‘হনুমানজির মতো কঠোর ভাবে মোকাবিলা করুন রাক্ষসদের’, বিজেপির জন্মদিবসে বার্তা মোদীর গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঘটনাচক্রে মিলে গিয়েছে দু’টি দিন। হমুমান জয়ন্তী এবং বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস। আর সেই মেলবন্ধনকেই হাতিয়ার করলেন নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার দলের জন্মদিবসে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পবনপুত্র হনুমানের মতো কঠোর হাতে রাক্ষস দমনের আবেদন জানালেন!
সংসদের বালাযোগী প্রেক্ষাগৃহে বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার দলের সভাপতি জেপি নড্ডা-সহ সব প্রথম সারির নেতা হাজির ছিলেন। ছিল ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মোদীর বক্তৃতা শোনার বন্দোবস্ত। সেখানেই হনুমানের রামভক্তির পাশাপাশি, ‘লঙ্কাকাণ্ডের’ উদাহরণও তুলে ধরেন মোদী। বলেন, ‘‘রাক্ষসদের মোকাবিলার ক্ষেত্রে হনুমান যেমন কঠোরতা দেখিয়েছিলেন, আপনাদেরও সেই মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। ভারতমাতাকে মুক্ত করতে হবে।’’ লোকসভা ভোটের আগে তাঁর এই মন্তব্য মেরুকরণের রাজনীতির ইঙ্গিতবাহী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
গত ৪৩ বছরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দল আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন মোদী। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখানেই থেমে গেলে হবে না। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। বড় স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নপূরণের ক্ষমতা আপনাদের রয়েছে।’’ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেই যে তাঁর এই মন্তব্য, তা স্পষ্ট করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ইতিহাস গড়েছিলেন দেশবাসী। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’’
তাঁর কথায়, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে কেউ হারাতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয় জয় করতে হবে।’’দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও মোদীর নিশানায় ছিল ‘কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র’। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দীপ্রাচীন দলকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছাড়লেও ওদের গোলামির মানসিকতার ইতি হয়নি।’’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি ‘বাদশাহি’ মানসিকতা এবং মানুষের সমস্যা উপেক্ষা করার অভিযোগও তুলেছেন মোদী।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর সরকারের সাফল্যের তালিকা দিতে গিয়ে প্রথমেই জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের কথা বলেছেন মোদী। তার কথায়, ‘‘কাশ্মীরে শান্তির সূর্যোদয় হয়েছে।’’ আগামী ৬ বছর পরে বিজেপির ৫০ বছর পূর্তিতে নতুন সাফল্যের নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। সাংগঠনিক কার্যকলাপে প্রযুক্তির আরও সাহায্য নেওয়ার কথাও বলেছেন।
ইতিহাস বলছে, জনসঙ্ঘ থেকে ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া বিজেপির উত্থান রাতারাতি হয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের লড়াই ছিল দীর্ঘ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেন, সেই সময়ে তৈরি হওয়া ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই আজ বড় শক্তি নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। দেশের ১৭টি রাজ্যে একা অথবা জোট গড়ে সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। ৪৩ বছরের এই পথ চলায় বিজেপির ব্যর্থতার নজিরও কম নয়। ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটে মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল পদ্মশিবির। আবার পর পর দু’বার জোট গড়ে ক্ষমতায় এসেও তারা পূর্ণ সময় টেকাতে পারেনি সরকার। প্রথম বার ১৩ দিন ও দ্বিতীয় বার ১৩ মাসের মাথায় পড়ে গিয়েছিল বাজপেয়ী সরকার। পরে অবশ্য পাঁচ বছর সরকার চালানোর সাফল্যও দেখেছে বিজেপি।
কিন্তু ২০০৪ সালের পরে আবার টানা ১০ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে। ২০১৪ সালের পরে যে ছবি আবার বদলেছে। এ বার মোদীর লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয়ের হ্যাটট্রিক। বৃহস্পতিবার সেই লক্ষ্যেই বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বলেছেন ‘সমমনস্ক’ দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার কথাও। যা শুনে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মনে। তবে কি লোকসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান পদ্মশিবির?
দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করছে পদ্মশিবির। দেশ জুড়ে বিজেপি কর্মীরা দেওয়াল লিখনের কাজ শুরু করে দেবেন। প্রাথমিক ভাবে দু’টি স্লোগানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হল ‘এক বার ফির সে মোদী সরকার’, অন্যটি হল ‘এক বার ফির সে ভাজপা সরকার’। মোদী বক্তব্য রাখার পরেই দিল্লিতে ওই দেওয়াল লিখন কর্মসূচির সূচনা করবেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। প্রাথমিক ভাবে গোটা দেশে প্রায় ১০.৭২ লক্ষ জায়গায় ওই দেওয়াল লিখন হবে। একই সঙ্গে দল জানিয়েছে, গোটা দেশের ১০ লক্ষ স্থানে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ্য, বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে মোদীর বার্তা পৌঁছে দিয়ে জনভিত্তি বাড়ানো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy