Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

রাহুলের সফরের দিন বন্‌ধ শিক্ষকদের

অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী করা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খোলা স্কুলগুলিকে সরকার অধিগ্রহণ না করার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। তার মধ্যেই গত কাল ও আজ দু’দফায় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করায় আগুনে ঘি পড়েছে।

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ধর্নায় শিক্ষকরা। বুধবার করিমগঞ্জে।ছবি: উত্তম মুহরী।

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ধর্নায় শিক্ষকরা। বুধবার করিমগঞ্জে।ছবি: উত্তম মুহরী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী করা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খোলা স্কুলগুলিকে সরকার অধিগ্রহণ না করার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। তার মধ্যেই গত কাল ও আজ দু’দফায় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করায় আগুনে ঘি পড়েছে। আগামী কালের মধ্যে সরকার স্কুল অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত না নিলে জঙ্গি আন্দোলনের হুমকি দেন শিক্ষকরা। ৪ মার্চ শিলচর ও নগাঁওতে হতে চলা রাহুল গাঁধীর সভা বয়কট করে রাজ্যে বন্‌ধও ডেকেছে শিক্ষকদের সংগঠন।

গোটা রাজ্যের মতোই হাইলাকান্দি ও কাছাড়া জেলার বেসরকারি স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষকরাও গগৈ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছেন। এ দিন ‘সারা অসম অপ্রাদেশিকৃত শিক্ষক সংস্থা’র সদস্যরা হাইলাকান্দি ও শিলচরে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং শিক্ষামন্ত্রী শরৎ বরকটকির নামে মুর্দাবাদ ধ্বনি দেন। আগামী কালের মধ্যে স্কুলগুলি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত না হলে রাজ্য জুড়ে জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে শিক্ষক সংস্থা হুমকি দিয়েছে। অপ্রাদেশিকৃত শিক্ষক সংস্থার জেলা সভাপতি সত্যেন্দ্র নাথ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকে বেতন না পাওয়া শিক্ষকদের ২৫ জন ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন। যদি সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে অনেকেই আত্মহত্যার পথ নেবেন।’’

রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও একাধিক স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে পুলিশ লাঠিও চালিয়েছে। নির্বাচনের আগে এই আন্দোলন রাজ্য সরকারের কাছে বড় কাঁটা। কিন্তু রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে আপাতত স্কুল অধিগ্রহণ করার মতো তহবিলের জোর তাদের নেই। ঠিকাভিত্তিতে নিযুক্ত সাড়ে ছ’হাজার শিক্ষকের চাকরি পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী করার ব্যাপারে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিলেও বেসরকারি স্কুল অধিগ্রহণ করার ব্যাপারে মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকে কোনও আলোচনাই হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী শরৎ বরকটকির মন্তব্য উত্তেজনা বাড়ায়। গত কাল তিনি বলেছিলেন, শিক্ষকরা মদ্যপান করে আন্দোলনে আসছেন। আজ শরৎবাবু বলেন, ‘‘ধর্নায় বসে কোনও লাভ হবে না। শুধু শিক্ষকদের ভোটে দল জেতে না। শিক্ষকরা ভোট না দিলেও আমি জিতব, দলও জিতবে।’’ তিনি আরও জানান, কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় আদর্শ স্কুলের ভারও রাজ্যের উপরে এসে পড়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে এতগুলি স্কুল অধিগ্রহণ করে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে নিন্দায় সরব সব শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষকদের যৌথ মঞ্চের মুখপাত্র মকসুদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘‘এই ধরণের অপমানকর মন্তব্য মানা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী দিনের পর দিন শিক্ষকদের ঠকাচ্ছেন, অভুক্ত রাখছেন। অন্য দিকে রাহুল গাঁধীকে এনে রাজনৈতিক সভা করে গদি বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রতিবাদে বন্‌ধ ডেকেছি। রাহুলের সভা রুখতে শুক্রবার আমরা দলে দলে পথে নামব। সভায় আসার সব পথে অবরোধ চালানো হবে।’’ এসপি রজবীর সিংহ জানান, পুলিশ সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি। বাইরে থেকে অতিরিক্ত বাহিনী আসছে। রাহুলের কনভয় যে সব রাস্তা দিয়ে যাবে— সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করা হবে। ‘ড্রোণ’ ব্যবহার করে সভাস্থল ও আশপাশে আকাশ থেকে নজর রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। কেউ রাহুল গাঁধীর সভায় বাধা দিতে চাইলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। আমরা ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করছি। যে কোনও মূল্যে রাহুল গাঁধীর সভা সফল করব।’’ এ দিকে, রাহুলের সভা যে সতীন্দ্রমোহন দেব স্টেডিয়ামে হবে, সেখানেই শুক্রবার বিকেলে এন এম গুপ্ত ট্রফির ফাইনাল। জেলা ক্রীড়া সচিব বাবুল হোড় বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সভা সকালে। খেলা বিকেল ৫টায় শুরু। মাঠের কোনও ক্ষতি হবে না বলে কথা দিয়েছে কংগ্রেস। আশা করি খেলায় সমস্যা হবে না।’’ আশ্বাস দেওয়ার পরেও স্কুল অধিগ্রহণ না করা ও শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা না করার প্রতিবাদে সদৌ অসম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন নগাঁওতে হতে চলা রাহুল গাঁধীর সভাও বয়কট করে সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন‌্‌ধের ডাক দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE