জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে ৮ নভেম্বর রাত আটটায় নয়, নোট বাতিলের ঘোষণাটা নরেন্দ্র মোদী নাকি আসলে করতে চেয়েছিলেন ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ। আজ দিল্লিতে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হওয়ার দিনে তেমনই ইঙ্গিত মিলল দলীয় শীর্ষ সূত্রে।
বিজেপির ওই শীর্ষ সূত্রের দাবি, নতুন নোট ছাপা চলছিলই। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুরনো নোট বাতিলের ঘোষণা হলে তত দিনে পর্যাপ্ত নতুন নোট ছাপার কাজ অনেকটাই এগিয়ে যেত। মানুষের ভোগান্তিও কম হতো। প্রশ্ন হল, তা হলে কেন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন মোদী? সূত্রের মতে, ৮ নভেম্বরের কয়েক দিন আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও কর্মীর মাধ্যমে বাজারে ফাঁস হয়ে যায় নতুন ২ হাজার টাকার নোটের ছবি (যে উদাহরণ দিয়ে বিরোধীদের অনেকেরও অভিযোগ, নতুন নোট আগেভাগে চলে এসেছিল বিজেপির হাতে)। ফলে মোদী মনে করেছিলেন, এই অবস্থায় গোপনীয়তা ভঙ্গ হলে তাঁর গোটা পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। এই আশঙ্কায় তড়িঘড়ি ২-৩ দিনের মধ্যেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির আরও এক সূত্রের মতে, মোদীর আসলে ওই ঘোষণাটি করার কথা ছিল ২৭ ডিসেম্বর নাগাদ।
বিরোধীদের বক্তব্য, মোদীর পিঠ বাঁচাতেই এখন এ সব বলা হচ্ছে। মোদী যখন কারও সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন গোপনীয়তা বজায়
রাখার দায়ও তাঁর। ঘটনা হল, বিজেপি নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, সাম্প্রতিক অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো নোট বাতিলের সিদ্ধান্তও ব্যুমেরাং হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে আমজনতা। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে এ সবের খেসারত দিতে হবে দলকে। মোদী ওই রাজ্যেরই সাংসদ। কাজেই ৫ রাজ্যে ভোটের আগে ‘ব্র্যান্ড মোদী’কে রক্ষা করাও বড় দায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের।
কর্মসমিতির বৈঠকে নোট বাতিলের ছায়া যে পড়তই, তা জানা কথা। তাই আজ বৈঠকের শুরুতে বিজেপি সভাপতি ঘটনাপ্রবাহ এমন ভাবে সাজিয়েছিলেন, যাতে এই বার্তা যায়, মোদীর পরপর দু’টি ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্তে সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয় মোদীকে। পাকিস্তান না শোধরালে দরকারে আরও একটি ‘আউট অব দ্য বক্স’ অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কথায়, ‘‘৫০ দিন কষ্টভোগ করেও মানুষ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছিলেন। বিরোধীদের কবল থেকে বেরিয়ে এসে গরিবেরা এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বিরোধীরা আগে প্রশ্ন করতেন, কেন কালো টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? আজ তাঁরাই বলছেন, কেন পদক্ষেপ করা হচ্ছে?’’
তবে একান্তে বিজেপিরই কেউ কেউ মানছেন, নোট-পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে হতে আরও মাস তিনেক লেগে যাবে। অনেকেই রোজগার হারিয়েছেন, আয় কমেছে। ভোটে তারও প্রভাব পড়বে। সে কথা ভেবেই আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জেলায় জেলায় ঘুরে সেনা অভিযান ও নোট বাতিলের প্রচারকে সমাজের সমস্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অমিত। সভাপতির দাওয়াই, প্রচারে বলতে হবে, সরকারের আয় থেকে লাভ হবে গরিবের। নোট বাতিলের পর যে সব রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেখানে কোথাও কোথাও বিজেপি জিতেছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মতো রাজ্যেও দ্বিতীয় স্থানেও থেকেছে। সবই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সিলমোহর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy