ইউক্রেনের যুদ্ধভূমিতে রুশ হামলায় মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকের ডাক্তারি পড়ুয়া নবীন শেখারাপ্পা জ্ঞানগউধরের।
ইউক্রেনের যুদ্ধভূমিতে রুশ হামলায় মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকের ডাক্তারি পড়ুয়া নবীন শেখারাপ্পা জ্ঞানগউধরের। আর নবীনের সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল একটি পরিবারের স্বপ্ন, হাভেরি গ্রামের এক যুবকের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। এই গ্রামের কোনও চিকিৎসক নেই, তাই ছোট থেকেই নবীন চিকিৎসক হতে চেয়েছিল, বলে ফোনে জানালেন নবীনের জ্যাঠতুতো দাদা কান্তেশ জ্ঞানগউধর। বললেন,‘‘ও এমবিবিএস হয়ে আমাদের গর্বিত করতে চেয়েছিল।’’
মঙ্গলবারই খারকিভ ছাড়ার কথা ছিল নবীনের। বেলার দিকে কার্ফু উঠলে পোল্যান্ডের সীমান্ত যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল নবীনদের। সেখান থেকে দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরার উড়ানের ব্যবস্থা হত। পোল্যান্ড যাওয়ার রাস্তায় খিদে মেটানোর জন্য খাবার এবং জল কিনতে বেরিয়ে ছিলেন নবীন। সঙ্গে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করবেন বলেও ভেবেছিলেন, ওই সময়েই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় নবীনের। রুশ হামলার পর থেকেই বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন। কিন্তু বাড়ির জন্য রওনা দেওয়ার দিনই বিস্ফোরণে সব শেষ।
কর্নাটকের বাসিন্দা নবীন চতুর্থ বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া। ইউক্রেনের খারকিভে পড়াশোনা করছিলেন। সামনের জুন মাসেই নবীনের পরীক্ষা ছিল বলে জানান কান্তেশ। তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। ‘‘ওখানে এখন অনলাইন ক্লাসের সুবিধা ছিল না, অফলাইন ক্লাস করতে হচ্ছিল, তার উপর তিন মাস পর পরীক্ষা। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছিল নবীন। বিশ্ববিদ্যালয় যদি আগে থেকে সতর্ক করে দিত বা দূতাবাসের তরফ থেকে যদি আগে ওদের বের করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করত আজ এই অবস্থা হত না নিশ্চয়।’’ ভারী গলায় বললেন কান্তেশ। নবীন আমার আপন কাকার ছেলে, কাকা (নবীনের বাবা) কাজের জন্য অনেক সময় বাইরে থাকতেন। আমরা ছোটরা এক সঙ্গে থাকতাম। সেই ছোট থেকে আমি, হরিশ (নবীনের দাদা) আর নবীন এক সঙ্গে বড় হয়েছি, স্কুলে গিয়েছি। ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে কিছুটা থামলেন কান্তেশ। তারপর ভেজা গলায় বললেন, ‘‘আজ শুধু সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে ভাই আর নেই।’’
টিভিতে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখে নবীনের পরিবার শঙ্কিত হলেও, দুর্ঘটনার দিন দুয়েক আগেও নবীন জানান, তিনি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। খাবার ফুরিয়ে এলেও ওঁরা ব্যবস্থা করছেন কোনও মতে। তবে হামলার আশঙ্কা থাকলে বিপদঘন্টি সাইরেন বাজানো হচ্ছে বলে ফোনে পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন। ‘‘ও তো আগে বলেতো আমাদের গ্রামের মতোই নিরাপদ ইউক্রেন, কিন্তু তারপর শুরু হলো হামলা, দুর্ভাগ্য যে বাড়ি ফেরার আগে খাবার জোগাড় করতে ওকে বাঙ্কার থেকে বাইরে আসতে হল।’’ আফসোস কান্তেশের।
কান্তেশ জানান, তাঁদের পরিবারে ইঞ্জিনিয়র রয়েছে কিন্তু কোনও চিকিৎসক নেই। শুধু আমাদের পরিবার কেনও গ্রামেরই কেউ ডাক্তারি পড়েননি। তাই ছোট থেকেই নবীনের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। যদিও এখন এই গ্রাম থেকে তিন জন ইউক্রেনে জাক্তারি পড়তে গিয়েছেন। পড়াশোনাতেও ভাল ছিলেন নবীন। স্কুলের টপার নবীন ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়েও যখন এখানে ডাক্তারিতে সুযোগ পেলেন না তখন বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান কান্তেশ। বললেন ‘‘এখানে তো কোটি টাকা খরচ করে ডাক্তারি পড়তে হত। সেখানে ইউক্রেনে তুলনামূলক ভাবে খরচও কম, পরিকাঠামো অনেক ভাল।’’
ওখানেও ৩০ লক্ষ টাকার মতো খরচ এ দিক ও দিক থেকে ঋণ নিয়ে নবীনের পড়াশোনার খরচ চলছিল। কিন্তু গ্রামের মেধাবী ছাত্র ডাক্তার হয়ে ফেরার আগেই মৃত্যু হল বিদেশে।
মঙ্গলবার নবীন-সহ আট জন পোল্যান্ডের সীমান্তের দিকে রওনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সকালে খারকিভে যখন অন্য বন্ধুদের ঘুম ভাঙেনি তখন রাস্তায় খাওয়ার জন্য খাবার,জল কিনতে বেরিয়েছিলেন নবীন। কান্তেশ জানান ওই দিনই ১২.৩০ নাগাদ খারকিভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল নবীনদের। গত কয়েকদিন ধরে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন নবীন-সহ বেশ কিছু ভারতীয় পড়ুয়া। ওখান থেকে ফোনে পরিস্থিতির খবরাখবর পাঠাতেন বলে জানালেন কান্তেশ। বললেন, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তো যখন তখন খাবার কিনতে যাওয়া যায় না। কিন্তু সীমান্তের দিকে রওনা দেওয়ার আগে রাস্তায় খাবার মতো রসদের প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়াও কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করতে গিয়ে ছিল নবীন।’’ পাশের মল থেকে খাবার কিনে, রাস্তায়র টাকার প্রয়োজন হতে পারে ভেবে ও কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করারও চেষ্টা করছিল বলে জানতে পেরেছেন কান্তেশ। তখনই ঘটে ক্ষেপাণাস্ত্র হামলা। মৃত্যু হয় নবীনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy