বিদায়: বিহারে মহাজোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে নীতীশ কুমার। বুধবার পটনায়।
শনিবার রাতে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ সেরেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তার পর একশো ঘণ্টাও কাটল না, ‘মহাজোট’ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন নীতীশ কুমার। ফের গাঁটছড়া বাঁধলেন বিজেপির সঙ্গে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজভবনে নতুন করে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। সঙ্গে বিজেপি-র সুশীল মোদী। নীতীশের নতুন সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন সুশীল।
বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন নীতীশ। আর তার দশ মিনিটের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী টুইট করে অভিনন্দন জানান তাঁকে। বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনাকে স্বাগত’। রাজ্য বিজেপি-ও তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেয়, নীতীশ ফের সরকার গড়লে তারা নিঃশর্ত সমর্থন দিতে তৈরি। রাতেই নীতীশের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির পদস্থ নেতারা। গভীর রাতে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় ফের নীতীশের শপথ। উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির সুশীল মোদী। তাদের ১৩ জন বিধায়ক মন্ত্রী হবেন বলে খবর। আর নীতীশের দল জেডিইউ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও আসছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আজ শপথ নেবেন নীতীশ, সঙ্গী সুশীলও
বিহারের রাজনীতিকদের অনেকে বলছেন, চিত্রনাট্য মেনেই এগিয়েছে রাজনীতির পটপরিবর্তন। যে চিত্রনাট্য অনুযায়ী ঠিক মাহেন্দ্রক্ষণে পটনায় উপস্থিত বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়ে ইস্তফা দেওয়ার পরে শপথ নিতে পটনা গিয়েছিলেন ত্রিপাঠী। তার পর গত এক মাসে আর এমুখো হননি। কিন্তু রামনাথের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মঙ্গলবারই দিল্লি থেকে পটনায় আসেন তিনি। আর বুধবার তাঁর হাতে পদত্যাগপত্র দিলেন নীতীশ। যদিও রাজ্যপালের অফিস থেকে বলা হচ্ছে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে আজ তাঁর পটনাতেই থাকার কথা আগাম ঠিক ছিল।
সঙ্গে ছিলেন কেন, সাংবাদিক বৈঠকে নীতীশকে প্রশ্ন লালুর।
২০০৫ সালে এনডিএ-তে যোগ দিয়েছিলেন নীতীশ। ২০১৩-তে মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মনোনীত হওয়ার পরে তিনি বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করেন। অনেকেই বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন নীতীশ। সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় মোদীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে জোট ছাড়েন। এর পরে ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে লালু ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি-কে ধরাশায়ী করা। কিন্তু সেই সরকার পড়ে গেল ২০ মাসের মধ্যে। বিজেপির কাছেই ফিরলেন ‘ঘরের ছেলে’।
জেডিইউয়ের শীর্ষ সূত্র অবশ্য দাবি করছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ইস্তফা দেওয়ার পরিকল্পনা নীতীশের ছিল না। আগের রাতে লালুকে ফোন করে তিনি বলেন, দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, লালু বা তেজস্বী নিজে প্রকাশ্যে তার ব্যাখ্যা দিন। লালু তখনই অশনি সঙ্কেত দেখেন। নীতীশের একরোখা মনোভাব আঁচ করেই বুধবার আরজেডি বিধায়কদের বৈঠক ডাকেন তিনি। বৈঠক শেষে জানান, তেজস্বী ইস্তফা দেবেন না। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘মহাজোট গঠন করে আমিই নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করেছি। কী ভাবে সরকার চালাবেন সেটা তাঁর দায়িত্ব।’’ লালুর মন্তব্যই সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করল বলে জেডিইউ নেতৃত্বের দাবি।
লালুর সাংবাদিক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিষদীয় দলের জরুরি বৈঠক ডাকেন নীতীশ। বৈঠক শেষে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। রাজভবন থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘অন্তরাত্মার ডাকেই ইস্তফা দিলাম।’’
তেজস্বী প্রসঙ্গে এই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুলে নীতীশ বলেন, ‘‘আমি ওঁর ইস্তফা চাইনি। যা হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম।’’ রাহুল গাঁধীকেও কার্যত কটাক্ষ করেছেন নীতীশ। বলেছেন, “ওঁকেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আটকাতে মনমোহন সরকারের অর্ডিন্যান্স প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলতে বলেছিলেন কেন?”
নীতীশের ইস্তফার খবর পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা খুনের মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লালু। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগ থাকা মানেই কি নীতীশ দোষী?’’ সব শেষে নীতীশের উদ্দেশে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত লালুর অমোঘ প্রশ্ন, ‘‘নীতীশ যদি এতই নীতিবাগীশ, তবে ২০১৫ সালে আমার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন কী ভেবে? ক্ষমতার জন্য?’’
ছবি: পিটিআই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy