ঘাড় আর মাথা যন্ত্রণার সমস্যা বার বার ফিরে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছবি:শাটারস্টক।
নিউরোলজিস্টের চেম্বারে যত রোগি আসেন তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশের সমস্যা মাথাব্যথা৷ তাঁদের মধ্যে আবার প্রায় ৮০ শতাংশ ভোগেন ‘টেনশন হেডেক’-এ৷ জীবনে একবারও এই সমস্যা হয়নি তেমন মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশের কম৷
কারও সমস্যা খুব জটিল থাকে৷ কারও আবার ততটা নয়৷ কারও মাসের মধ্যে ১৫ দিন ধরে মাথাব্যথা চলে৷ ৬ মাস বা এক বছর ধরে চলতে চলতে দেখা দেয় ক্রনিক টেনশন হেডেক৷ কারও আবার অত বাড়াবাড়ি হয় না৷ মাঝে মাঝে সমস্যা হলেও সব মিলে মাসে ১৫ দিনের কম হয়৷ এ রকম হলে তাকে বলে ‘এপিসোডিক টেনশন হেডেক’৷
সাধারণত বিকেলের দিকে শুরু হয় সমস্যা৷ সারা দিনের অশান্তি, ক্লান্তি, অস্থিরতা, বিরক্তি, রাগ, টেনশন, অবসাদ সব কিছু জমে জমে এক সময় তা মাথাব্যথার রূপে সামনে আসে৷
আরও পড়ুন: দুধেই লুকিয়ে ত্বকের এই সব সমস্যার সমাধান! কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
রাতে ভাল ঘুম না হলে সকাল বা দুপুরের দিকেও সমস্যা হতে পারে৷ ভুল বালিশে, ভুল ভাবে শোওয়ার মাশুল অনেক সময় দিতে হয় এ ভাবে৷ সময়ে খাওয়া না হলে বা চোখের কাজ বেশি করলে টেনশন হেডেক হয় অনেকের৷
একটানা চোখের কাজ বাড়ায় বিপদ।
সমস্যা কম রাখতে
একটানা চোখের কাজ করবেন না৷ চোখের ক্লান্তির সূত্রেও মাথাব্যথা হতে পারে৷ আধঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট কাজ করার পর মিনিট খানেক চোখ বুজে থাকুন বা দূরের কিছুর দিকে তাকান৷ গাছপালা বা খোলা আকাশের দিকে তাকাতে পারলে সবচেয়ে ভাল৷ কম্পিউটারে টানা কাজ করতে হলে এক–আধ ঘণ্টা বাদে বাদে চোখ বন্ধ করে দু’–হাতের তালু চোখের উপর চেপে রাখুন৷ একে বলে পামিং৷ মিনিট দুয়েক মতো করলেই হবে৷ কাজের মাঝে দু’-তিন ঘণ্টা বাদে বাদে সুগন্ধি ভেজানো তোয়ালে দিয়ে চোখ–মুখ ঢেকে রাখতে পারেন দু’–পাঁচ মিনিট৷ ক্লান্তি কেটে মন তরতাজা হলে মাথাব্যথা কম হবে৷ পছন্দের মৃদু সুগন্ধি শুঁকলে তরতাজা লাগতে পারে৷ কম্পিউটারে কাজ করলে ঘণ্টায় অন্তত মিনিট দশেক ব্রেক নিন৷ টেনশন বাড়লে মাথাব্যথা বাড়ে৷ কাজেই মানসিক চাপ সামলে চলুন৷ ব্যায়াম ও যোগার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করাতে পারেন৷
সমস্যা হলে
কপালের দু’পাশ, কাঁধ ও ঘাড়ে হালকা মালিশ করুন৷ কপাল, দুই ভুরুর মাঝের অংশ ও মুখেও করতে হবে৷ সম্ভব হলে হাত ও আঙুলে করতে পারেন। কপাল, ঘাড়, পিঠে গরম সেঁক দিন৷ ঘাড় খুব টনটন করলে বরফ সেঁক দিতে পারেন৷ স্নানে ফাঁকি নয়, তবে স্নান করুন উষ্ণ জলে৷ হার্বাল চা খেলেও অনেক সময় উপকার হয়৷ ঠান্ডা জল খেতে পারেন৷ এক–আধবার সাধারণ চা খেলেও অসুবিধে নেই৷ মন শান্ত করতে মৃদু সুর শুনুন৷ ধীরে ধীরে ডিপ বেলি ব্রিদিংও করতে পারেন মিনিট পাঁচেক৷ মূলত টেনশনের ভাবনা থেকে মনকে সরিয়ে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন৷
আরও পড়ুন: অসচেতন যৌন সম্পর্ক ডেকে আনে এই ক্যানসার, সচেতন হন আজই
ক্লান্তিও এই অসুখের অন্যতম কারণ।
চিকিৎসা
মাঝেমধ্যে সমস্যা হলে (এপিসোডিক টেনশন হেডেকে) ব্যথার সময় দু’–একটা প্যারাসিটামল, আইবুপ্রফেন বা অ্যাসপিরিন খেলে সমস্যা মিটে যায়৷ তবে নিয়মিত এই সব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়৷ এ সবের হাজারো সাইড এফেক্ট আছে৷ তা ছাড়া ওষুধ বন্ধ করলে রিবাউন্ড হেডেক বা মেডিকেশন ওভারইউজ হেডেক নামে আরেক ধরনের মাথাব্যথার সূত্রপাত হতে পারে৷ কাজেই চেষ্টা করুন সমস্যার কারণ খুঁজে তাকে দূরে রাখতে ও হলে নিয়ম মেনে তাকে সামলাতে৷
আরও পড়ুন: শরীর-সাস্থ্য নিয়ে এ সব তথ্য আগে জানতেন?
ক্রনিক টেনশন হেডেক কমাতে ডাক্তার দেখান৷ কারণ, রোগটা যে এর চেয়ে জটিল কোনও সমস্যা নয় তা বুঝে নেওয়া দরকার প্রথমে৷ টেনশন হেডেকের সঙ্গে আর কোনও সমস্যা আছে কি না তাও দেখতে হয়৷ এর পর অবস্থা বুঝে ডাক্তার অ্যামিট্রিপটিলিন, টোপিরামেট বা সোডিয়াম ভ্যালপ্রোয়েট জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন৷ কিছু ক্ষেত্রে বটুলিনাম টক্সিনের প্রয়োজন হতে পারে৷
তবে এ ক্ষেত্রেও সেই এক কথা, রোগের কারণ জেনে তাকে দূরে রাখা, ভাল করে স্ট্রেস ম্যানেজ করা এবং নিয়ম মেনে কষ্ট কমানোর চেষ্টা করাই আগে দরকার৷ তাতে কাজ না হলে তবে ওষুধপত্রের প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy