নয়াদিল্লির একটি স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে পেং লিউয়ান।
কর্তা ব্যস্ত রইলেন কূটনৈতিক মারপ্যাঁচে। গিন্নি গেলেন দিল্লির একটি স্কুলে।
এবং তিনি সেই স্কুলে গেলেন। ক্যালিগ্রাফি করে দেখালেন। গুনগুন করে গান গাইলেন। জিতে নিলেন ছাত্রছাত্রীদের মন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর টেগোর আন্তর্জাতিক স্কুলে যান চিনের ‘ফার্স্ট লেডি’ পেং লিউয়ান। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটান শি চিনফিংয়ের স্ত্রী। তাঁর জীবনের বহু মুহূর্ত তিনি ভাগ করে নেন পড়ুয়াদের সঙ্গে। বলেন, “দেশের জন্য কিছু করতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”
বছর একান্নর লিউয়ানকে পেয়ে যারপরনাই খুশি ছাত্রছাত্রীরাও। তাঁরা তাঁকে বরণ করে নেন ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে একটি চিনা গান গেয়ে। ছাত্রছাত্রীরা যখন গান গাইছেন, তখন আর চুপ করে থাকতে পারেননি লিউয়ান। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গুনগুন করে গলা মেলান তিনিও। কারণ গান যে তাঁর রক্তে। তিনি যে চিনের এক জন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী। স্কুলের অধ্যক্ষ মীনাক্ষি সেন বলেন, “লিউয়েন জানিয়েছেন, চিনে এক সময় এই গানটি খুবই জনপ্রিয় ছিল।”
লিউয়ানের জন্মও এক শিল্পী পরিবারে। চিনের শাংডং প্রদেশে।
সেই শাংডং প্রদেশ, যেখানে দিকে দিকে ফুটে থাকে ‘পিওনি’ ফুল। তাই তো চিনের মানুষ তাঁদের প্রিয় গায়িকাকে ডাকেন আদরের ‘পিওনি ফেয়ারি’ নামে।
এ দিন ‘পিওনি ফেয়ারি’-কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে নাচ করেও দেখান ছাত্রছাত্রীরা। লিউয়ান ছাত্রছাত্রীদের ক্যালিগ্রাফি করে দেখান। বলেন, “বাবার ইচ্ছেতেই তিনি ক্যালিগ্রাফি শিখতে শুরু করেছিলেন।” প্রসঙ্গত, চিনের সাংহাই প্রদেশের একটি স্কুলের সঙ্গে যৌথ ভাবে দূরশিক্ষার মাধ্যমে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের ক্যালিগ্রাফি এবং মার্শাল আর্টও শেখানো হয়। আর সাংহাইয়ের ওই স্কুলে শেখানো হয় কত্থক ও যোগা।
এরই মাঝে ঘটে এক অভিনব ঘটনা। মণিপুরের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অ্যালবার্ট জিনসাংমুয়ামের মুখে চিনা ভাষা শুনে থমকে দাঁড়ান লিউয়ান। অ্যালবার্টের কাছে লিউয়ান জানতে চান সে কি চিনের নাগরিক? চিনা ভাষা শিখছেন অ্যালবার্ট। তাই হেসে চিনা ভাষাতেই অ্যালবার্ট লিউয়ানকে জানায়, সে চিনের নাগরিক নয়। এক জন ভারতীয়। ভারতীয় মহিলাদেরও লিউয়ান ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলে জানিয়েছেন মীনাক্ষি। তিনি বলেন, “লিউয়ান তাঁকে বলেছেন ভারতীয় মহিলাদের তিনি শ্রদ্ধা করেন। তাঁরা সুন্দরী, পরিশ্রমী এবং পরিবারকে ধরে রাখতে পারেন।”
রাজঘাটে গাঁধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন চিনের ‘ফার্স্ট লেডি’।
স্কুলের পক্ষ থেকে উপহারও তুলে দেওয়া হয় চিনের ‘ফার্স্ট লেডির’ হাতে। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আরাধিকা চক্রবর্তী এঁকেছেন লিউয়ানের ছবি। সেটিই তুলে দেওয়া হয় চিনফিং-পত্নীর হাতে। লিউয়ানও চিনা গল্পের বই-সহ একাধিক উপহার তুলে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে। সব মিলিয়ে লিউয়ানের ব্যবহারে মুগ্ধ স্কুলের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সকলেই। তাই তো ১৬ বছরের এক ছাত্রী বলেন, “তিনি (লিউয়ান) সত্যিই অনন্যা।”
তবে হাসি আর ধরছিল না বছর এগারোর ছাত্র প্রভজ্যোত সিংহের মুখে। কারণ ‘পিওনি ফেয়ারি’ তাকে দিয়েছেন একটি বিশেষ উপহার। সেটি হল গালে চুমু! তাই প্রভজ্যোত মীনাক্ষিকে বলছিল, “ম্যাডাম আমি তিন-তিনটি সাক্ষাৎকার দিয়েছি। কারণ লিউয়ান আমার গালে চুমু দিয়েছে।” ম্যাডামের সহাস্য উত্তর, “তুমি আর গাল ধুয়ো না!”
ছবি: পিটিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy