Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
ময়দানে পাশে

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে নেই সিপিএম

প্রধান শত্রু বিজেপি হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে আর কোনও নির্বাচনী জোটের পথে যাবে না সিপিএম। আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে বার বার ফেল মারা ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ও আর নয়। তবে বাংলা লাইন মেনে নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে আন্দোলনের রাস্তাটা খোলা রাখা হচ্ছে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাটের পেশ করা রাজনৈতিক প্রস্তাবে। তাতে বলা হয়েছে, দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশে বাম বিকল্প গড়ে তোলাই হবে সিপিএমের লক্ষ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

প্রধান শত্রু বিজেপি হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে আর কোনও নির্বাচনী জোটের পথে যাবে না সিপিএম। আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে বার বার ফেল মারা ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ও আর নয়। তবে বাংলা লাইন মেনে নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে আন্দোলনের রাস্তাটা খোলা রাখা হচ্ছে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাটের পেশ করা রাজনৈতিক প্রস্তাবে। তাতে বলা হয়েছে, দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশে বাম বিকল্প গড়ে তোলাই হবে সিপিএমের লক্ষ্য।

পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, জাতীয় স্তরেও কংগ্রেসের সঙ্গে আর কোনও রকম নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে না সিপিএম। তবে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন হলে কংগ্রেস-সিপিএম এক মঞ্চে থাকতে পারে। জাতীয় স্তরেও সিপিএমের প্রধান নিশানা হবে নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসেরও বিরোধিতা করা হবে। সংসদের ভিতরে বা বাইরে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে’ অ-কংগ্রেসি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে যৌথ আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু সেখানেও কোনও রকম নির্বাচনী সমঝোতা হবে না।

এক কথায় সিপিএম আর ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’-এর রাস্তায় হাঁটবে না। একই ভাবে কেন্দ্রে বিজেপিকে ঠেকাতে ইউপিএ-সরকারকে সমর্থনেরও পুনরাবৃত্তি হবে না।

আগামী এপ্রিলে বিশাখাপত্তম পার্টি কংগ্রেসে সিপিএম নেতৃত্ব এই রাজনৈতিক কৌশলই নিতে চাইছে। আজ রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ করে প্রকাশ কারাট বলেন, “আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো। তার পর বৃহত্তর বাম ঐক্য তৈরি করে জোরদার আন্দোলনে যাওয়া।”

দলের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রস্তাবের এই ‘কট্টরপন্থী লাইন’ আসলে দলের নিচুতলার কর্মীদের দাবিদাওয়া ও ক্ষোভের প্রতিফলন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি পর্বের সম্মেলনেও এই বক্তব্যই উঠে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের একাংশ অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে ভবিষ্যতে গাঁটছড়ার সম্ভাবনা খোলা রাখতে আগ্রহী। তাঁদের যুক্তি, তৃণমূলের হামলা রুখতে কংগ্রেসকে পাশে প্রয়োজন। একই ভাবে সারদার মতো লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে আন্দোলনে কংগ্রেস থাকলে সেখানে সিপিএমের যাওয়ায় আপত্তি থাকার কথা নয়। আর একটি অংশ মনে করেন, কংগ্রেসের সঙ্গে ভবিষ্যতে আঁতাঁতের সম্ভাবনার কথা বলায় নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্যান্য রাজ্যের নেতারাও যুক্তি দিয়েছেন, ইউপিএ-সরকারকে সমর্থন করতে গিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একই ভাবে কখনও বিহারে লালুপ্রসাদ, কখনও উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম, কখনও অন্ধ্রে তেলুগু দেশমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই সব রাজ্যে দলের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে। রাজনৈতিক কৌশলের পর্যালোচনাতেও সে কথা স্বীকার করেছিল সিপিএম।

নতুন রণকৌশলে এই সব কিছুরই প্রতিফলন। কারাট আজ নিজেই পশ্চিমবঙ্গে বাম নেতাদের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে সায় দিয়েছেন। কারাট মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের উপর তৃণমূলের ‘ফ্যাসিবাদী হামলা’ চলছে। রাজ্যের গণতন্ত্র রক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে প্রচার দরকার। তার জন্য সকলের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। কিন্তু অন্য দিকে বিজেপি যে সিপিএম তথা বামেদের পায়ের তলার জমি কেড়ে নিচ্ছে, সেটাও চিন্তার কারণ। কারাট বলেন, “দলের ভিত কিছুটা ক্ষয় হয়েছে। বিজেপিরও জমি লাভ হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসে এটাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে। তৃণমূল ও বিজেপির নীতিতে কোনও ফারাক নেই। কিন্তু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি করতে চায়।”

প্রকাশ কারাট নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিশাখাপত্তনমের পার্টি কংগ্রেসেই তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বিদায় নেবেন। পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার, তার পর ২০০৯ সালে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গঠনের ডাক দেওয়ার মতো ভুল স্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু কোনও ভুলের দায় নিয়ে নয়, সাধারণ সম্পাদক পদের মেয়াদ তিন বারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেই তিনি বিদায় নিচ্ছেন বলে জানান কারাট। সাধারণ সম্পাদকের পদে এস রামচন্দ্রন পিল্লাই ও সীতারাম ইয়েচুরির নাম নিয়েই সব থেকে বেশি জল্পনা। কে হবেন তাঁর উত্তরসূরি? আজ এ কে গোপালন ভবনের সাংবাদিক সম্মেলনে কারাটের জবাব, “পার্টি কংগ্রেসে নতুন পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হবে। সেই কমিটিই তা ঠিক করবে।”

তিন বার সম্পাদক পদের ঊর্ধ্বসীমা অবশ্য বিমান বসুর ক্ষেত্রে খাটছে না। কারাট বলেন, তিন বার পূর্ণ মেয়াদ থাকলে তবে এই নিয়ম খাটবে। অনিল বিশ্বাসের মৃত্যুর পর বিমান বসু রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন। তার পরে দু’বার তিনি ওই পদে নির্বাচিত হন। ফলে বিমানের তৃতীয় বার সম্পাদক হতে নিয়মের কোনও বাধা অন্তত নেই। কিন্তু বিমানই ফের রাজ্য সম্পাদক হবেন, এমন কোনও মন্তব্যও করতে চাননি কারাট।

অন্য বিষয়গুলি:

coalition congress cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE