Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

নেতা রাহুলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন শীলা দীক্ষিতের

জয়পুরে বসেছিল কংগ্রেসের চিন্তন শিবির। দলের সহ সভাপতি পদে তখন অভিষেক হচ্ছে রাহুল গাঁধীর। মঞ্চে বসে দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। রাহুলের বক্তৃতা শুনে আবেগে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন তিনি। শেষপর্যন্ত রাহুলের থেকেই রুমাল নিয়ে চোখ-নাক মুছতে হল তাঁকে! জয়পুরের সেই দৃশ্যের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির কত যোজন ফারাক! কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর অভিষেক নিয়ে যখন প্রস্তুতি চলছে, তখন তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন সেই শীলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৩৮
Share: Save:

জয়পুরে বসেছিল কংগ্রেসের চিন্তন শিবির। দলের সহ সভাপতি পদে তখন অভিষেক হচ্ছে রাহুল গাঁধীর। মঞ্চে বসে দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। রাহুলের বক্তৃতা শুনে আবেগে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন তিনি। শেষপর্যন্ত রাহুলের থেকেই রুমাল নিয়ে চোখ-নাক মুছতে হল তাঁকে!

জয়পুরের সেই দৃশ্যের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির কত যোজন ফারাক! কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর অভিষেক নিয়ে যখন প্রস্তুতি চলছে, তখন তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন সেই শীলা। সে দিন কেঁদে ছিলেন, আর আজ বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের সবর্স্তরে যে ভরসা ও আস্থা রয়েছে, রাহুলের ক্ষেত্রে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ শীলার কথায়, ‘‘রাহুলের যোগ্যতা নিয়ে কংগ্রেসে এখনও অনেকেই সন্দিহান, কারণ কোনও সাফল্যের নজির রাখতে পারেননি তিনি।’’ তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হতেই পরে যদিও শীলা দাবি করেন, রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি কোনও রকম প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু সনিয়াকেই কংগ্রেসের সভানেত্রী থেকে যাওয়ার জন্য যে ভাবে সওয়াল করে গিয়েছেন তিনি, তাতে রাহুলের প্রতি অনাস্থা ফুটে উঠেছে।

এক সময় দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন শীলা। ঘরোয়া পরিবেশে রাহুল তাঁকে ‘আন্টি’ বলে সম্বোধন করেন। শুধু শীলা কেন, রাজীব গাঁধীর এক সময়ের বন্ধু পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহও গত সপ্তাহে সনিয়ার প্রশংসা ও রাহুলের সমালোচনায় একই পথে হেঁটেছেন। তাঁর মতে, ‘‘মাত্র দশ বছরের মধ্যে কেউ জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে পারে না। রাহুলকে এখনও আরও অনেক কিছু শিখতে হবে। আপাতত কংগ্রেসের সহ-সভাপতি হিসেবেই তাঁর কাজ করা উচিত।’’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হতে অমরেন্দ্র আজও বলেন, ‘‘ছেলের মতো দেখি রাহুলকে। ওঁর ভালর জন্যই পরামর্শ দিয়েছি।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই পরামর্শ ঘরোয়া ভাবে না দিয়ে, প্রকাশ্যে জানিয়ে কেন তাঁরা রাহুলের অস্বস্তি তৈরি করছেন?

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতার মতে, যে কোনও রাজনৈতিক দলে প্রজন্মের পরিবর্তনের সময়ে এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশিত। এক সময় নরেন্দ্র মোদী লালকৃষ্ণ আডবাণীর স্নেহভাজন ছিলেন। কিন্তু পরে সেই আডবাণীই মোদীর উত্থানের পথে কাঁটা বিছানোর চেষ্টা করেন। মোদীকে বিজেপির লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগের সময় গোয়ায় কর্মসমিতির বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন আডবাণী। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কেন তা করেছিলেন, তা কারও অজানা নয়। শীলা-অমরেন্দ্রদের ক্ষোভের রহস্যও প্রায় খোলা খাতার মতোই।

কংগ্রেস সূত্রের মতে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে গেলেও দিল্লি রাজনীতিতে এখনও ছড়ি ঘোরাতে চান শীলা। অথচ অশীতিপর শীলাকে সরিয়ে নতুন মুখ হিসেবে অজয় মাকেনকে দিল্লির সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া শীলা ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির বোঝা আর দলের ওপর রাখতে চান না রাহুল। একই ভাবে পঞ্জাবে অমরেন্দ্রর নেতৃত্বে আস্থা রাখলেও তাঁর হাতে দলের একচ্ছত্র ক্ষমতা দিতে চান না গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্ম। বিবাদ সেখানেই। কিন্তু সেই বিবাদের জেরে এমন মন্তব্য রাহুলের পুনরাবির্ভাবের মুখে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলছে, সন্দেহ নেই।

প্রায় দু’মাস ধরে রাহুল অজ্ঞাতবাসে। এ সপ্তাহে তাঁর আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা। তবে রাহুল ঘনিষ্ঠদের মতে, শীলা-অমরেন্দ্র-র নেতিবাচক মন্তব্য রাহুলকে রুখতে পারবে না। রাহুলও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এ বার তেড়েফুঁড়ে নামবেন বলেই কংগ্রেসের বড় অংশ আশা করছেন। তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ। আজ তিনি বলেন, ‘‘নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসে কোনও বিভ্রান্তি নেই। রাহুল সভাপতি হলেও সনিয়া গাঁধীই কংগ্রেসের সর্বময় নেত্রী থাকবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE