স্রেফ সুরক্ষা আর আইড্রপে তা ভাল হওয়ার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy