ভাগ্যের সন্ধানে মুম্বইয়ে পা রেখেছিল বছর বারোর কিশোর। শুনেছিল, মায়ানগরী উদ্যমীদের খালি হাতে ফেরায় না। কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল আমেরিকান এক্সপ্রেস বেকারিতে। আবদুল্লা রউফ শেখের জীবনটা বদলে গেল ২০০২-র ২৮ সেপ্টেম্বরের রাতের পরে।
আবদুল্লা তখন ২২। সলমন খানের গাড়ির চাকায় একটি পা হারান তিনি। ১৩ বছর পরে বুধবার সেই মামলায় সলমনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মুম্বইয়ের নগর দায়রা আদালত। কিন্তু এই ঘটনা সে ভাবে স্পর্শ করতে পারছে না আবদুল্লাকে। উদাস গলায় তিনি বলছেন, ‘‘সলমন শাস্তি পেয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আরও ভাল হতো, যদি আমরা ক্ষতিপূরণ পেতাম।’’
‘আমরা’ অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্তরা। সলমনের শাস্তি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যাঁদের মাথাব্যথা নেই। তাঁরা চান ক্ষতিপূরণ। যা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে তাঁদের অভাবের সংসার। যদিও মুম্বই নগর দায়রা আদালত জানিয়েছে, আর কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ওঁরা কেউই উচ্ছ্বসিত নন।
সে রাতের সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল নুরুল্লা মেহবুব শরিফের। তাঁর স্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনকার দিনে এই টাকায় কী হয়?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে একটা চাকরি পেলে সংসারটা বেঁচে যেত।’’
একই কথা বলছেন মহম্মদ কলিম পাঠান। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের আসরোগা গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে মুম্বই এসেছিলেন ২২ বছরের কলিম। দুর্ঘটনায় হাতে-পায়ে এবং পিঠে চোট পান তিনি। তার পর থেকে বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তাই কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে যান। এ দিন গ্রামের বাড়িতে বসে কলিম বলেন, ‘‘সলমনের কারাদণ্ড আমার কিছুই বদলাতে পারবে না। যদি ক্ষতিপূরণই না পেলাম, তা হলে সলমন শাস্তি পেলেন, না ছাড়া পেলেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’ দেড় লাখ টাকার একটা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। সবই তাঁর চিকিৎসায় খরচ হয়ে গিয়েছে।
২০০৭ সালে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন আবদুল্লাও। তিনি জানান, যে আইনজীবী তাঁকে ক্ষতিপূরণ পেতে সাহায্য করেছিলেন, তিনিই নিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩৬ বছরের আবদুল্লার কথায়, ‘‘এই ১৩ বছরে কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের পরিবার কী ভাবে যে চালাচ্ছি, তা শুধু আমিই জানি। সলমনের শাস্তিতে আমার পা-ও ঠিক হবে না, আমার পেটের ভাতও জোগাড় হবে না।’’
সেই রাতে আবদুল্লা, নুরুল্লা এবং কলিমের পাশে ফুটপাথে শুয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের গোন্ডার ছেলে মান্নু খান এবং মুসলিম শেখও। ঘড়ির কাঁটা তখন ২টো-৩টের মাঝামাঝি। পাঁচ জনই চাপা পড়েছিলেন। আবদুল্লার মনে পড়ে, ‘‘হঠাৎ একটা প্রচণ্ড আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম আমরা একটা গাড়ির নীচে। পাশাপাশি লোকজন চিৎকার করে বলছিল, সল্লু গাড়ি চাপা দিয়েছে।’’
পাঁচ জনকেই ভর্তি করা হয়েছিল ভাবা হাসপাতালে। সব চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন নুরুল্লা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন আবদুল্লা এবং মুসলিম। মান্নু এবং মুসলিম পরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। ছ’মাস পরে মুম্বইয়ে ফিরে বান্দ্রা স্টেশনের কাছে ফের একটি বেকারিতে কাজ নেন আবদুল্লা। কিন্তু টানা কাজ করতে পারেন না। ছুটি নিতে হয়।
তবু সলমনের উপর আলাদা করে বিদ্বেষ নেই আবদুল্লার। বলেন, ‘‘আজও সলমনের ছবি দেখি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy