Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

এবিভিপি-র অনুষ্ঠানে উপাচার্য দিলীপ, তোপ যুব কংগ্রেসের

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্য দুই বছর আগেও ছিলেন এবিভিপি-র উত্তর-পূর্ব সভাপতি। রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন সভাপতি পদে। প্রশ্ন উঠছে, নতুন উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথও কি গেরুয়া শিবিরের?

এবিভিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে দিলীপচন্দ্র নাথ। —নিজস্ব চিত্র।

এবিভিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে দিলীপচন্দ্র নাথ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্য দুই বছর আগেও ছিলেন এবিভিপি-র উত্তর-পূর্ব সভাপতি। রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন সভাপতি পদে। প্রশ্ন উঠছে, নতুন উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথও কি গেরুয়া শিবিরের? এবিভিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিজের হাতে তাদের পতাকা উত্তোলন করে এবং পরে গাঁধীবাগের সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিতর্ক উসকে দিলেন দিলীপবাবু। যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একে ‘নির্লজ্জ কাজ’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর কাছে স্পষ্টীকরণও দাবি করেন তাঁরা। উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না।

গত ৯ জুলাই ৬৮-তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এবিভিপি বিদ্যার্থী দিবস পালন করে। সে দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিবশংকর মজুমদার, পার্থপ্রতীম পাল ও সুমানস দত্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। পরিষদের কর্মকর্তা অমিতেশ চক্রবর্তী দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরেন।

১১ জুলাই গাঁধীভবনে এ উপলক্ষে বড়সড় অনুষ্ঠান হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কৃতীদেরও এ দিন সংবর্ধনা দেয় এবিভিপি। সঙ্গে বিদ্যার্থী দিবসকে সামনে রেখে যে প্রবন্ধ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, তার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। দিলীপবাবুই ছিলেন প্রধান অতিথি। শিলচর এনআইটির ডিরেক্টর এনভি দেশপান্ডে বিশেষ অতিথি। উপাচার্য দিলীপবাবু সে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘নিজের পছন্দ ও মেধা অনুযায়ী বিভাগ-বিষয় বাছাই করা প্রয়োজন। নম্বর পেলো বলেই সবাইকে বিজ্ঞান বিভাগে ঠেলে দেওয়ার যুক্তি নেই।’’ বিদ্যার্থী পরিষদের উত্তর-পূর্ব সাংগঠনিক সম্পাদক অপাংশুশেখর শীল ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান। সংগঠনের শিলচর ইউনিটের সভাপতি রতনকুমার দাস এবং সম্পাদিকা কাবেরী নাগও মঞ্চে ছিলেন। গাঁধীবাগের সভায় উপাচার্যের উপস্থিতি বা এনআইটি ডিরেক্টরের বক্তৃতা নিয়ে যুব কংগ্রেসের অবশ্য কোনও মন্তব্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপাচার্য নিজের হাতে এবিভিপি-র পতাকা তোলায় তাঁদের কাছে তা ন্যাক্কারজনক বলে মনে হয়েছে। প্রদেশ যুব কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক রাহুল আলম লস্কর প্রশ্ন তোলেন, একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোনও ছাত্র সংগঠনের পতাকা কী করে একজন উপাচার্য তুলতে পারেন? তিনি উপাচার্যের কাছে স্পষ্টীকরণ চান, তিনি (দিলীপবাবু) কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরুয়াকরণ চান, না কি গদি রক্ষার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ‘তৈলমর্দন’ করছেন? সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাহুলবাবু জানিয়ে রাখেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে দিলীপবাবুর পদত্যাগের দাবিতে এনএসইউআই-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে গেরুয়াবাহিনী শিলচরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ জানিয়ে দেন, ‘‘যে কেউ ডাকলে আমি যাব। আমার শুধু একটাই বিচার্য, যাঁদের ডাকে যাচ্ছি, তাঁরা দেশভক্ত কিনা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এবিভিপি-র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য যাঁরা আমন্ত্রণ করতে গিয়েছিল, সবাই আমার ছাত্র। তাঁরা ডাকলে না গিয়ে থাকি কী করে!’’ যুব কংগ্রেসিদের উদ্দেশ্যে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আপনারা ডাকুন, আপনাদের অনুষ্ঠানেও যাব।’’

এবিভিপি-র সাংগঠনিক সম্পাদক অপাংশুশেখর শীল এই ইস্যুতে বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রবাদী সংগঠন করি। ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রসারে কাজ করি। শৈক্ষিক পরিবার মেনে চলি। শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে আমাদের এই সংগঠন। ফলে শিক্ষকরা এতে জড়াবেন, এটা স্বাভাবিক।’ উপাচার্যও যে একজন শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ, সে কথা উল্লেখ করে অপাংশুবাবু বলেন. এবিভিপির আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বা পতাকা তুলে তিনি কোনও ভুল করেননি। পতাকা উত্তোলন করে উপাচার্য ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রসারের কথাই বলেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE