Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

নোট বদল আর নয়, আমজনতায় আস্থা রেখেই আরও কঠোর মোদী

বিরোধীরা একজোট। চেনা মূর্তি ছেড়ে রাজ্যসভায় চাঁচাছোলা আক্রমণ করেছেন ‘মৌনী’ মনমোহন। বিক্ষোভ দানা বাঁধছে দলের একাংশেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

বিরোধীরা একজোট। চেনা মূর্তি ছেড়ে রাজ্যসভায় চাঁচাছোলা আক্রমণ করেছেন ‘মৌনী’ মনমোহন। বিক্ষোভ দানা বাঁধছে দলের একাংশেও। তবু নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ফিরে দেখা তো দূর, বরং আরও কড়া পদক্ষেপ করলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, বিরোধীরা যা-ই বলুন, যতই সমালোচনা করুন বিশেষজ্ঞরা, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর পাশে। সমর্থন আছে বলেই, এই ভোগান্তি সহ্য করছেন তাঁরা। আর সেই ‘আত্মবিশ্বাস’ থেকেই কালো টাকা নিকেশের যুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, ব্যাঙ্কে ২০০০ টাকা পর্যন্ত পুরনো নোট বদলে সরাসরি নতুন নোট নেওয়ার যে ব্যবস্থা ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে খরচ করা ছাড়া একমাত্র অ্যাকাউন্টেই তা জমা করা যাবে। হাজার টাকার নোট আবার ওই সব জায়গাতেও খরচ করা যাবে না। ফলে বাড়িতে হাজারের নোট এখনও থেকে থাকলে, অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া ছাড়া আর গতি নেই।

শুধু তা-ই নয়, এ দিন রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন মোদী। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেখানে আয়কর আইন সংশোধনে সিলমোহর বসানো হয়েছে। যাতে ৮ নভেম্বর নোট নাকচের পরে যে অর্থ ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে জমা পড়েছে, কালো টাকা হিসেবে চিহ্নিত হলে যাতে তাতে চড়া হারে কর ও জরিমানা বসানো যায়।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবারই একজোট হয়ে সুর চড়িয়েছে প্রায় সব বিরোধী দল। রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে আগে থেকেই সরব ছিলেন। সেই সঙ্গে অন্তত এই বিষয়ে মোদী বিরোধিতার ছাতার তলায় আসতে রাজ্য রাজনীতির বিবাদও মুছে ফেলেছিলেন অনেকে। এ দিন আবার রাজ্যসভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয় মোদীকে। সেই মনমোহন, যিনি শুধু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নন, সেই সঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরও। অর্থনীতিবিদ হিসেবে দুনিয়া এখনও তাঁকে সমীহের চোখে দেখে। গত লোকসভা ভোটে এই মনমোহনকেই ‘মৌনী’ বলে লাগাতার নিশানা করে গিয়েছেন মোদী। আর এ দিন প্রায় অভূতপূর্ব ভাবে মুখ খুলে মনমোহন বলেছেন, নোট বাতিলের পরিকল্পনা অব্যবস্থার চূড়ান্ত। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এতে বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ কমে যাবে।

বিজেপি-র একটা অংশও মোদীর সিদ্ধান্তে প্রথম থেকে অখুশি। শত্রুঘ্ন সিন্‌হা এ দিন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে মা-বোনেদের বহু কষ্টে জমানো অর্থকে কালো টাকা বলা চলে না। তিনি না হয় ‘বিদ্রোহী’। দলের আরও অনেকেও এই সিদ্ধান্তে ঘোর অখুশি। তাঁদের আশঙ্কা, আসন্ন উত্তরপ্রদেশ ভোটে আমজনতার এই হয়রানির খেসারত দিতে হবে। পাশাপাশি এত বড় রাজনৈতিক ঝুঁকিতে দল বিপদে পড়তে পারে সারা দেশেই।

কিন্তু এ দিন এ সব কিছুকে তোয়াক্কা করার লক্ষণ দেখাননি মোদী। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছিলেন, অ্যাপ-সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, ৯৩ শতাংশ মানুষই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে। বিজেপি-র একটি সূত্র বলছে, পরিস্থিতির নাড়ি টিপে মোদীর মনে হয়েছে কালো টাকার কারবারিদের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করছেন আমজনতা। অবশেষে তাঁরা সাজা পাবেন, শুধু এই আশাতেই সহ্য করছেন ফাঁকা এটিএম, ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন কিংবা দু’হাজারের নোট ভাঙাতে না পারার ভোগান্তি। আর সেই আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করেই নিজের ৫৬ ইঞ্চি ছাতির ভাবমূর্তি ফের এক বার ঝালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, এ দিন মন্ত্রিসভায় আয়কর আইন সংশোধনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সংসদের চলতি অধিবেশনেই সেই বিল পাশ করানো হবে। বিরোধীরা সংসদ অচল করে রেখেছে। এই বিল পাশেও বাধা এলে, বিরোধীরা কালো টাকার কারবারিদের সুবিধা করতে চায় বলে পাল্টা আঙুল তুলবে কেন্দ্র।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, পুরনো নোটে যে সব টাকা জমা পড়ছিল, তা কালো টাকা হলেও ৩৩% কর দিয়ে ছাড় পাওয়ার সুযোগ ছিল। আইন সংশোধন করে সেই ফাঁক বন্ধ করা হয়েছে। নোট বাতিলের পর এত দিন পেট্রোল পাম্প, সরকারি হাসপাতালের মতো কিছু জায়গায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট চলছিল। যার সময়সীমা ছিল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। তা বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু শুধু ৫০০ টাকার জন্য। অর্থাৎ মোদীর বার্তা, তিনি দমবার পাত্র নন।

বিরোধীরা সিদ্ধান্ত ফেরানোর (রোলব্যাক) দাবি তুললেও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুর মন্তব্য, ‘‘মোদীর রক্তেই রোলব্যাক নেই।’’ যদিও এই সিদ্ধান্তে কালো টাকা নির্মূল হবে, নাকি উল্টে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতির শিক্ষকরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনও টুইট করেছেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত দিন দিন বড় ভুলে পর্যবসিত হচ্ছে।’’

রাজধানীর রাজনীতিকরা বলছেন, নোট নাকচ করে আদতে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন মোদী। তাই বাঘকে লড়াইয়ে হারানো ছাড়া তাঁর সামনে পথ নেই। মাঝপথে পিঠ থেকে নামলে, বাঘ তো ছেড়ে কথা বলবে না!

ছাড় যেখানে

আগে দেওয়া ছাড় বহাল থাকছেই। আজ থেকে আরও কিছু পরিষেবায় শুধু পুরনো ৫০০ টাকার নোট ব্যবহার করা যাবে

• কেন্দ্র, রাজ্য, পঞ্চায়েত ও পুরসভার বিদ্যালয়ের ফি।

পড়ুয়া পিছু সর্বোচ্চ ২০০০

• কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কলেজের ফি

• প্রি-পেড মোবাইলে ৫০০ টাকা পর্যন্ত টপ-আপ

• বিদেশিরা সপ্তাহে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা বদলাতে পারবেন।

• জাতীয় সড়কে টোল মকুব

২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার পর ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া যাবে পুরনো ৫০০ টাকা

* সব ছাড় বহাল ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত

নয়া নিয়ম

• আজ থেকে বন্ধ ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে পুরনো ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোট বদল

• ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছু ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার পুরনো নোট দেওয়া যাবে

• কিন্তু ১০০০ টাকার পুরনো নোট আর কোথাওই ব্যবহার করা যাবে না। কেবলমাত্র জমা দেওয়া যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে

নতুন নোটের জোগান বাড়াতে সরকার সব রকম চেষ্টা করছে। কিন্তু জাতীয় বিপর্যয়ের সময় কিছুটা স্বস্তি দিতে যেমন বিশেষ ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়, এখনও গরিব মানুষের রোজকার প্রয়োজন, আপৎকালীন চিকিৎসা ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে তেমনটা করা যেতে পারে।

রতন টাটা | অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান, টাটা সন্স

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE