ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি, পারস্পরিক শুল্কনীতি চালু করার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। অর্থাৎ যে দেশ মার্কিন পণ্যে যতটা শুল্ক নিয়ে থাকে, এ বার থেকে ওয়াশিংটন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপ করবে সমপরিমাণ শুল্ক। এর চূ়ড়ান্ত রূপরেখা ঠিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রক কাজ করছে বলেও জানা গিয়েছে।
ট্রাম্পের এ হেন ঘোষণার সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গিয়েছে ভারতের শেয়ার বাজারে। লাফিয়ে লাফিয়ে নেমেছে সেনসেক্স এবং নিফটির গ্রাফ। বরাবরই লগ্নির ক্ষেত্রে সোনাকে নিরাপদ বলে মনে করে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে বেড়েছে তাঁদের সোনা কেনার প্রবণতা। হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধির জেরে খুচরো বাজারেও দামি হয়েছে হলুদ ধাতু।
লগ্নিকারীদের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে টন টন সোনা কিনছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও (আরবিআই)। হলুদ ধাতুটির দাম বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপকেও দায়ী করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। অন্য দিকে ডলারের নিরিখে অনেকটাই দুর্বল হয়েছে টাকার দাম। তবে কি এ বার থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে সোনাকে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে নয়াদিল্লি? উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্নও।
সংসদে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি জানিয়েছেন, এটা সত্যি যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সোনা মজুত করছে। তবে কোনও আন্তর্জাতিক মুদ্রাকে প্রতিস্থাপন করা এর উদ্দেশ্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রমাগত হলুদ ধাতু ক্রয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নির্মলা।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজ়ান শহরে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, সেখানে নতুন একটি মুদ্রা চালু করার ইঙ্গিত দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে ডলার দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেই এই বিষয়ে চরম হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমেরিকান মুদ্রায় আধিপত্য বজায় রাখার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর তিনি।
অক্টোবরের ব্রিকস সম্মেলনের পর থেকেই দুনিয়া জুড়ে ডলারের মূল্য হ্রাসের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, বেশ কয়েকটি দেশ ডলারের বদলে অন্য কোনও মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনাও চালাতে থাকে। এই আবহে বর্তমানে ভারতের সেই রাস্তায় হাঁটার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে স্পষ্ট করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা।
এ বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রাভান্ডার বৃদ্ধি পায় ৫৫০ কোটি ডলার। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য মুদ্রাভান্ডারটি বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর নেপথ্যে আরবিআইয়ের সোনা মজুতের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বর্ণভান্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০ কোটি ডলার। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মোট মজুত করা সোনার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭,০৮৯ কোটি ডলার।
২০২৩ সালে দেশের স্বর্ণভান্ডারে অতিরিক্ত ১৮ টন যুক্ত করে আরবিআই। ফলে ওই বছরের ডিসেম্বরে সোনার মজুত বেড়ে দাঁড়ায় ৮০৩.৫৮ টন। এর বাজারমূল্য ছিল ৪,৮৩০ কোটি ডলার। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে সোনা কিনছে আরবিআই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০২১ সালের পর গত বছরই সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ২০১৭ থেকে ধরলে যে কোনও ক্যালেন্ডার বছরে এটি ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
উল্লেখ্য, তুরস্ক, সুইৎজ়ারল্যান্ড এবং চিনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রায়ই সোনা বিক্রি করে থাকে। কিন্তু ভারত হলুদ ধাতু বিক্রি করে না বললেই চলে। কারণ, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রাজনৈতিক অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। সেটা বেশ কঠিন বলেই মনে করা হয়। বর্তমানে স্বর্ণ মজুতের নিরিখে বিশ্বে প্রথম দশে রয়েছে ভারত।
আর্থিক বিশ্লেষকদের কথায়, সোনা মজুতের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রাভান্ডারের ভারসাম্য বজায় রাখে আরবিআই। উদাহরণ হিসাবে গত বছরের কথা বলা যেতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের বিদেশি মুদ্রাভান্ডারে যোগ হয়েছে ৫,৬০০ কোটি ডলার। কিন্তু, ২০২৩ সালে একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ১,৭৭০ কোটি ডলার লোকসান হয়েছিল।
এই ঘাটতি পূরণ করতেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সোনার মজুত বৃদ্ধি করছে বলে জানা গিয়েছে। কারণ হলুদ ধাতুর দর গত এক বছরে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে সোনা কেনার উপর নতুন করে জোর দিয়েছে আরবিআই। এতে ডলারের নিরিখে টাকার অস্থিরতা এবং বিদেশি মুদ্রাভান্ডার কমে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে বলে স্পষ্ট করা হয়েছে।
গত বছর থেকে বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কও সোনার মজুত দ্রুত গতিতে বাড়িয়ে চলেছে। এই নিয়ে টানা তিন বছর হাজার টনের বেশি সোনা কিনেছে এই সমস্ত ব্যাঙ্ক। ২০২৪ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে সোনা কেনার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩৩ টনে পৌঁছে যায়। ফলে মোট বার্ষিক ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,০৪৫ টন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy