US President Donald Trump’s close advisor proposed to remove Canada from Five Eyes intelligence group dgtl
Canada in Five Eyes Intelligence Group
‘পাঁচ চোখ’-এর উঁকিঝুঁকি আর নয়! কানাডাকে অন্ধ করতে মোসায়েবের উস্কানি পেলেন ট্রাম্প
কানাডাকে ‘পঞ্চনেত্র’ গোয়েন্দা গোষ্ঠী থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানভারী করেছেন তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা। প্রতিবেশী দেশটিকে কব্জা করার নয়া ছক?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
কখনও চড়া শুল্ক নীতিতে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। কখনও আবার স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার ভয়। ‘বন্ধু’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক চাবুকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কানাডা। এই আবহে ‘পঞ্চনেত্র’ থেকেও নাকি প্রতিবেশী দেশটিকে ‘তাড়িয়ে’ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্কে ঘুম উড়েছে অটোয়ার।
০২২১
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কানাডাকে ‘পঞ্চনেত্র’ থেকে বাদ দেওয়ার ছক কষা শুরু করেছে ওয়াশিংটন। এই বিষয়টি নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানে তুলেছেন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা পিটার নাভারো। তবে এই নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।
০৩২১
কানাডার উপর চাপ তৈরি করতে এ-হেন প্রস্তাব দিয়েছেন পিটার নাভারো। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে তাঁর ঘন ঘন যাতায়াত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে একটি শব্দও খরচ করেনি ওয়াশিংটন। প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলেননি নাভারোও।
০৪২১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪১ সালের ১৪ অগস্ট জাপান, জার্মানি বা ইটালির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় পাঁচটি দেশ। এরই নাম ‘পঞ্চনেত্র’ বা ফাইভ আইজ়। আমেরিকা এবং কানাডা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ড।
০৫২১
এ হেন গোয়েন্দা তথ্য লেনদেনে ‘পঞ্চনেত্র’ থেকে হঠাৎ কানাডার বিতাড়নের সওয়াল জোরদার হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর একাধিক সাবেক আধিকারিক। তাঁদের যুক্তি, এর ফলে শত্রু দেশগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ বেশ কঠিন হবে। অন্য অংশীদারদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।
০৬২১
প্রাক্তন সিআইএ কর্তা ডেনিস ওয়াইল্ডার ‘পঞ্চনেত্র’ জোটকে ব্যাহত করার পরিণতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এতে রাশিয়া, চিন, ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলি যে উল্লসিত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্য দিকে বিপদ বাড়বে আমেরিকার। কারণ, সুনির্দিষ্ট একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলে গুপ্তচরবৃত্তি। এই সিদ্ধান্তে সেই কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।’’
০৭২১
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে ওয়াশিংটনের প্রেসিডেন্টের ‘শ্বেত প্রাসাদ’-এর (পড়ুন হোয়াইট হাউস) প্রাক্তন কূটনীতিবিদ স্টিভ ব্যাননের গলায়। তিনি বলেছেন, ‘‘কানাডার পঞ্চনেত্র থেকে অপসারণের ফল হবে হিতে বিপরীত। কারণ সামরিক ইতিহাসে প্রতিবেশী দেশটিকে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাষ্ট্র বলে মনে করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার জন্য বহু যুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে অটোয়া।’’
০৮২১
গত বছরের নভেম্বরের ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। তার পরই কানাডাকে আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, স্বাধীন দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার খোলাখুলি প্রস্তাবও দেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।
০৯২১
এ ব্যাপারে নিজের সমাজমাধ্যম সংস্থা ‘ট্রুথ সোশ্যাল’কে ব্যবহার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে কানাডা নিয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। তার পরই দুনিয়া জুড়ে হইচই পড়ে যায়। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতির প্রবল সমালোচনা করে অটোয়া।
১০২১
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে না হতেই এই বিষয়টি সামনে আসায় প্রবল চাপে পড়েন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ডিসেম্বরেই নব নির্বাচিত রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে ট্রুডোকে গভর্নর বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন গলাতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ হয়ে অটোয়ায় ফেরেন ট্রুডো।
১১২১
দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করে দেন ট্রুডো। চলতি বছরের ৯ মার্চ তিনি পদ ছাড়বেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি নিজের দল লিবারেল পার্টি থেকেও সরে দাঁড়ানোর কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। পাশাপাশি, প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্খার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
১২২১
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংবাদমাধ্যমকে ট্রুডো বলেন, ‘‘এটা মনে হয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেটা বলছেন, সেটা নিছকই কল্প কথা। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প। কানাডার যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্তির হুমকিও ঘোর বাস্তব।’’
১৩২১
এ বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ট্রাম্প। তার পরই কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। পরিস্থিতি সামলাতে মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে অটোয়া। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শুরু হয়ে যায় শুল্ক যুদ্ধ।
১৪২১
ফেব্রুয়ারিতেই অবশ্য এই সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে আসেন ট্রাম্প। ফলে ৪ মার্চ পর্যন্ত উচ্চ হারে মার্কিন শুল্কের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে অটোয়া। অন্য দিকে এর মধ্যেই আবার পারস্পরিক শুল্ক নীতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। অর্থাৎ কোনও দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যতটা শুল্ক চাপাবে, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের থেকে আমেরিকাও নেবে ঠিক ততটাই শুল্ক। এই নীতির চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে ট্রাম্প প্রশাসন কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
১৫২১
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত পারস্পরিক শুল্ক নীতি চালু করলে কানাডার অস্তিত্ব রক্ষা করা রীতিমতো কঠিন হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকার দেশটি পুরোপুরি ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীল। তবে অটোয়াকে এখনই ‘পঞ্চনেত্র’ থেকে সরানো ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই স্পষ্ট করেছেন বিশ্লেষকেরা।
১৬২১
বিশেষজ্ঞদের কথায়, বিশেষ একটি চুক্তির মাধ্যমে ‘পঞ্চনেত্র’ সমঝোতায় এসেছে পাঁচটি দেশ। হঠাৎ সেখান থেকে কানাডাকে তাড়িয়ে দিলে ওয়াশিংটনের উপর বাড়বে আন্তর্জাতিক চাপ। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপটিকে কব্জা করতে চাইছেন ট্রাম্প। আর সে ব্যাপারে প্রবল আপত্তি রয়েছে ফ্রান্স এবং জার্মানির মতো শক্তিশালী দেশের।
১৭২১
গত বছরের ১ অক্টোবর ইজ়রায়েলের উপর ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া মুলুক ইরান। ওই ঘটনার চরম প্রতিশোধ নিতে বড় আকারের প্রত্যাঘাত শানানোর পরিকল্পনা করে ইহুদি ফৌজ। দ্রুত তার প্রস্তুতিও সেরে ফেলে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ।
১৮২১
আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়ে ন্যাশনাল জিয়োস্প্যাকিয়াল-ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (এনজিএ) মহাফেজখানা থেকে ফাঁস হয় অতি গোপনীয় দু’টি গোয়েন্দা নথি। সেখানেই ছিল ইরানের উপর ইজ়রায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণের সামরিক প্রস্তুতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। এই ঘটনার ‘পঞ্চনেত্র’ চুক্তিভুক্ত দেশগুলির গুপ্তচরদের দিকে ওঠে অভিযোগের আঙুল।
১৯২১
উল্লেখ্য, আমেরিকার গুপ্তচর উপগ্রহের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণের কাজ করে এনজিএ। সূত্রের খবর, তার উপর ভিত্তি করেই ইহুদি ফৌজের সামরিক প্রস্তুতি ও মহড়া সংক্রান্ত গোপন রিপোর্ট তৈরি করেছিল এই সংস্থা। সেই রকম দু’টি নথি ফাঁস হয়েছে বলে জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস। পরে সেগুলি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় ইরান।
২০২১
নথি ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এই নিয়ে তদন্তে নামেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। ফাঁস হওয়া নথির সত্যতা একটি সূত্র মারফত নিশ্চিত করেন তাঁরা। টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘মিডল ইস্ট স্পেক্টেটর’-এ ‘টপ সিক্রেট’ শিরোনাম দিয়ে সেগুলিকে প্রথমে জনসমক্ষে আনা হয়েছিল। এই নথি দেখার একমাত্র অধিকারী ছিল ‘পঞ্চনেত্র’ (ফাইভ আইজ়)।
২১২১
আইডিএফের হামলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত নথি এ ভাবে প্রকাশ্যে চলে আসায় বিপাকে পড়ে ইজ়রায়েল। ফলে আক্রমণের পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছিল ইহুদি ফৌজকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তবে ওই ঘটনায় সরাসরি কানাডার গুপ্তচরদের কোনও ভূমিকা ছিল কি না, তা জানা যায়নি।