দলের গরিব ও সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ক’দিন আগেই ধস নামিয়ে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। এর পর আবার তাঁর প্রাক্তন গুরু অণ্ণা হজারে জমি অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামায় তলে তলে আতঙ্কিত কংগ্রেস। কংগ্রেসের আশঙ্কা, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর এই রাজনৈতিক অস্ত্রও না কেড়ে নেন অণ্ণা।
লোকসভা ভোটের পর থেকে এমনিতেই মাজা ভাঙা অবস্থা কংগ্রেসের। একে নেতৃত্ব দুর্বল, তার উপরে মোদী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিরোধিতায় পথে নামার অস্ত্র বিশেষ ছিল না। রাহুল ও তাঁর অনুগামীরা মনে করছিলেন, বর্তমান জমি বিলে যে ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করে সংশোধন এনেছে মোদী সরকার, আপাতত সেটাকেই হাতিয়ার করে মাঠে নামা যেতে পারে। ওই অর্ডিন্যান্স জারির পরের দিনই রাহুলের বাড়িতে বৈঠকে স্থির হয়েছিল, এর প্রতিবাদে বাজেট অধিবেশনের গোড়ায় কৃষকদের নিয়ে সংসদ ঘেরাও করবে কংগ্রেস। কিন্তু দিন স্থির করতে কংগ্রেস যখন গড়িমসি করছে, তার মাঝেই জমি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করে দিল্লিতে ধর্নার দিন ঘোষণা করে দিয়েছেন অণ্ণা। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’দিন ধরে চলবে ওই ধর্না। তাতে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-সহ এনডিএ- বহির্ভূত রাজনৈতিক দলগুলিও সমর্থন জানাতে শুরু করেছে।
ফলে বিপাকে পড়েছে কংগ্রেস। বিষয়টি এমন যে অণ্ণার আন্দোলনে সায় না দিয়ে কংগ্রেসের উপায় নেই। কিন্তু কৃষক আন্দোলনের মুখ যদি অণ্ণা হন, তা হলে কংগ্রেসের ভূমিকা কী রইল? সূত্রের খবর, অণ্ণা তাঁর ধর্নার দিন ঘোষণা করার পরে দিগ্বিজয় সিংহ রাহুলের কাছে একটি নোট পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে হরিয়ানার নেতা দীপেন্দ্র সিংহ হুডা রাহুলের সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অণ্ণার এই আন্দোলন বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের কোনও ছক হতে পারে। বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে জমি অর্ডিন্যান্স-বিরোধী আন্দোলন অণ্ণা নষ্ট করে দিতে চাইতে পারেন বলে মনে করছেন ওই কংগ্রেস নেতারা।
দিগ্বিজয়দের মতে, অণ্ণা আরএসএসেরই মদতপুষ্ট। তাই রাহুল তথা কংগ্রেসকে সমান্তরাল ভাবে জমি অর্ডিন্যান্স-বিরোধী পৃথক কর্মসূচি নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন দিগ্বিজয়-দীপেন্দ্ররা।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলের মধ্যে এই উদ্বেগের কথা জেনে সংসদের অধিবেশনের মাঝে দিল্লিতে পৃথক কৃষক সভা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন রাহুল। যুব কংগ্রেসকে কিষাণ সত্যাগ্রহ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পঞ্জাবে কৃষকদের নিয়ে একটি জনসভা করতে পারেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। জমি আইন সংশোধনের প্রতিবাদের পাশাপাশি ইউরিয়া তথা সার সঙ্কট নিয়ে কৃষকদের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলাই তাঁর উদ্দেশ্য। শুধু সংসদের বাইরে নয়, সংসদের মধ্যে বিশেষ করে রাজ্যসভায় জমি অর্ডিন্যান্স রুখে দেওয়ার জন্য রাহুলের নির্দেশে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন গুলাম নবি আজাদ ও আনন্দ শর্মা। যে কোনও ভাবে সংসদের বাজেট অধিবেশনে অর্ডিন্যান্সটি রুখে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য।
ঘটনা হল, মোদী সরকার জমি অর্ডিন্যান্স জারি করার পরেই রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল। জয়রাম দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসোল বা গ্রেটার নয়ডায় গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু মুশকিল হল তাতে ভিড় হচ্ছে না। সংসদ ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে সে জন্যই গড়িমসি চলছিল দলে। তবে রাহুলের নির্দেশ পাওয়ায় সেই তৎপরতা নতুন করে শুরু হয়েছে। হরিয়ানা, পঞ্জাবের কিছু কৃষককে এনে বাজেট অধিবেশন চলাকালীন দিল্লিতে এক দিনের জন্য হই চই ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভিড় ঠিকঠাক জোটাতে পারলে সভায় নেতৃত্ব দিতে পারেন রাহুল। এবং দিল্লি ভোটে ভরাডুবির পর সেটাই হয়ে উঠতে পারে প্রথম কোনও জনসভায় রাহুলের আত্মপ্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy