আমার সন্তান ‘স্পেশাল চাইল্ড’, লোকে কী বলবে? আলোচনায় মনোবিদ অনুত্তমা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সন্তান সব সময়ই ‘স্পেশাল’। কিন্তু যে সন্তান কিছু ‘স্পেশাল’ চাহিদা নিয়ে জন্মাচ্ছে? হয়তো এমন কোনও সাইকো সোশ্যাল ডিস্যাবিলিটি যার দরুণ সেই খুদেটির আর পাঁচটা শিশুর মতো তার বিকাশের পথ তৈরি হবে না? অভিভাবক হিসাবে এই সত্যিটার মুখোমুখি হলে মনে আসে হাজার রকম প্রশ্ন। মনে জাগে উদ্বেগ। স্কুল ভর্তি নেবে তো? পড়াশোনাটা কী ভাবে হবে? আচ্ছা, ও কি কোনও দিনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে? আমরা যখন থাকব না তখন কী হবে? আর এই সব উদ্বেগের পাশাপাশি আরও একটা চিন্তা মাথায় আসে, আমি না হয় মেনে নেব, কিন্তু সমাজ কি মানবে ওকে? সম্মান দেবে? দেবে ওর যোগ্য অধিকার?
এই সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘স্পেশাল চাইল্ড’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। অনুত্তমা একা নন, এ দিনের আলোচলায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন অরুন্ধতী সরকার, যিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিখন পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করে চলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেখেশুনে বিয়ে। আমার সন্তানের মধ্যে যেই কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছে, তখনই আমায় প্রশ্ন করা হল আমার বাপের বাড়িতে আর কে আছে? আমার বাড়ির জন্যই বুঝি এমনটা হয়েছে, এমনই ধারণা হয়েছে সবার। সবার মনে প্রশ্ন এল, তা হলে কি দেখাশোনা ঠিক করে করা হল না? এ ক্ষেত্রে সব দায়ভার কি মাকেই বইতে হবে?’’
অরুন্ধতী বলেন, ‘‘‘স্পেশাল চাইল্ড’ থাকলে কম বেশি সব মায়েদেরই এই কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয়। বাবারা সমস্যাটি বুঝলেও সমাজের আর পাঁচ জন কটাক্ষ থেকে বাঁচার পথ তাঁদের কাছেও থাকে না। সন্তানের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাঁরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন, তার উপর দোসর হয় সমাজের চোখ রাঙানি। আবার এমনও শোনা যায় যে ‘স্পেশাল চাইল্ড’কে নিয়ে দাম্পত্যেও কলহ হয়। এই ছুতোয় অনেক ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদও হয়ে যায়।’’
তবে এই ক্ষেত্রে সমাধান কোথায়?
অরুন্ধতী বলেন ‘‘স্পেশাল চাইল্ডকে নিয়ে সংসার করতে হলে সবার আগে মাথায় রাখুন ওদের সামনে কিন্তু ঝগড়া করা চলবে না। নিজেদের মধ্যে যত অশান্তি হোক না কেন, সন্তানের সামনে আপনাকে ভান করে যেতে হবে যে আপনারা অনেক মিলেমিশে আছেন। নইলে কিন্তু সন্তানের উপর এর প্রভাব পড়বে। সমাজ সন্তানকে মেনে নিল কি না, তার আগে বাবা-মাকে বুঝতে হবে তাঁরা সত্যিটাকে মেনে নিতে পেরেছেন তো? মনকে শক্ত করতে পেরেছেন তো? কঠিন হলেও বাস্তবকে যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করতে শিখবেন, ততই সন্তানের সমস্যাগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তাকে বিকাশের পথে নিয়ে যেতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy