Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
National news

ইংরেজি বলতে পারতেন না, তিনিই আজ আইএএস অফিসার, প্রত্যন্ত গ্রামের এক মেয়ের অবিশ্বাস্য যাত্রা

যে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ আইএএস অফিসার হয়েছেন সুরভি, তা শুধু আমদারা নয়, দেশের প্রত্যেক পডুয়ার কাছে অনুপ্রেরণা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ১০:৩৯
Share: Save:
০১ ১৬
মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম আমদারায় জন্ম সুরভি গৌতমের। একান্নবর্তী পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। গ্রামেরই ছোট একটা হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করা মেয়েই আজ আইএএস অফিসার। যে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ আইএএস অফিসার হয়েছেন সুরভি, তা শুধু আমদারা নয়, দেশের প্রত্যেক পডুয়ার কাছে অনুপ্রেরণা।

মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম আমদারায় জন্ম সুরভি গৌতমের। একান্নবর্তী পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। গ্রামেরই ছোট একটা হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করা মেয়েই আজ আইএএস অফিসার। যে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ আইএএস অফিসার হয়েছেন সুরভি, তা শুধু আমদারা নয়, দেশের প্রত্যেক পডুয়ার কাছে অনুপ্রেরণা।

০২ ১৬
আমদারার একটি ছোট হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়তেন সুরভি। ছোট থেকেই তাঁর এমন কোনও কাজ করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে প্রচুর সম্মান পাওয়া যায়। আর ভাল কিছু করতে গেলে তো ভাল পড়াশোনা করতে হবে। তাই ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব মন ছিল তাঁর।

আমদারার একটি ছোট হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়তেন সুরভি। ছোট থেকেই তাঁর এমন কোনও কাজ করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে প্রচুর সম্মান পাওয়া যায়। আর ভাল কিছু করতে গেলে তো ভাল পড়াশোনা করতে হবে। তাই ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব মন ছিল তাঁর।

০৩ ১৬
সুরভি যখন দশম শ্রেণিতে পড়েন, তখন থেকেই তাঁর আইএএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা জন্মায়। দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় অঙ্ক এবং বিজ্ঞানে ১০০ শতাংশ নম্বর পান তিনি। বোর্ডের তালিকায় রাজ্যে ভাল র‌্যাঙ্ক করেন।

সুরভি যখন দশম শ্রেণিতে পড়েন, তখন থেকেই তাঁর আইএএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা জন্মায়। দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় অঙ্ক এবং বিজ্ঞানে ১০০ শতাংশ নম্বর পান তিনি। বোর্ডের তালিকায় রাজ্যে ভাল র‌্যাঙ্ক করেন।

০৪ ১৬
সুরভি জানিয়েছেন, দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট তাঁকে যেন তাঁর গ্রামে সেলিব্রিটি করে তুলেছিল। গ্রামের অনেক কিছু তিনি বদলাতে চাইতেন। গ্রামে একটা ভাল ওষুধের দোকান হোক, প্রতিটা বাড়িতে বিদ্যুত্ পৌঁছে যাক, এমন বেশ কিছু প্রাথমিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে গ্রামে আনতে চেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, এটা তখনই সম্ভব যদি তিনি কালেক্টর হন।

সুরভি জানিয়েছেন, দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট তাঁকে যেন তাঁর গ্রামে সেলিব্রিটি করে তুলেছিল। গ্রামের অনেক কিছু তিনি বদলাতে চাইতেন। গ্রামে একটা ভাল ওষুধের দোকান হোক, প্রতিটা বাড়িতে বিদ্যুত্ পৌঁছে যাক, এমন বেশ কিছু প্রাথমিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে গ্রামে আনতে চেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, এটা তখনই সম্ভব যদি তিনি কালেক্টর হন।

০৫ ১৬
এমন অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভোপালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান সুরভী। তিনিই আমদারার প্রথম মহিলা, যিনি গ্রামের বাইরে পড়তে গিয়েছিলেন। গ্রামের অন্যান্য মেয়ের ভবিষ্যত্ সুরভির উপরই নির্ভর করছিল। সুরভি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে, চিরকাল মেয়েরা ওই গ্রামেই বন্দি হয়ে থাকতেন।

এমন অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভোপালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান সুরভী। তিনিই আমদারার প্রথম মহিলা, যিনি গ্রামের বাইরে পড়তে গিয়েছিলেন। গ্রামের অন্যান্য মেয়ের ভবিষ্যত্ সুরভির উপরই নির্ভর করছিল। সুরভি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে, চিরকাল মেয়েরা ওই গ্রামেই বন্দি হয়ে থাকতেন।

০৬ ১৬
সুরভি জানতেন, তাঁকে ভাল পড়াশোনা করতেই হবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে কলেজের প্রথম দিনেই ভেঙে পডেছিলেন। কলেজের সকলেই ইংরাজিতে কথা বলছিলেন। সুরভি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলের মেয়ে। পড়াশোনায় ভাল হলেও অনর্গল ইংরাজি বলতে তিনি পারতেন না।

সুরভি জানতেন, তাঁকে ভাল পড়াশোনা করতেই হবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে কলেজের প্রথম দিনেই ভেঙে পডেছিলেন। কলেজের সকলেই ইংরাজিতে কথা বলছিলেন। সুরভি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলের মেয়ে। পড়াশোনায় ভাল হলেও অনর্গল ইংরাজি বলতে তিনি পারতেন না।

০৭ ১৬
কলেজে প্রথম দিনে তাঁকে নিজের পরিচয় দিতে বলেন শিক্ষিকা। সঙ্গে পদার্থবিদ্যার একটি প্রশ্নের উত্তরও জিজ্ঞাসা করেন। প্রশ্নটা কঠিন ছিল না, কিন্তু ইংরাজিতে কোনওটাই বলতে পারেননি সুরভি। ক্লাসে যেন বোকার মতো দাঁড়িয়েছিলেন।

কলেজে প্রথম দিনে তাঁকে নিজের পরিচয় দিতে বলেন শিক্ষিকা। সঙ্গে পদার্থবিদ্যার একটি প্রশ্নের উত্তরও জিজ্ঞাসা করেন। প্রশ্নটা কঠিন ছিল না, কিন্তু ইংরাজিতে কোনওটাই বলতে পারেননি সুরভি। ক্লাসে যেন বোকার মতো দাঁড়িয়েছিলেন।

০৮ ১৬
অত্যন্ত অপমানিত হয়েছিলেন, নিজের ঘরে ফিরে এসে অঝোরে কেঁদেছিলেন সে দিন। স্থির করে নিয়েছিলেন, ব্যাগ গুছিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। কিন্তু ফোনে বিষয়টা শোনার পর মা তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সুরভি যদি ফিরে আসেন, তা হলে গ্রামের মেয়ে অন্যান্য মেয়েদের জন্যও দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

অত্যন্ত অপমানিত হয়েছিলেন, নিজের ঘরে ফিরে এসে অঝোরে কেঁদেছিলেন সে দিন। স্থির করে নিয়েছিলেন, ব্যাগ গুছিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। কিন্তু ফোনে বিষয়টা শোনার পর মা তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সুরভি যদি ফিরে আসেন, তা হলে গ্রামের মেয়ে অন্যান্য মেয়েদের জন্যও দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

০৯ ১৬
সেই দিন থেকে আর কাঁদেননি সুরভী। বরং এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেন। আলাদা করে ইংরাজিতে কথা বলতে শিখে নেন। শুধু তাঁর কলেজেই নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হন তিনি। চ্যান্সেলর স্কলারশিপও পান।

সেই দিন থেকে আর কাঁদেননি সুরভী। বরং এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেন। আলাদা করে ইংরাজিতে কথা বলতে শিখে নেন। শুধু তাঁর কলেজেই নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হন তিনি। চ্যান্সেলর স্কলারশিপও পান।

১০ ১৬
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। সুরভীর বয়স ছ’মাস কম। তাই সিভিল সার্ভিসে বসতে পারেননি। তবে থেমে থাকেননি। অন্যান্য পরীক্ষায় বসেন। গেট, ইসরো, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, মধ্যপ্রদেশ স্টেট পাবলিক কমিশন, এই সমস্ত পরীক্ষা প্রথম বারেই উত্তীর্ণ হয়ে যান তিনি।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। সুরভীর বয়স ছ’মাস কম। তাই সিভিল সার্ভিসে বসতে পারেননি। তবে থেমে থাকেননি। অন্যান্য পরীক্ষায় বসেন। গেট, ইসরো, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, মধ্যপ্রদেশ স্টেট পাবলিক কমিশন, এই সমস্ত পরীক্ষা প্রথম বারেই উত্তীর্ণ হয়ে যান তিনি।

১১ ১৬
ছ’মাস পর ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষাও পাশ করে ফেলেন। এই পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম হন তিনি। কিন্তু তবু যেন সুরভির মনে হতে থাকল কিছু একটা কম রয়েছে তাঁর জীবনে। সুরভির মা-ই একদিন তাঁকে মনে করিয়ে দেন তাঁর ছোটবেলার সেই ইচ্ছার কথা।

ছ’মাস পর ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষাও পাশ করে ফেলেন। এই পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম হন তিনি। কিন্তু তবু যেন সুরভির মনে হতে থাকল কিছু একটা কম রয়েছে তাঁর জীবনে। সুরভির মা-ই একদিন তাঁকে মনে করিয়ে দেন তাঁর ছোটবেলার সেই ইচ্ছার কথা।

১২ ১৬
সুরভি তখন রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সারাদিন কাজের পর বাড়ি ফিরে আইএএস-র পড়াশোনা করতেন। অবসর সময়ের প্রতিটা মিনিট কাজে লাগাতেন তিনি। এক সময়ে মনে হয়েছিল এ ভাবে সম্ভব নয়।

সুরভি তখন রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সারাদিন কাজের পর বাড়ি ফিরে আইএএস-র পড়াশোনা করতেন। অবসর সময়ের প্রতিটা মিনিট কাজে লাগাতেন তিনি। এক সময়ে মনে হয়েছিল এ ভাবে সম্ভব নয়।

১৩ ১৬
তাঁর মা তখন নিজের জীবনের গল্প শুনিয়েছিলেন। সুরভির মা ২৩ বছর বয়সে তিন সন্তানের মা হয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ছিল তখন ১০ মাস। সেই অবস্থায় বাড়ির কাজ, সংসারের কাজ, সন্তানদের জন্য সব করে ১০ কিলোমিটার দূরে কাজে যেতেন তিনি। সুরভির জীবনে সে সব দায়িত্ব নেই, তা হলে তাঁর পক্ষে কেন সম্ভব নয়!

তাঁর মা তখন নিজের জীবনের গল্প শুনিয়েছিলেন। সুরভির মা ২৩ বছর বয়সে তিন সন্তানের মা হয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ছিল তখন ১০ মাস। সেই অবস্থায় বাড়ির কাজ, সংসারের কাজ, সন্তানদের জন্য সব করে ১০ কিলোমিটার দূরে কাজে যেতেন তিনি। সুরভির জীবনে সে সব দায়িত্ব নেই, তা হলে তাঁর পক্ষে কেন সম্ভব নয়!

১৪ ১৬
সে দিনটাই সুরভির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিল। তাঁর আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সারা দেশে ৫০ র‌্যাঙ্ক করেছিলেন তিনি।

সে দিনটাই সুরভির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিল। তাঁর আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সারা দেশে ৫০ র‌্যাঙ্ক করেছিলেন তিনি।

১৫ ১৬
গুজরাতে কাজে যোগ দেন সুরভি। শুধুমাত্র আইএএস অফিসার হলেই যে সম্মান পাওয়া যায় না, তা উপলব্ধি করেন তিনি।

গুজরাতে কাজে যোগ দেন সুরভি। শুধুমাত্র আইএএস অফিসার হলেই যে সম্মান পাওয়া যায় না, তা উপলব্ধি করেন তিনি।

১৬ ১৬
মানুষের জন্য মন দিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন সুরভি। বর্তমানে বডোদরার সহকারী কালেক্টর সুরভি। প্রতিদিন তিনি এই কাজ থেকে অনেক কিছু শিখছেন। তাঁর ইচ্ছা কালেক্টর হয়েই গ্রামে ফেরা।

মানুষের জন্য মন দিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন সুরভি। বর্তমানে বডোদরার সহকারী কালেক্টর সুরভি। প্রতিদিন তিনি এই কাজ থেকে অনেক কিছু শিখছেন। তাঁর ইচ্ছা কালেক্টর হয়েই গ্রামে ফেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy