ছবি: সংগৃহীত।
দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে মা যখন হাড়ের চিকিৎসকের কাছে গেলেন তখন তার ঘাড় শক্ত হয়ে গিয়েছে। হাঁটু দু’টো কাঁপে। পিঠে আর কোমরে অসহ্য ব্যথা। রাতে ঘুমোতে পারে না।
চিকিৎসক ছেলেটিকে দেখে শঙ্কিত। তার মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে গিয়েছে। ঘাড়ের পেশি ক্ষয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। শরীরের ভার আর রাখতে পারছে না হাঁটু। মা বলছিলেন, ‘‘আগে আমরা ব্যথার অভিযোগে তেমন পাত্তা দিইনি। এখন ওর যন্ত্রণা আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।’’
চিকিৎসক ছেলেটির মাকে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে দেখা করতে বললেন, বইখাতা সমেত। ছেলের ওজন নেওয়া হল। নেওয়া হল ব্যাগের ওজনও। ৩৫ কেজি ছেলের ব্যাগের ওজন ১২ কেজি। চিকিৎসক বললেন, ‘‘আগে ব্যাগের ওজন কমান।’’
স্কুলব্যাগের ওজন কমানোর কথা চলছে নব্বইয়ের দশক থেকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব জানিয়েছেন, সরকার এ বিষয়ে নতুন নির্দেশ দেওয়ার তোড়জোড় করছে। তেলঙ্গানা সরকার ইতিমধ্যেই স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের জন্য এ ব্যাপারে অবিলম্বে তৎপর হওয়া জরুরি, বলছেন অনেক চিকিৎসকই।
ব্যাগের ওজনের সঙ্গে ব্যথার সম্পর্কটা কী? আর্গোনমিস্টরা বলছেন, পিঠের ব্যাগ যথাযথ ওজনের না হলে তা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ের মাংসপেশির বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। তেমনই মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠনের উপরেও তার প্রভাব থাকে। ব্যাগের ওজন অস্বাভাবিক বেশি হলে পেশি ছিঁড়েও যেতে পারে।
আরও পড়ুন:বৃদ্ধ স্বামীতে আপত্তি নেই, চাই শুধু এক জন সঙ্গী
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্গোনমিক্সের শিক্ষক দেবাশিস সেন বলেন, শিশুদের বৃদ্ধির সময়ে ঘাড়ে বা পিঠে অতিরিক্ত ভার বসালে হাঁটাচলার স্বাভাবিক ভঙ্গি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পিঠের ভারের সঙ্গে বিভিন্ন পেশি, হাড়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। যা স্থায়ী ভাবে শরীরের স্বাভাবিক গড়নকেই প্রভাবিত করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্গোনমিক্সের এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, অতি ভারী ব্যাগ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে দৌড়ঝাঁপ করে, তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়ি ভেঙে উঠে যায়, তাতে মেরুদণ্ড-সহ শরীরের যে সব পেশি এবং হাড় অঙ্গসঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এটা ক্ষতিকর।
শারীরবিদরা জানাচ্ছেন, কোনও শিশু বা কিশোর-কিশোরীর নিজের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারী ব্যাগ কাঁধে তোলা উচিত নয়। অর্থাৎ কোনও ৮ বছরের ছেলে বা মেয়ের ওজন যদি ৩০ কেজি হয়, তবে ব্যাগের ওজন ৩ কেজির বেশি হবে না।
এ দেশে স্কুলব্যাগের ওজন ও ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রথম সমীক্ষাটি করেছিল অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (অ্যাসোচেম)-এর স্বাস্থ্য শাখা। দশটি শহরে সমীক্ষা চালিয়ে সংস্থাটি দেখেছে, ৭ থেকে ১৩ বছরের ছাত্রছাত্রীদের অন্তত ৮৮ শতাংশ তাদের ওজনের থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি ওজনের ব্যাগ নেয়।
বিপদ আরও বেশি হওয়ার আর একটি কারণ স্কুলব্যাগের আকৃতি। দেবাশিসবাবুর বিশ্লেষণ, ‘‘এখন ছাত্রছাত্রীরা যে ব্যাগ ব্যবহার করে, তা নেমে আসে পিঠের শেষ পর্যন্ত। ফলে তা কোমরের হাড়ের উপরেও অতিরিক্ত চাপ দেয়। অনেক ক্ষেত্রে হাঁটুর উপরেও প্রভাব ফেলে।’’ সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা দেখেছেন, এই লম্বাটে ব্যাগের দু’টি স্ট্র্যাপ এমন ভাবে ঘাড়ের পেশির উপরে চেপে বসে যার ফলে কাঁধের হাড় গোলাকৃতি হয়ে যায়। শরীরের বৃদ্ধি পরিপূর্ণ হলে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy