শেষ রক্ষা হল না। পথদুর্ঘটনায় মারা যান কম্যান্ডো সুমিত দাস।
মাওবাদী দমনের বহু অভিযানে যোগ দেওয়া এক কমান্ডো জওয়ানের মৃত্যু হল পথদুর্ঘটনায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও অনেকক্ষণ চিকিৎসকের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
রবিবার ভোরে পুরুলিয়া শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে একটি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরবাইক আরোহী সুমিত দাস (২৫) নামে কম্যান্ডো বাহিনির ওই জওয়ানের মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের নতুনপাড়া এলাকায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কাছেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চিকিৎসক না থাকায় তাঁর চিকিৎসা করা যায়নি বলে সহকর্মীদের অভিযোগ। পরে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে কিছু জওয়ান হাসপাতালের ওটির সামনের কয়েকটি আলো ও কাচ ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার তা মানতে নারাজ। এ দিন বিকেলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ লাইনে কমান্ডো বাহিনীর এই জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধ পাড়ায় একটি গোলমালের ঘটনায় পুলিশ লাইন থেকে কম্যান্ডো জওয়ানদের ডেকে পাঠানো হয়। তবে গোলমান না বাড়ায় তাঁদের পুরুলিয়া সদর থানায় রেখে দেওয়া হয়। রাত প্রায় তিনটে নাগাদ সুমিত থানার একটি মোটরবাইক নিয়ে সদর হাসপাতালে এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রঘুনাথপুরের দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ওই জওয়ানকে ধাক্কা মারে। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় সদর হাসপাতালে।
ওই জওয়ানের সহকমযরা জানান, সুমিতের নাক, মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে দোতলার ওটিতে পাঠানো হয়। তাঁদের অভিযোগ, দু’জন নার্স ওর নাক, মুখ, কান থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত তুলো দিয়ে পরিষ্কার করলেও ওটিতে একজন চিকিৎসকও ছিলেন না। প্রায় মিনিট চল্লিশ পরে এক চিকিৎসক এসে সুমিতকে ওটিতে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে তিনি জানান, সুমিতের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই ওটির সামনে আলো ও কাচ ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “চিকিৎসকেরা সময়মতো চলে এসেছিলেন। কিন্তু ওই জওয়ানের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। চিকিৎসা করার সময় পাওয়া যায়নি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।” তাঁর অভিযোগ, “ওটির সামনে আলো ও কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।” তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ সুপারের দাবি, “জওয়ানদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ ঠিক নয়।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাওবাদী মোকাবিলায় এই বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করা হয়। ২০১০ সালে মাওবাদী কাযর্কলাপ নিয়ন্ত্রণে তাঁদের পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা হয়। সুমিতরা যখন এই জেলায় আসে, তখন মাওবাদীরা একের পর এক নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সুমিতের সহকর্মীদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, রাতের অন্ধকারে এলআরপি-তে (লঙ রেঞ্জ পেট্রলিং) সামনের সারিতে থাকতেন সাহসী সুমিত। এ ছাড়া ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ঝালদার ডাকাই পাহাড়ে জামপাণির কাছে মাওবাদীদের খোঁজে তল্লাশি চালাকালীন যে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে এক কোবরা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল সেই তাল্লাশি অভিযানে এবং ২০১১-র সেপ্টেম্বরে বলরামপুরে বেড়সার অদূরে ডাহি জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গুলিযুদ্ধের ঘটনাতেও সুমিত ছিলেন।
রবিবার সেই জংলা ছাপ পোশাাকেই কফিনবন্দি অবস্থায় সহকর্মীকে চোখের জলে বিদায় জানান সহকর্মীরা। এ দিন তাঁরা ক্ষোভও চেপে রাখেন নি। তাঁদের অভিযোগ, মাওবাদী মোকাবিলায় তাঁদের জেলায় আনা হয়েছিল। কিন্তু এখন তাঁদের খুচরো গোলমাল, পুজো-পাবর্ণ বা নেতা মন্ত্রীর সভার ভিড় সামলাতেও কাজে নাগানো হচ্ছে। রবিবারও তেমনই কাজে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁদের। সেই কাজে বেরিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সুমিতের। জেলা পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে যেখানে প্রয়োজন পড়ে সেখানেই ওই জওয়ানদের কাজে লাগানো হয়।” যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশ ওই ট্রাক-চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy