সব্জি না কি সব্জির রস? উপকারের অঙ্ক জেনেই ডায়েটে রাখুন। ছবি: শাটারস্টক।
সুষম খাবারের হিসেব মেলাতে রোজ আড়াই–তিন কাপ সব্জি খাওয়ার কথা৷ কিন্তু কম মানুষই তা করে উঠতে পারেন৷ কারণ টাটকা সব্জি কিনে, কেটে–বেছে, রান্না করা যেমন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এ সব মুখে রোচেও না অনেকের৷ ফলে স্বাস্থ্যরক্ষার তাগিদে তাঁদের অনেকেই আজকাল সব্জির রস খাওয়া ধরেছেন৷
স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন ক্যানসার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদেরও সায় আছে তাতে৷ তাঁরা বলছেন, এক কাপ গাজরের রস খাওয়া আর ৫ কাপ কুঁচোনো কাঁচা গাজর খাওয়া পুষ্টির হিসেবে সমতূল্য৷ এতে পটাশিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ এবং সি আছে ভরপুর৷ আছে উপকারি ফাইটোকেমিক্যালও৷
শুধু গাজর বলে নয়, অধিকাংশ সব্জির রসেই এ সমস্ত নানা উপকার আছে৷ তার পাশাপাশি এদের ক্যালোরি খুব কম, চর্বি নেই বললেই চলে৷ অতএব ওজন ও রক্তচাপ কম রাখার পাশাপাশি হার্ট ভাল রাখতেও এর ভূমিকা আছে৷
আরও পড়ুন: টাক থেকে রুক্ষতা, চুলের সব সমস্যার কাটাতে এই ভাবে ব্যবহার করুন ডিম
চনমনে করে তোলার ব্যাপারেও তারা অনবদ্য৷ প্রবল কাজের চাপে যখন নাওয়া–খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না, একগ্লাস টাটকা সব্জির রস খেয়ে নিলে, চট করে এনার্জি পেয়ে যাবেন৷ ভাবছেন, তা হলে রান্না করা ছেড়ে কাঁচা সব্জির রসই খাবেন, বা বানানোর সময় না পেলে কিনে নেবেন, আর সুস্বাস্থ্য চলে আসবে হাতের মুঠোয়?
না, অত সোজা নয়৷ রস ঘরে বানান কি বাজার থেকে কিনুন, তাতে ভাল–র পাশাপাশি আছে অঢেল মন্দও, বিশেষ করে আমাদের দেশে৷ কাজেই হিসেব–নিকেশ করে না খেলে লাভের বদলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি৷
প্যাকেটের রস বনাম টাটকা রস
নিয়ম মেনে টাটকা রস বানিয়ে, সঙ্গে সঙ্গে খেলে কী উপকার পাওয়া যায়, তা আগেই বলা হয়েছে৷ প্যাকেটের রসে এত গুণ নেই৷ কারণ সে রস পাস্তুরাইজ করে জীবাণুমুক্ত করার সময় অনেক উপকারি উপাদানই নষ্ট হয়ে যায়৷ তার উপর স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু রসে মেশানো হয় গাঢ় ফলের রস৷ ফলে ‘নো অ্যাডেড সুগার’ লেখা থাকলেও তাতে ফ্রুকটোজ তথা সুগার বেশ বেশি থাকে, যা ডায়াবিটিক ও মোটা মানুষদের জন্য মোটেই ঠিক নয়৷
আবার তাতে মেশানো হয় প্রিজারভেটিভ৷ ঠিক মানের জিনিস ঠিক মাত্রায় মেশালে বিরাট ক্ষতি নেই৷ তবে, ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ জানিয়েছেন, ‘আমাদের দেশে অনেক সময়ই সে সব নিয়ম মানা হয় না৷ ফলে ত্বকের নানা রকম সমস্যা হতে পারে৷ বহু রসে মেশানো হয় কৃত্রিম রং ও গন্ধ, তা থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে৷’
আরও পড়ুন: হঠাৎ অনিয়মে ওজন বেড়েছে? এ সব ক্ষেত্রে মেদ ঝরানোর নিয়ম জানেন?
তা হলে কী করবেন? নিজে হাতে রস করে খাবেন? আমাদের দেশে সেটাও নিরাপদ নয়৷ সতর্ক না থাকলে সব্জিতে মিশে থাকা মাটি, জীবাণু, কৃমি, কীটনাশক থেকে বিপদ হতে পারে৷ আর সব্জি তাজা দেখানোর জন্য যদি বিষাক্ত রঙে তাকে ডোবানো হয়, সতর্ক হয়েও খুব লাভ নেই৷ কপার সালফেট, রোডামিন অক্সাইড, ম্যালাকাইট গ্রিন, কার্বাইড ইত্যাদি বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে ডিমেনসিয়া, অ্যালঝাইমার্স এমনকি ক্যান্সারের মতো অসুখও হতে পারে৷ খারাপ হতে পারে লিভার ও কিডনি৷
ব্যাপারটা আরও জটিল হয় যদি রং করা সব্জিকে পেট্রোলিয়াম তেল দিয়ে ঘষে চকচকে করা হয়৷ তখন যতই জল দিয়ে ধোওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, তেলের পরত ভেদ করে জল বিষাক্ত রং পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে না৷
আবার এই তেলের কারণে পেটের গোলমাল যেমন হয়, ফুসফুসেরও ক্ষতি হতে পারে৷ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে খোসা ছাড়িয়ে ভাল করে ধুয়ে রান্না করে খেলেও অনেক সময় এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না৷ কাঁচা খেলে তো কথাই নেই৷ কাজেই, এই সব সব্জি থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভাল৷
খুব বড় মাপের সব্জি নিয়মিত খেলে হরমোনের গোলমাল হতে পারে৷ হতে পারে বন্ধ্যাত্ব৷ এর মূলে আছে অক্সিটোসিন নামের হরমোন, যা ইনজেকশন হিসেবে দিয়ে রাতারাতি সব্জিকে বিরাট আকারের করে তোলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা৷
হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা থাকলে, ডাক্তার যদি লো পটাশিয়াম ডায়েট খেতে বলেন, সবুজ শাক, আরুগুলা, বেসিল (তুলসি), বিট শাক, চাইনিজ বাঁধাকপি, ব্রকোলি, সেলারি, পালং ইত্যাদির রস খাবেন না৷ হাইপোথাইয়েডিজম থাকলেও এক ব্যাপার৷ এ রোগের ওষুধ, থাইরক্সিন খাওয়ার পর পরই এ সব রস খেলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে রোগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে৷
‘কাঁচা সব্জির রস খেলে পেটে ও মাথায় কৃমি হতে পারে৷ গরম জলে ধুয়ে নিলেও সে আশঙ্কা নির্মূল হয় না৷ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের খুব লঘু দ্রবণে মিনিট ১৫ ডুবিয়ে রেখে কলের জলে বেশ ভাল করে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারেন৷ তা ছাড়া রসে ছিবড়ে থাকে না বলে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস–পেটভার, হজমের গোলমালও হতে পারে৷ সে বিপদ এড়াতে রসের বদলে মিক্সিতে সব্জি পিশে স্মুদি বানিয়ে খান।’ জানালেন গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ইন্দ্রনীল সাহা৷
সব্জির রস বানানোর নিয়ম
খুব তাজা–চকচকে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বড় মাপের সব্জি না কেনাই উচিত। কলের জলে রগড়ে ধুয়ে নিন৷ মাটি থাকলে ব্রাশ দিয়ে ঘষুন৷ এ বার বড় গামলার জলে সিকি কাপ সাদা ভিনিগার ও সিকি চামচ সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে তাতে ডুবিয়ে রাখুন৷ ভেগি ওয়াশও ব্যবহার করতে পারেন৷ মিনিট দশেক পর এই জল ফেলে দু’-তিন বার ধুয়ে নিন৷ মোটামুটি ৮০ শতাংশ কীটনাশকের হাত থেকে রক্ষা পাবেন৷ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে পচা, দাগধরা অংশ কেটে ফেলে দিন৷ খোসা ভাল করে ছাড়িয়ে রস বানান৷ রস বানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন৷ জুসারও ধুয়ে রাখবেন৷ নাহলে সেখানে জীবাণুর বাড়বৃদ্ধি হবে৷ পরের বার রস বানানোর সময় তা রসে সংক্রামিত হয়ে অসুস্থ করে তুলবে৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy