Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

মানুষ কালামকে স্মরণ করলেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা

পোখরানে পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের (বার্ক) বিজ্ঞানীরা। রয়েছেন জাঁদরেল সেনাকর্তারাও। হঠাৎই শোনা গেল, পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের নেতৃত্ব দেবেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। কে সেই সেনাকর্তা?

ছবি: টুইটার।

ছবি: টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ১৯:০০
Share: Save:

পোখরানে পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের (বার্ক) বিজ্ঞানীরা। রয়েছেন জাঁদরেল সেনাকর্তারাও। হঠাৎই শোনা গেল, পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের নেতৃত্ব দেবেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। কে সেই সেনাকর্তা?

একটু পরেই দেখা গেল ‘পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ’ এলেন। ছোটখাটো চেহারা, সাদা চুল দু’দিকে পাট করে আঁচড়ানো। চলনেবলনে জাঁদরেল সেনা অফিসারের গন্ধটুকুও নেই! তাঁকে দেখে চমকেও উঠেছিলেন কেউ কেউ। কারণ, ‘পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ’ আদতে বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম!

শুক্রবার কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউটে বিবেকানন্দ বিজ্ঞান মিশনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রপতির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এমন কথাই শুনিয়েছেন ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের অধিকর্তা দীনেশ শ্রীবাস্তব। দেশের ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট প্রযুক্তি কিংবা হাল্কা মাপের যুদ্ধবিমান তৈরির অন্যতম ‘প্রাণপুরুষ’ আব্দুল কালাম। কিন্তু তাঁর এমন নাম হয়েছিল কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে পোখরান ‘টেস্ট রেঞ্জে’ যেতে বিজ্ঞানীদেরও সেনা পোশাকে যেতে হয়েছিল। প্রত্যেকের ‘কোড নেম’ দেওয়া হয়েছিল সেনা-উপাধি এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রের নামে। সেই সুবাদেই হাসিখুশি মানুষটার নামে এমন জাঁদরেল বদল এসেছিল।

কালাম কতটা হাসিখুশি আর মিশুকে ছিলেন তার প্রমাণ বছর দুয়েক আগেও পেয়েছিল মহানগরী। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের শততম অধিবেশনে যোগ দিতে শহরে এসেছিলেন কালাম। তত দিনে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে গেলেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি কমেনি। কিন্তু সেই কড়াকড়ি সরিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির পড়ুয়াদের সঙ্গে যে ভাবে মিশে গিয়েছিলেন তিনি, তা বোধহয় দেশের অন্য কোনও প্রথম সারির বিজ্ঞানী কিংবা রাষ্ট্রনেতার ক্ষেত্রে ভাবাও যায় না! বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলছেন, ‘‘স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের অনুষ্ঠানে এসেও একই ভাবে ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তিনি।’’

এই মিশুকে ব্যবহারটাই বোধ হয় কালামকে সাধারণ মানুষ কিংবা বিজ্ঞানী, সবার কাছেই সমান জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের অধিকর্তা শান্তনু ভট্টাচার্যের স্মৃতি বলছে, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে যখনই হাজির হতেন কালাম, তখনই নিমেষে ভরে যেত ‘ফ্যাকাল্টি হল’।

কালামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল জি এস রৌতেলা। বলছিলেন, ‘‘একটা ব্রিফকেসে শার্ট-প্যান্ট-তোয়ালে-ব্রাশ নিয়ে ঘুরতেন। দেখে মনেই হত না, তিনি কত বড় পদে রয়েছেন!’’ খাবারও ছিল অত্যন্ত কম। একটা ইডলি বা বড়া, একটা পাঁপড়। ব্যস। আর ওটুকু খেয়েই রকেটের বেগে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটতেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’।

বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলছেন, আসলে মানুষটা চিরাচরিত বিজ্ঞানী-আমলা ছিলেন না। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা হয়েও সরাসরি ফোন করে ডেকে পাঠাতে পারতেন। সরকারি খেতাব নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারতেন। অনেকেই বলেন, বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ার-রাষ্ট্রনেতা হলেও কালামের ভিতরে সব সময়ই একটা বিজ্ঞান-শিক্ষক লুকিয়ে থাকত। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসত তা। তাই সাহা ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ‘সাহা আয়নাইজেশন’ থিওরি নিয়ে বক্তৃতা দিতে পারতেন তিনি! ৮০ বছর পূর্ণ করে বলতে পারতেন, ‘‘৮১তম কক্ষপথে ঢুকে পড়লাম।’’

২৭ জুলাই গিয়েছিলেন আইআইএম-শিলংয়ে বক্তৃতা দিতে। ছাত্রদের উদ্দেশে কথা বলতে বলতেই লুটিয়ে পড়লেন। বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।

শিক্ষকজীবনের এক আশ্চর্য সমাপতন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE