সামনের বছর বিধানসভা ভোটের আগে হার্দিক পটেলের ভূত ঘাড় থেকে নামাতে আর্থিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা উচ্চবর্ণে দশ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করল গুজরাত।
খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ গুজরাতে গিয়ে সুনিশ্চিত করেন, আগামী ১ মে গুজরাত দিবসের দিন রাজ্যের আনন্দীবেন সরকার এই অর্ডিন্যান্স জারি করুক। এর ফলে এখনও পর্যন্ত যাঁরা কোনও জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ পান না ও বছরে যাঁদের ৬ লক্ষ টাকার নীচে উপার্জন, তাঁরা সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় এই সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন। এর ফলে গোটা সংরক্ষণের সীমা পৌঁছে যাবে প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। যেটি সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমার বেশি। ফলে আদালতে এই সিদ্ধান্ত খারিজ হয়েও যেতে পারে অনায়াসে।
কিন্তু গত এক বছর ধরে যে ভাবে হার্দিক পটেল সংরক্ষণের দাবিতে গোটা গুজরাত উত্তাল করে পটেল সম্প্রদায়কে একজোট করেছেন, তাতে ভয় পাচ্ছেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন মুলুকে গিয়েও গুজরাতের পটেল সম্প্রদায়ের ক্ষোভের মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছিল। আর যে সব রাজ্যে ভোট হচ্ছে, সেগুলিতে জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর পর নিজের রাজ্য গুজরাতেও হেরে গেলে তাঁর মুখ পুড়বে। তাই অমিত শাহকে গুজরাতে পাঠিয়ে হার্দিক পটেলের ভূত এখনই ঘাড় থেকে নামাতে চাইছেন তিনি। হার্দিক পটেল এখন জেলে। যদিও তাঁর কিছু অনুগামীকে গতকাল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হার্দিক পটেলের অনুগামীরা অবশ্য গুজরাত সরকারের এই ঘোষণাকে ‘চোখে ধুলো’ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। তাঁদের মতে, কয়েক বছর আগেও রাজস্থান সরকার এ ভাবে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণিকে সংরক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটি বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেনি। বিক্ষুব্ধ পটেল সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (ওবিসি) মধ্যে নিজেদের সংরক্ষণ চায়।
কিন্তু ভোটের আগে অন্য কোনও শ্রেণির সংরক্ষণ কেটে পটেলদের সেই ভাগ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে না বিজেপি। সে ক্ষেত্রে ফের নতুন করে আন্দোলন দানা বাধবে। গুজরাত বিজেপি সভাপতি বিজয় রূপানি তাই বলেন, সকলের সব রকম সংরক্ষণের সুবিধা বজায় থাকবে। এই বাড়তি দশ শতাংশ সংরক্ষণে ব্রাহ্মণ, পাতিদার, ক্ষত্রিয়, লোহনার মতো উচ্চবর্ণ এর সুবিধা পাবেন। ভারতের সংবিধানে গোড়া থেকেই তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ শতাংশ ও ৭.৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এর পর মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট আসার পর সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (ওবিসি) জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়। সব মিলিয়ে সংরক্ষণের পরিমাণটি ৪৯.৫ শতাংশ। সুপ্রিম কোর্ট এই পরিমাণের বেশি সংরক্ষণের অনুমতি দেয় না।
রাজস্থানে গুজ্জর ও আর্থিক ক্ষেত্রে সংরক্ষণ দেওয়ায় সে রাজ্যে এখন সংরক্ষণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ শতাংশে। এ বছরের গোড়ায় হাইকোর্টে সংরক্ষণকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি মামলা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট সেটি খারিজ করে দিয়েছে। সেই থেকে বিজেপি আরও উৎসাহিত হয়েছে। ভোটের আগে বিজেপি গুজরাতে সংরক্ষণ ঘোষণা করে বলটি বিরোধীদের কোর্টে ঠেলে দিল।
আরও পড়ুন:
পটেল-সংরক্ষণের দাবিতে আগুন গুজরাত, হত ৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy