Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Shah Faesal

‘হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান, ভারতীয় মুসলিমদের দুরবস্থার প্রতিবাদেই পদত্যাগ’

সকালেই ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা টুইট করে তাঁকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।  জানিয়েছিলেন, ‘এই ঘটনা আমলাতন্ত্রের কাছে ক্ষতি, কিন্তু রাজনীতির জন্য লাভের।’ পরে অবশ্য তিনি জানান, নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিজেই জানাবেন শাহ ফয়জল।

সামনে রাজনীতির চ্যালেঞ্জ? ফাইল চিত্র।

সামনে রাজনীতির চ্যালেঞ্জ? ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:২৭
Share: Save:

সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করার কথা জানালেন জম্মু ও কাশ্মীরের ২০১০ ব্যাচের আইএএস টপার শাহ ফয়জল। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, কেন্দ্রীয় সরকারের অবিচার এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে ভারতের ২০ লক্ষ মুসলিম নাগরিকের দুরবস্থার প্রতিবাদেই এই পদত্যাগ বলে নিজের ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন ফয়জল। এখনও পর্যন্ত রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা নিজে না জানালেও তাঁকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। আগামী শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের বক্তব্য আরও স্পষ্ট করবেন বলে জানিয়েছেন এই পদত্যাগী আইএএস।

হিংসা বিধ্বস্ত কাশ্মীরের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ ৩৫ বছরের তরুণ শাহ ফয়জল। মাত্র ২৬ বছর বয়সে আইএএস পরীক্ষায় সারা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন। কাশ্মীরের ইতিহাসে সেই প্রথম। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আমলা হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সম্মানজনক ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে তিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলেও শিক্ষালাভ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ‘ইয়ুথ আইকন’।

প্রথম ধাক্কাটা আসে ২০১৬ সালে। ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে হিজবুল জঙ্গি বুরহান গনি নিহত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় ফয়জল আর গনির তুল্যমূল্য বিচার হওয়া শুরু হয়। তখন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই তুলনা বন্ধ করতে নিজেই আবেদন জানান তিনি, যা ভাল ভাবে নেননি অনেকেই।

আরও পড়ুন: দাসোর সময়সীমার মধ্যেই রাফাল যুদ্ধবিমান বানানো সম্ভব, সরকারকে বার্তা প্রাক্তন হ্যাল অধিকর্তার

এর পর গত বছরের জুলাই। দেশ জুড়ে একের পর এক ধর্ষণের প্রতিবাদে তখন উত্তাল সারা দেশ। সেই সব ধর্ষণের প্রতিবাদে তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন ফয়জলও। কিন্তু তা ভাল ভাবে নেয়নি দেশের আমলাতন্ত্র। একজন আইএএস আধিকারিক বিতর্কিত মন্তব্য করতে পারেন না, এই অজুহাতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়। সার্ভিস রুল ভাঙার অভিযোগও আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। শোনা যায়, তখন থেকেই চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছিলেন ফয়জল। এই সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা।

আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলা: রায় বেরনোর মুখে কেন সাংবিধানিক বেঞ্চ, নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন

জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে নিজের পদত্যাগের কারণ জানালেন ফয়জল নিজেই। তাঁর পোস্টে উঠে এসেছে কাশ্মীরের কথা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, ‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদের হত্যা করার প্রতিবাদে, কেন্দ্রের তরফে কোনও সদর্থক আলোচনার উদ্যোগ না থাকার প্রতিবাদে, হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে ভারতের ২০ কোটি মানুষের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে ওঠার প্রতিবাদে, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে উগ্র জাতীয়তাবোধের নামে বাড়তে থাকা ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে আমি সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ এই বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার নিজের অবস্থান আরও স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করবেন তিনি।

সকালেই ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা টুইট করে তাঁকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘এই ঘটনা আমলাতন্ত্রের কাছে ক্ষতি, কিন্তু রাজনীতির জন্য লাভের।’ পরে অবশ্য তিনি জানান, নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিজেই জানাবেন শাহ ফয়জল।

উপত্যকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে অবশ্য জানা যাচ্ছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা কেন্দ্র থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্সের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তিনি।

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE