“একটা দেশের দাদাগিরিতে দুনিয়ার বাণিজ্যিক ব্যবস্থা বিপদের মুখে পড়েছে; মুক্ত বাণিজ্যকে বাঁচাতে আমাদের এক সঙ্গে লড়তে হবে।” ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে বললেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই খোঁচার উত্তর দিতে দেরি করেননি। বলেছেন যে, ভিয়েতনাম আর চিন মিলে আমেরিকার ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। দু’দেশের শুল্কযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে— চিনের বহু ছোট সংস্থার গুদামে ইতিমধ্যেই পণ্যের পাহাড় জমছে। পর্যবেক্ষকদের মতে প্রেসিডেন্ট জিনফিং-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের উদ্দেশ্য দ্বিমুখী: এক, এই বাজারে নিজেদের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো; এবং দুই, আমেরিকাকে বিশ্ব বাণিজ্যের দুনিয়ার বদমেজাজি ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি নিজের মুখটি বন্ধ না রাখেন, তা হলে দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সাধনে তুলনায় কম পরিশ্রম করলেও চলবে। তবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজার এত দিন চিনের যে নিঃশব্দ দাদাগিরি দেখেছে, তাতে প্রেসিডেন্ট জিনফিং-এর ‘বেচারা’ ভাবমূর্তিতে তারা সহজে বিশ্বাস করবে কি?
যুদ্ধবিধ্বস্ত
বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সঙ্কটের কবলে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সুদান, জানাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত দু’বছরে যুদ্ধে ঘরছাড়া ১.৩ কোটি মানুষ। নিহত ২৪০০০, সংখ্যাটি বাড়ছে দিন দিন। ভয়াবহ যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে দেশটির বহু প্রান্তই খরার কবলে। সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ ঝামেলা শেষপর্যন্ত ২০২৩ নাগাদ গড়িয়েছে গৃহযুদ্ধের দিকে। বিশ্বের কাছে সুদানের মানবিক সঙ্কট পরিস্থিতির কথা তুলে ধরতেই সম্প্রতি লন্ডনে এক সম্মেলনের আয়োজন করে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি ও ফ্রান্স।

বৈঠক: হ্যানয়-এ ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় শি জিনফিং। ছবি: রয়টার্স।
সহমর্মী
শুধু রাস্তাই বা কেন, কোনও কিছুই কি অবশিষ্ট আছে গাজ়ায়? মানুষ আছে কিছু: জীবিত, রক্তাক্ত, চলচ্ছক্তিহীন, মুমূর্ষু। আর আছে কিছু সহমানুষ এবং সহপশুও— মৃত্যুমুখ থেকে অন্য মানুষ ও পশুদের ফিরিয়ে আনতে যারা উদয়াস্ত খাটছে। এক পশুচিকিৎসকের ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছড়িয়েছে প্রচারমাধ্যমে, গাজ়ার ধ্বংসস্তূপে তিনি চালাচ্ছেন মোবাইল ক্লিনিক— ‘সেফ হেভেন ফর ডাঙ্কিজ়’। যেটুকু ওষুধ আর চিকিৎসা-সরঞ্জাম অবশিষ্ট তা-ই গাধার পিঠে চাপিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আহত অন্য গাধা ও পশুদের। গাধা-ই কেন? কারণ, ওই তো ভার বইতে পারে, গর্ভবতী মহিলা, মৃতপ্রায় লোকেদের নিয়ে যেতে পারে নিরাপদ গন্তব্যে, কিছু না পারুক এই অকালে তাকে জড়িয়ে অন্তত একটু উষ্ণতা মেলে। মনুষ্যত্বের এই আশ্বাসটুকুও কম কী?
সিংহের প্রত্যাবর্তন
১৮৭৯-এর অ্যাংলো-জ়ুলু যুদ্ধে জিতে ব্রিটিশরা দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজ়ুলু-নেটালকে চাষের জমিতে পরিণত করে। এলাকা থেকে মুছে যায় বন্যপ্রাণ। ১৪০ বছর পর, ২০১৮-য় স্থানীয় অসরকারি সংস্থা, কিছু বিনিয়োগকারী ও জ়ুলু জনগোষ্ঠী সমবেত ভাবে এলাকার পুনঃঅরণ্যায়ন শুরু করে। এত বছর সেখানে ঘুরত গরু, ছাগল, গাধা। ইতিউতি চোখে পড়ত লাল হরিণ, দাঁতাল শূকর, কালেভদ্রে আসত লেপার্ড। তার পর শুরু হয়েছে হরিণ, শূকরদের সংখ্যা বাড়ানো। ২০২২-এ আনা হয়েছে বনমহিষ, গণ্ডার আর সিংহ। সবশেষে ফিরেছে হাতি। বন্যরা বংশবিস্তার শুরু করেছে, চোরাশিকারিদের রুখতে গণ্ডারদের খড়্গ চাঁছা হচ্ছে। ক্রুগারের দক্ষিণে জ়ুলুদের থেকে লিজ় নেওয়া জমিতে গড়ে উঠেছে এই নতুন সাফারি পার্ক ‘বাবানাংগো গেম রিজ়ার্ভ’। অরণ্য-সম্পদের আংশিক মালিকানা, পর্যটনের নানা দায়িত্বও জ়ুলুদের। সাফারি লজে সাজানো তাঁদের হস্তশিল্প। মানুষ ও প্রকৃতিকে সমান যত্নে রেখে সংরক্ষণের নজির বাবানাংগো।

আকর্ষণ: গেম রিজ়ার্ভের গণ্ডাররা।
বিস্ময়ে তাই...
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বিখ্যাত উপন্যাসের গোড়াতেই ছিল এক চরিত্রের প্রথম বরফের চাঁই দেখার স্মৃতি। বাস্তবেও এমন ‘প্রথম’ অভিজ্ঞতা হল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র টুভালু-র। সাকুল্যে হাজার বারো জনসংখ্যার দেশে প্রথম এল এটিএম। রাজধানী ফুনাফুটির ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব টুভালু-তে তার উদ্বোধনে হাজির দেশের প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর জেনারেল, সাংসদ নেতা ব্যবসায়ী, কে নন! নাগরিকদের বৈদ্যুতিন ব্যাঙ্কিংয়ে হাতেখড়ি হল। আপাতত প্রিপেড কার্ডে টাকা তোলা— ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড এখনও বহু দূর। বোতাম টিপলে টাকা বেরোয়, এই বিস্ময়ই সঙ্গী এখন। টেলিকলারদের ফোন আসবে কবে থেকে?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)