পরপর নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটের তত্ত্ব। বিপর্যয়ের জেরে এ বার বাম ঐক্যের পথেই ফিরতে চলেছে সিপিএম। দলের আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের জন্য যে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে বৃহত্তর বাম জোট গড়ার কথাই। বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিকে সঙ্গে নিয়েই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ও জনস্বার্থ-বিরোধী অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইছে সিপিএম।
মায়াবতী বা মুলায়ম সিংহ যাদব, জয়ললিতা বা নীতীশ কুমারের মতো আঞ্চলিক শক্তির মায়া কাটিয়ে বাম ঐক্যের পথে অবশ্য এখন থেকেই হাঁটতে শুরু করে দিচ্ছেন প্রকাশ কারাটেরা। এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আজ, বৃহস্পতিবারই কলকাতায় আসছেন কারাট। তার
পরে আবার ১ নভেম্বর দিল্লির এ কে জি ভবনে সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-র সঙ্গে এসইউসি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো বাম দলগুলির বৈঠক ডাকা হয়েছে। কারাটদের এই নীতিতে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন বাম শরিক নেতারাও।
তবে শুধু বৃহত্তর বাম ঐক্যের এই লাইন ঘিরে সিপিএমের অন্দরে বিতর্ক এখনও মেটেনি। বিশাখাপত্তনমে আগামী এপ্রিলের পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন পর্যালোচনার যে দলিল পেশ করা হবে, তাতে দলের আনুষ্ঠানিক সিলমোহর এখনও বাকি। দিল্লিতে সোম ও মঙ্গলবার সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে ওই খসড়া রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এর পরে ২৬ থেকে ২৯ অক্টোবর ওই খসড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হবে অনুমোদনের জন্য। সচরাচর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চার দিনের হয় না। এ বার চুলচেরা বিতর্কের জন্যই ম্যারাথন বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। দলের মধ্যে বিতর্কের সমাধান হওয়ার আগেই সাধারণ সম্পাদক কেন এই সংশোধিত লাইন কার্যকর করতে নেমে পড়লেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের!
দলের মধ্যেই একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পরে বিহারে ১০টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে জোট বেঁধে বিজেপি-কে হারিয়ে দিয়েছেন নীতীশ-লালুপ্রসাদ। বাইরে থেকে তাঁদের সমর্থন করেছে কংগ্রেস। সিপিএম-সিপিআই সেখানে লিবারেশনের সঙ্গে বৃহত্তর বাম জোট গড়ে সাফল্য পায়নি। তা হলে এখন চোখ বুজে শুধু বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলা কি ভোট-দৃষ্টিকোণ থেকে আদৌ বাস্তবসম্মত? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বৃহত্তর বাম ঐক্য অবশ্যই দরকার। কিন্তু শুধু এই জায়গাতেই নিজেদের আটকে রাখলে সোজা কথায় ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাতে ঘুরপথে বিজেপি-রই লাভ!”
অন্য অংশ আবার বলছে, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র সঙ্গে সমদূরত্ব রাখার নামে এত দিন মায়াবতী, জয়ললিতা বা মুলায়মদের হাত ধরার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে সিপিএম। তাতে আখেরে তাদের কোনও লাভ হয়নি। বরং দুর্নীতিগ্রস্ত দলের সঙ্গে সমঝোতার দায় নিতে হয়েছে কাঁধে। তার চেয়ে বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে এগোলে দীর্ঘমেয়াদি ফায়দা হওয়ার সম্ভাবনা। কারাট নিজেও বুধবার ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে এই মর্মে আলোচনা করেছেন। দেবব্রতবাবুরও বক্তব্য, “বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথাই আমরা এত দিন ধরে বলে আসছিলাম। কখনও জয়া, কখনও মায়া, কখনও মুলায়মের সঙ্গে যেতে গিয়ে দেশে অন্যান্য অংশে আমরা মুছে গিয়েছি! পূর্ব ভারতেও এখন অস্তিত্ব বিপন্ন।” আঞ্চলিক দলগুলির কেউই দুর্নীতি বা সাম্প্রদায়িকতার শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বের অভিযোগ থেকে মুক্ত নয় বলে দেবব্রতবাবুদের যুক্তি। প্রসঙ্গত, এ দিনই দিল্লির করোলবাগে নেতাজি সুভাষ ফাউন্ডেশন এবং ফ ব-র নতুন কেন্দ্রীয় দফতরে জন্য জমি রেজিস্ট্রি করতে পেরেছেন দেবব্রতবাবুরা।
কারাটদের পথেই কাল, শুক্রবার কলকাতায় অন্যান্য বাম দলগুলিকে সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কনভেনশনের প্রস্তুতি আলোচনায় বসছেন বিমান বসু। আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গেই কথা হয়েছে। পরে বিমানবাবু বলেছেন, “তৃণমূল আর বিজেপি, দু’দলই এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করছে। বামপন্থী শক্তিকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy