তখনও চলছে সেনা অভিযান।
স্বাধীনতা দিবসের দিন কয়েক আগে জঙ্গিরা বড়সড় হামলা চালাল। গত কয়েক দিন ধরে গোয়েন্দা রিপোর্টে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে হামলা চালাল জঙ্গিরা। সাধারণ নাগরিক, যাত্রিবাহী বাস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকী জঙ্গীদের নিশানা হয়ে ওঠে থানাও। সোমবার সকালের এই ঘটনায় আট জন নিহত হয়েছেন। তিন জন সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি নিহত হয়েছেন পাঁচ পুলিশ কর্মীও। দিনের শেষে ঘটনায় জড়িত ৩ জঙ্গিকেও নিকেশ করতে পেরেছে সেনা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেনার গুলিতে তৃতীয় জঙ্গি নিহত হওয়ার পর শেষ হয় প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলা ও পাল্টা অভিযান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় সেনা। এমনকী, বিএসএফ-এর পাশাপাশি ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কর্মীদেরও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। গোটা রাজ্য তো বটেই প্রতিবেশী রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরেও চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘটনার জেরে উত্তাল হয় সংসদও। জঙ্গি হানা প্রসঙ্গে লোকসভায় মঙ্গলবার বিবৃতি দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ দিন সকালে তিনি জানান, এই ঘটনার জেরে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এ দিন সকালেই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই হামলার পিছনে লস্কর বা জইস-ই-মহম্মদের হাত আছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। এ দিন রাজনাথ বলেন, ‘‘পাকিস্তান বিষয়ে আমরা শান্তি চাই। কিন্তু, দেশের সম্মান বিসর্জন দিয়ে নয়। আমরা প্রথমে হামলা চালাই না। কিন্তু, কেউ আমাদের উপর আক্রমণ চালালে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যখন ভাল সম্পর্ক গড়তে চাইছি, তখন কেন বার বার সীমান্তে হামলা চালানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না!’’ এই হামলাকে অত্যন্ত গুরুতর জঙ্গি হামলা আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এ দিন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী-সহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উচ্চপদস্থ কর্তারা বৈঠকে বসবেন বলে সূত্রের খবর।
দীননগর থানার সামনে সেনা।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার ভোরে। সেনা ও পুলিশ সূত্রে খবর, সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে ঢুকে পড়ে কয়েক জন জঙ্গি। জম্মু-কাশ্মীর ঘেঁষা পঞ্জাবের সীমান্ত শহর গুরুদাসপুর। পাঠানকোট থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গুরুদাসপুর জেলার তৃতীয় বৃহত্তম শহর দীননগর। সেনা পোশাক পরে জঙ্গিরা প্রথমে একটি টেম্পোকে থামানোর চেষ্টা করে। চালকের উপর গুলি চালায় তারা। কিন্তু, টেম্পো-চালক কোনও ভাবে পালিয়ে যান। এর পর রাস্তার ধারের একটি ধাবায় হামলা চালায় তারা। ধাবার এক কর্মী গুলিতে নিহত হন। এর পর গুলি চলে অমৃতসর-পাঠানকোট জাতীয় সড়কে একটি চলন্ত বাসে। ঘটনায় চার জন যাত্রী গুরুতর জখম হন। তাদের পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ওই একই রাস্তায় এক মারুতিতে গুলি চালায় জঙ্গিরা। গুলিতে আহত হন চালক। এর পর তাঁর গাড়িটি ছিনতাই করা হয়। সেই মারুতি নিয়েই তারা দীননগর থানার কাছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালায়। সেখানে পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে দু’জন পরে মারা যান।
এর পরও থামেনি জঙ্গিরা। ওই মারুতি নিয়েই তারা পৌঁছয় দীননগর থানায়। সেখানে যথেচ্ছ গুলি চালায়। এমনকী, পুলিশ কর্মীদের পরিবারেরা থানা চত্বরের যে আবাসনে থাকে, সেটি লক্ষ্য করেও গ্রেনেড ছোড়ে। ঘটনায় পাঁচ জন পুলিশ কর্মী নিহত হন। তবে শুধু গোলাগুলি নয়, জঙ্গিরা যে বেশ আঁটঘাঁট বেধে এসেছিল তার প্রমাণও মিলেছে। অমৃতসর থেকে পাঠানপুর-মুখী রেললাইন থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচটি তাজা বোমা। ওই রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জঙ্গি হামলার জেরে সংসদভবন চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন রাজনাথ সিংহ। বাদলকে নিরাপত্তা বিষয়ে সম্পূর্ণ আস্থা দেন রাজনাথ। কেন্দ্র সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্যকে নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। পঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুমেধ সিংহ সাইনির সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এল সি গয়াল। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গয়াল। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। দু’টি হেলিকপ্টার-সহ কুইক রিঅ্যাকশন টিম, বম্ব স্কোয়াড, বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। এ দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রিকর বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেনার তরফে সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ জঙ্গি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।
এই হামলার পর পাক সীমান্ত জুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিএসএফের পঞ্জাব ফ্রন্টিয়ারের আইজি অনিল পালিওয়াল বলেন, ‘‘আমরা সতর্ক। পাক সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে।’’
যখন সেনা নামল গুরুদাসপুরে
দেখতে ক্লিক করুন
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
এক দিকে একে ৪৭, অন্য দিকে গাদা বন্দুক!
ছবি: এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy