Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
সুপ্রিম কোর্ট

দীর্ঘদিন বিচারাধীন বন্দিদের মুক্তির নির্দেশ

অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ যে শাস্তি, তার অর্ধেক ভোগ করা হয়ে গিয়েছে। অথচ, বিচার শেষ হচ্ছে না। ঘুচছে না জেলের বন্দিদশাও। দেশের বিভিন্ন জেলে এমন বন্দির সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। এই বন্দিদেরই আজ মুক্তির নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, কোনও বিচারাধীন বন্দি যদি তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির অর্ধেকের বেশি কারাবাস ভোগ করে ফেলেন, তবে তাঁকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট আদালতকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ যে শাস্তি, তার অর্ধেক ভোগ করা হয়ে গিয়েছে। অথচ, বিচার শেষ হচ্ছে না। ঘুচছে না জেলের বন্দিদশাও। দেশের বিভিন্ন জেলে এমন বন্দির সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। এই বন্দিদেরই আজ মুক্তির নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, কোনও বিচারাধীন বন্দি যদি তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির অর্ধেকের বেশি কারাবাস ভোগ করে ফেলেন, তবে তাঁকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট আদালতকে।

বিচারাধীন বন্দিদের কারাগারের অন্তরালে বছরের পর বছর নির্বিচারে কাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও কয়েক বার এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। এমনকী, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩৬এ ধারা অনুযায়ী, এমন বিচারাধীন বন্দিদের জামিনে মুক্তি পাওয়ারই কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না বলেই অভিযোগ। আজ তাই শুধু নির্দেশ দিয়ে নয়, কী ভাবে এবং কত দিনের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢা, বিচারপতি কুরিয়েন জোশেফ ও রোহিনটন এফ নরিমানকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালত ১ অক্টোবর থেকে দু’মাসের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছে নিম্ন আদালতগুলিকে। ওই সব আদালতের বিচারকদের ১ অক্টোবর থেকে জেল পরিদর্শনে গিয়ে এমন বিচারাধীন বন্দিদের তালিকা করতে হবে। তার পরে তাঁদের জামিনের ব্যবস্থাও করবেন ওই বিচারকেরাই।

যে ভাবে বিচারাধীন বন্দিরা কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই জেলে রয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “ওই বন্দিদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট, দায়রা বিচারক কিংবা মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে। সর্বোচ্চ শাস্তির অর্ধেক জেল খেটে ফেলেছেন, এমন বিচারাধীন বন্দিদের জেলে গিয়ে তাঁরা খুঁজে বার করবেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩৬এ ধারায় সব আইনানুগ পদ্ধতি মেনে জেলগুলোকে ওই বন্দিদের মুক্তির নির্দেশ দিতে হবে বিচারবিভাগীয় অফিসারদেরই।”

দেশের প্রায় চার লক্ষ বন্দির মধ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ বন্দিই বিচারাধীন। অর্থাৎ, যা ৬০ শতাংশেরও বেশি। এই পরিসংখ্যান স্মরণ করিয়ে দিয়ে আক্ষেপের সুরে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ফাইলের উপর ফাইল জমে থাকে, কখনও বা হারিয়ে যায় তথ্যপ্রমাণও, কিন্তু শুনানি চলতে থাকে অনন্তকাল ধরে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরিব মানুষ জামিনের টাকা দিতে পারেন না বলে মুক্তি পান না। স্বভাবতই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে এ বার এমন হাজার হাজার গরিব বন্দি মুক্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিস্তারিত প্রতিলিপি হাতে পাননি বলে এ নিয়ে এ রাজ্যের কোনও কারা-কর্তাই মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু কারা দফতর সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে কমবেশি সবাই-ই খুশি। এক কারা-কর্তার কথায়, “বিচারাধীন বন্দিদের মুক্তি দিতে আমরাও চাই। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই আমাদের হাতে নয়, বিচারবিভাগের বিষয়।” ওই কর্তা জানান, এ রাজ্যে আগে থেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। জেলবন্দিদের সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করতে জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্ব প্রতিটি জেলায় পাঁচ সদস্যের পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে। তাদের কাজই হল, জেলার সংশোধনাগারগুলি নিয়মিত পরিদর্শন করে বিচারাধীন বন্দিদের সম্পর্কে রিপোর্ট সংগ্রহ করে প্রয়োজনে তাঁদের মুক্তির সুপারিশ করা। সেই সুপারিশ যাচাই করার কথা রাজ্য স্তরে গঠিত বন্দি মুক্তি কমিটির। সরকার ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বন্দি মুক্তির ব্যাপারে নির্দেশ জারি করে। রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, “এদের কেউই নিজেদের কাজ ঠিকমতো করে না। এ বার সুপ্রিম কোর্ট দায়রা বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদেরই বিচারাধীন বন্দিদের খুঁজে বার করতে নির্দেশ দিল। আশা করা যায়, এ বার ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।”

তবে সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যাবজ্জীবন বা ফাঁসির আসামিদের ক্ষেত্রে কী হবে? রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমাদের কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত শীর্ষ আদালতের রায়ের বিস্তারিত প্রতিলিপি হাতে আসেনি। সেটা না দেখে এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।” একই কথা শোনা গেল রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফির মুখেও “সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছে, তা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে রাজ্যে ৭০ শতাংশ বন্দিই তো বিচারাধীন। তাঁদের মুক্তির বিষয়টিও আমাদের হাতে নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যদি এ ব্যাপারে বিচার বিভাগ পদক্ষেপ করে, তা হলে তো ভালই হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE