Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অপচয় বন্ধে রক্তদাতাদের জন্য এ বার নির্দিষ্ট নম্বর

রক্তদাতাদের জন্য এ বার ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ চালু করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। কোনও কোনও মরসুমে রক্তের খরা, আবার কখনও রক্তদান ক্যাম্পের শেষ থাকে না।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

রক্তদাতাদের জন্য এ বার ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ চালু করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। কোনও কোনও মরসুমে রক্তের খরা, আবার কখনও রক্তদান ক্যাম্পের শেষ থাকে না। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রক্ত জমা হয় বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে। শেষ পর্যন্ত তা নষ্টও হয়। ফলে রক্তদান আন্দোলন ধাক্কা খায় বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তাদের। সে কারণেই রক্তদাতাদের ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানান, গরমে, ভোটের সময়ে বা পুজোর মরসুমে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন ওই তালিকা থেকে নম্বর নিয়ে ফোন করে দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে গাড়ি পাঠিয়ে তাঁদের আনার ব্যবস্থাও করা হবে।

প্রথম ধাপে কলকাতায় এই ব্যবস্থা চালু হবে। পরবর্তী স্তরে জেলাতেও এই ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রক্তদাতাদের নামের তালিকা থাকবে কম্পিউটারে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ভবনে বসে সেই তালিকা দেখতেও পাবেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা।

তাঁদের দাবি, নয়া এই ব্যবস্থায় ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে ঘুঘুর বাসা অনেকটাই ভাঙা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “লাইসেন্স নবীকরণ না করা থেকে শুরু করে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির কাছে বেআইনি ভাবে রক্ত বিক্রি— সবই প্রায় অবাধে চলছে। ব্যাঙ্কে রক্ত থাকা সত্ত্বেও বহু রোগীর পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সেই তথ্যও নিয়মিত আমাদের কাছে আসছে। জেলা এবং শহরতলির ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি কলকাতার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কও দুর্নীতির আখড়া। রক্তদাতার ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ চালু হলে ‘রক্ত নেই’ অজুহাতে মানুষকে ভোগানোর অভ্যাসে অনেকটাই রাশ টানা যাবে।”

যেমন, ‘এ’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত চেয়ে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন তপতী সরকার। আর জি করে ভর্তি ছিলেন তাঁর রোগী। অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে তাঁকে জানানো হয় ওই গ্রুপের এক ইউনিট রক্তও নেই। তপতীদেবীর দাবি, বিফল হয়ে তিনি যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁরই সামনে দিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা ওই গ্রুপের কয়েক ইউনিট রক্ত নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ স্বীকার করেছেন, বহু সময়েই বেসরকারি হাসপাতালের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সাধারণ রোগীদের বিমুখ করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছ থেকে বহু ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ ‘কমিশন’ নেন বলেও অভিযোগ।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু ‘আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ নয়, ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ডও চালু করা হবে। কোথায় কোন গ্রুপের কত ইউনিট রক্ত রয়েছে, তা ওই বোর্ডে উল্লেখ করা থাকবে। ফলে রক্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা কমবে। যদি স্টক নেই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরে অন্যত্র রক্ত বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুরুতেই কলকাতার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন পাল জানিয়েছেন, রক্ত থাকা সত্ত্বেও তা না দিয়ে অন্যত্র বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাঁর বক্তব্য, “এমন কিছু ঘটে বলে প্রমাণ পাইনি। পেলে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। তবে, বহু ক্ষেত্রে একাধিক ইউনিট রক্ত নিতে চাইলে আমরা একসঙ্গে দিই না। এক বা দুই ইউনিট দিয়ে বলি, পরে লাগলে আবার নেবেন। রক্তের অপচয় ঠেকানোর জন্যই এটা করা হয়।”'

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE