Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
dol

রাসায়নিকের ক্ষতি এড়াতে দোল খেলুন ভেষজ রঙে, কোথায় পাবেন সে সব?

প্রত্যেক বারই দোলের পর স্কিন ক্লিনিকে ভিড় বাড়ে। একই সঙ্গে নানান শারীরিক সমস্যার শিকার হতে হয় বাচ্চাদের। ত্বকের সমস্যার পাশাপাশি অ্যাজমার অ্যাটাকও বাড়ে।

আবিরেও মেসে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও কাচগুড়ো। ছবি: পিটিআই।

আবিরেও মেসে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও কাচগুড়ো। ছবি: পিটিআই।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ১৬:২০
Share: Save:

বসন্ত উৎসব, দোল বা হোলি। যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই উৎসবের প্রধান উপাদান রং। কৃষ্ণচুড়া, রাধাচুড়া, শিমুল, পলাশ-সহ নানা ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। মনও ফুরফুরে দখিনা বাতাস। তারই মধ্যে এসে গেল রঙের উৎসব। প্রত্যেক বারই দোলের পর স্কিন ক্লিনিকে ভিড় বাড়ে। একই সঙ্গে নানান শারীরিক সমস্যার শিকার হতে হয় বাচ্চাদের। ত্বকের সমস্যার পাশাপাশি অ্যাজমার অ্যাটাকও বাড়ে। রঙের রাসায়ানিকের বিপদ প্রতি পদে। তাই প্রকৃতির রঙ দিয়ে দোল খেলতে বলছেন পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলেই।

‘‘আবিরই হোক অথবা নানা উজ্জ্বল রং— এদের মূল উপাদান নানা ক্ষতিকর রাসায়ানিক। এই সব কেমিক্যালের প্রভাবে র‍্যাশ, এগজিমা আর চুলকানি ছাড়াও কারও কারও আবার শ্বেতির মতো দুধসাদা দাগ হয়ে যায়। বাড়ে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমার অ্যাটাক’’, বলছিলেন ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা সন্দীপন ধর। বাচ্চাদের তো বটেই, বড়দের মধ্যেও রং থেকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে শুরু করে, নানা ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। সোরিয়াসিস থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে। আসলে যে সব কেমিক্যাল দিয়ে রং তৈরি হয়, সেগুলি মূলত ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পে ব্যবহার করার জন্য। তা শরীরে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো হবেই। এ সব রাসায়ানিক মানুষ, পশু-পাখি সহ প্রত্যেকের জন্যই বিপজ্জনক। এমনকী, পরিবেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে যে সব রং চট করে উঠতে চায় না, চেপে বসে থাকে সেগুলি বেশি ক্ষতিকর। তাই গাঢ় রঙে বেশি সমস্যা হয়। আবার রং তুলতে গিয়ে বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: দ্রুত মেদ ঝরাতে চান? ঘুমোনোর সময় মানুন এ সব নিয়ম, তাতেই বাজিমাত!

প্রকৃতি থেকে প্রস্তুত ভেষজ রঙেই আস্থা থাকুক দোলে।

রাসায়ানিক রং থেকে যে সব বিপদের ঝুঁকি থাকে, সে বিষয়ে চিকিৎসক সন্দীপন ধর জানালেন যে, এর সংস্পর্শে ত্বকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে শুরু করে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা অর্থাৎ শ্বেতির ঝুঁকি বাড়ে। ত্বক শুকিয়ে গিয়ে র‍্যাশ, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সোরিয়াসিস, এগজিমা-সহ নানা অসুখের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে যাঁদের এগজিমার প্রবণতা আছে, তাঁদের ভোগান্তি ভীষন ভাবে বেড়ে যায়।

গোলা রঙের সঙ্গে সঙ্গে আবির খেললে ত্বক আরও বেশি ড্রাই হয়ে যায়। আবির চকচকে দেখানোর জন্যে এতে অভ্র ও মিহি কাঁচের গুঁড়ো মেশানো হয়। মুখে গলায় আবির ঘষে মাখানোর সময় ত্বক ছড়ে গিয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। ব্রণ ফুসকুড়ি-সহ যে কোনও র‍্যাশ থাকলে সমস্যা বাড়ে। অনেক সময় আবিরের প্রভাবে অ্যাকনের সমস্যা হয়।

আবির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি শিশু বিশেষজ্ঞ ডা পল্লব চট্টোপাধ্যায় বললেন যে, ‘‘আবির উড়িয়ে দোল খেলার সময় বাতাসে ভেসে থাকা আবির শ্বাসনালীতে পৌঁছে যায়। ইরিটেশন হয়ে হাঁচি, সর্দি, কাশি এবং এর থেকে অ্যাজমার ঝুঁকি ভয়ানক বেড়ে যায়। দোলের পর পরই বাচ্চাদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার এটাই অন্যতম কারণ।’’

দূষনের প্রভাবে ও লাইফস্টাইল বদলে যাওয়ার ফলে ইদানীং অ্যালার্জির প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। শহরে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি খুব বেড়ে যাচ্ছে। হাঁপানির মূল কারণ কিন্তু অ্যালার্জি। দোলের সময় কেমিক্যালের প্রভাবে শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর এই কারনেই বিভিন্ন গাছ, ফল, ফুল ও পাতা দিয়ে রং তৈরি করা হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জবা, গাঁদা, অপরাজিতা ইত্যাদি বিভিন্ন ফুল থেকে রং তৈরি শুরু হয়। ইদানীং রাসায়ানিক-মুক্ত রঙের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি স্তরে বেশ কয়েকটি সংস্থা ফুল ও ফল থেকে রঙ তৈরি শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: হ্যালো ডক্টর: ব্রণ নিয়ে এ সব সমস্যা কি আপনারও আছে? দেখে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

অনলাইনেও এই সব রঙ পাওয়া যায়। এই সব রঙের মূল উপাদান বিভিন্ন গাছের পাতা, ফলমূলের সঙ্গে মূল ভিত হিসেবে ব্যবহার করা হয় ময়দা। ভেষজ রঙের জন্যে হলুদ, বিট, কালো আঙুর আমলকি, জবা গাছের কচি পাতা ও ফুল, পুদিনা পাতা, পালং শাক, লাল চন্দন কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ময়দার সঙ্গে এই সব ভেষজ রঙ মিশিয়ে হোলির রং তৈরি করা হয়। আর এই রং দিয়ে দোল খেললে ত্বকের সমস্যা বা অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

উজ্জ্বল হলুদ আবির ও বাঁদুরে রঙে সব থেকে বেশি পরিমাণে লেড বা সীসা থাকে। এর থেকে আমাদের শরীরে নানা ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যাঁরা মা হতে চলেছেন, রঙের বিষক্রিয়ায় গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই হবু মায়েদের রং না খেলাই ভাল। লেড বা সীসার প্রভাবে লার্নিং ডিসেবিলিটির মতো সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।

নীল রঙে থাকা প্রুসিয়ান ব্লু অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস ও এগজিমার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, জিঙ্ক ইত্যাদির প্রভাবে ত্বক, চুল, শ্বাসনালী-সহ নানা শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। চুল ঝরে টাক পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ বছরের দোল উৎসব হোক ভেষজ রং দিয়ে। নিজেরাও বাড়িতে বানিয়ে নেওয়া যায় ভেষজ রং। নামী কোম্পানির হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে বেসন মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন হলুদ আবির। লাল চন্দনের সঙ্গে সমপরিমাণে ময়দা মিশিয়ে বানিয়ে নিন লাল আবির। অন্য দিকে বিট টুকরো করে কেটে নিয়ে জলে ফুটিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন লাল জল রং। পালং শাক আর পুদিনা পাতা বেটে নিয়ে, ছেঁকে নিলেই তৈরি সবুজ রং। বাদামী রং তৈরি করা যায় মেহেন্দি পাতা, আমলকি ও হলুদ গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে।

তবে দোল খেলার আগে কিছু নিয়ম মানতে পারলে ভাল হয়। বাইরে বেরতে হলে মুখে ও হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে সানস্ক্রিন মেখে বেরলে ভাল। পুরো হাতা সুতির জামা পরে রং খেললে ত্বক বাঁচে।

জমিয়ে রঙ খেলার পর ঠান্ডা জলে ধারা স্নান করুন। এরপর মৃদু সাবান ব্যবহার করলে বিপদের সম্ভাবনা থাকবে না। তবে দোল খেলতে গিয়ে অবলা প্রাণিদের গায়ে রং দিয়ে তাদের বিপদে ফেলবেন না। জানবেন, তাদের ত্বকেও এই সব রাসায়নিক বিষক্রিয়া ঘটায়।

অন্য বিষয়গুলি:

দোল ভেষজ রং Herbal colour Holi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE