সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ দিল্লির সিবিআই সদর দফতরে। গত কাল সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই অধিকর্তার সততা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবসরের মাত্র ১২ দিন আগে তাঁকে টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতির তদন্ত থেকে সরিয়ে দিয়েছে আদালত। অনেকেই মনে করছিলেন, অস্বস্তি এড়াতে সিনহা মেয়াদ ফুরনোর আগেই পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আজ সকালে নিয়ম মতোই অফিসে এসেছেন সিবিআই অধিকর্তা। তাঁর কোনও হেলদোল নেই। এ দিকে সিবিআইয়ের অফিসাররা অস্বস্তি এড়াতে না পেরে থমথমে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিকেল চারটে নাগাদ এই থমথমে পরিবেশটাই কাটিয়ে দিল তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর গ্রেফতার। সিবিআইয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেই ফেললেন, “যাক, গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ওই তুলোধোনার পরেও আমাদের অফিসাররা যে মনোবল না হারিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, এটাই তার প্রমাণ।” কিন্তু সিবিআইয়ের সদর দফতরে এখন সব থেকে বড় আলোচ্য বিষয়, রঞ্জিত সিনহা কি নিজের মেয়াদ শেষ করে তবেই সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে সরবেন? নরেন্দ্র মোদী সরকার কি অবসরের আগেই সিনহাকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে? সিবিআইয়ের পরবর্তী অধিকর্তাই বা কে হচ্ছেন?
আজও রঞ্জিত সিনহা সিবিআইয়ের অধিকর্তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত দেননি। মনমোহন সরকারের আমলে তাঁর সিবিআই অধিকর্তার পদে নিয়োগ নিয়ে বিজেপি আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনই তাঁকে সরাতে পারছে না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনি জটিলতা। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সিবিআই অধিকর্তাকে সরানোর ক্ষমতা নিয়ে আইনে ফাঁক রয়েছে। জেটলি বলেন, “বর্তমান আইনে কার
হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনে কোনও ফাঁক রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছি আমরা।”
শুধু অপসারণ নয়। নতুন সিবিআই অধিকর্তা নিয়োগ করতে গিয়েও আইনি জটিলতায় আটকে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বর্তমান আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটি বাছাই তালিকা থেকে সিবিআই অধিকর্তার নাম বেছে নেবেন। কিন্তু নতুন লোকসভায় কোনও বিরোধী দলনেতাই নেই। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন সংশোধন করে বিরোধী দলনেতার বদলে বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতার কথা উল্লেখ করতে হবে। সিনহার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২ ডিসেম্বর। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৪ নভেম্বর। অর্থাৎ এই সংশোধনী বিলটি এক সপ্তাহের মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নতুন অধিকর্তার নিয়োগের কাজটি সেরে ফেলতে হবে মোদী সরকারকে। নতুন প্রধান হিসেবে সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা অনিল সিনহা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব প্রকাশ মিশ্র, এনআইএ প্রধান শরদ কুমার, মহারাষ্ট্র পুলিশের প্রাক্তন কর্তা অরূপ পট্টনায়ক, রাজস্থানের ডিজি ওমেন্দ্র ভরদ্বাজের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে।
সিবিআইয়ের অন্দরমহলে জল্পনা চলছিল, আইনের সংশোধন করে নতুন অধিকর্তা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত রঞ্জিত সিনহার মেয়াদ অল্প সময়ের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গত কালের পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার সিনহাকে একেবারেই সিবিআইয়ের শীর্ষ পদে দেখতে চাইছে না।
আজ অরুণ জেটলি বলেন, “আমাদের বিবেক সাফ। কারণ সিনহাকে নিয়োগের পরেই আমরা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম। সে সময় লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রশ্ন করেছিলাম, কোন মাপকাঠিতে সিনহাকে নিয়োগ করা হল।” জেটলির কটাক্ষ, “এমন এক জনকে সিবিআই অধিকর্তা করা হয়েছিল, যাতে সহজেই তাঁকে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করানো যায়।” সরকারি সূত্রের খবর, সময়ের মধ্যে নতুন অধিকর্তা নিয়োগ না হলে বিশেষ অধিকর্তাই দায়িত্বভার সামলাবেন।
সকালে এই মন্তব্যের পরে বিকেলে জেটলি কেন্দ্রীয় আর্থিক অপরাধ দমন সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই বৈঠকে সিবিআইয়ের তরফে রঞ্জিত সিনহাই যোগ দেন।
সিনহা পদত্যাগ করবেন না ছুটিতে চলে যাবেন, তা নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়। যদিও সরকারি ভাবে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার খবরের কোনও ভিত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আজ টুজি তদন্তের দেখভালের দায়িত্ব সংস্থার অতিরিক্ত অধিকর্তা আর কে দত্তর হাতে তুলে দিয়েছেন সিনহা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy