বসুন্ধরা-সুষমা-স্মৃতি বিতর্কের মাঝেই অস্বস্তি বাড়ল নরেন্দ্র মোদীর। ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের মামলায় অভিযুক্ত হিন্দু জঙ্গিদের নিয়ে নরম মনোভাব নিতে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন সরকারি কৌঁসুলি রোহিনী সালিয়ান। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র তরফে তাঁকে এই চাপ দেওয়া হয় বলে দাবি রোহিনীর।
২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের ভার প্রথমে ছিল মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখার (এটিএস) হাতে। পরে ওই মামলার ভার নেয় এনআইএ। ক্রমশ এই ঘটনায় হিন্দু উগ্রপন্থী সংগঠনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। গ্রেফতার হন সাধ্বী প্রজ্ঞা, ভারতীয় সেনার অফিসার শ্রীকান্ত পুরোহিত-সহ বেশ কয়েক জন। ২০০৬ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ এবং অজমের শরিফ ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণেও এই হিন্দু জঙ্গিরা জড়িত বলে অভিযোগ করে এনআইএ। সাধ্বী প্রজ্ঞা সঙ্ঘ পরিবারের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন কর্মী। তাছাড়া এই মামলায় আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমারের নামও জড়িয়েছিল।
আজ মামলার প্রাক্তন বিশেষ সরকারি আইনজীবী রোহিনী সালিয়ান দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই মামলায় অভিযুক্ত হিন্দু জঙ্গিদের সম্পর্কে নরম মনোভাব নিতে তাঁকে চাপ দিতে শুরু করে এনআইএ। তাঁর কথায়, ‘‘এনআইএ-র এক অফিসার আমাকে বলেন, উপরওয়ালার ইচ্ছে অভিযুক্তদের সম্পর্কে নরম হয়ে চলা হোক। এর পরে ওই অফিসারই জানান, আমাকে ওই মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’’ ওই অফিসারের নাম করেননি রোহিনী। তাঁর প্রাপ্য টাকা নিয়েও এনআইএ-র সঙ্গে বিবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন সরকারি কৌঁসুলি।
২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের মামলায় এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি এনআইএ। জামিন পেতে কিছু দিনের মধ্যেই বম্বে হাইকোর্টে আর্জি জানানোর কথা অভিযুক্তদের। এই পরিস্থিতিতে রোহিনীর দাবি স্বাভাবিক ভাবেই বিপাকে ফেলেছে এনআইএ তথা কেন্দ্রকে। ললিত মোদী কাণ্ডে অক্সিজেন পেয়ে যাওয়া কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়েও আজ কেন্দ্রকে তোপ দেগেছে। জরুরি অবস্থার ৪০ বর্ষপূর্তি নিয়ে কংগ্রেসকে পাল্টা বিঁধতে চাইছে বিজেপি। আজ আবার সেই সূত্র ধরেই কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বলেন, ‘‘মোদী জমানায় অঘোষিত জরুরি অবস্থার এটা একটা নজির। বিজেপি-আরএসএস অনেকদিন ধরেই এই মামলায় অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করে আসছে।’’ তাঁর দাবি, এখনই রোহিনীকে নিজের পদে ফের বহাল করতে হবে। সরাতে হবে এনআইএ-র ডিজি-কে। এই মামলাটি উচ্চ আদালতের নজরদারিতে পাঠাতে হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ আসতেই তার পাল্টা জবাব দিতে আসরে নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি কৌঁসুলিকে কোনও ভাবেই ঢিলেমি করতে বলা হয়নি। মার্চ মাসেই তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাঁর হিসেবপত্র নিয়ে কিছু টানাপড়েন চলছে বলেই হয়তো তিনি এই ধরণের মন্তব্য করছেন। এনআইএ-ও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের কোনও অফিসার রোহিনীর কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। এখনও ওই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়নি। বিশেষ সরকারি কৌঁসুলির আসল কাজ শুরু হয় চার্জশিট দেওয়ার পরে। সম্প্রতি যে সব বিশেষ কৌঁসুলি পাঁচ বছর বা তার কাছাকাছি সময় প্যানেলে আছেন তাঁদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় এনআইএ। সেক্ষেত্রে কৌঁসুলিদের কাজ, যোগ্যতা-সবই বিচার করা হয়েছিল। তখনই রোহিনী সালিয়ানকে সরানোর সুপারিশ করে মুম্বই শাখা। রোহিনীকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে এখন দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে কাজ চলছে।
এই মামলায় অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞার কৌঁসুলি পরভেশ খন্নার দাবি, ‘‘গোড়া থেকেই রোহিনী সালিয়ান অমানবিকতার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। স্বাধী প্রজ্ঞার উপর অত্যাচার হয়েছে। তাঁর ক্যান্সারও ধরা পড়েছে।’’ খন্নার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় জামিনের শুনানির জন্য মহারাষ্ট্র অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্টকে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও জামিন নিয়ে গড়িমসি করেছেন রোহিনী। নতুন সরকার এলে সব প্যানেলেই পরিবর্তন
হয়। এখন তাঁকে যেতে হবে বলেই ছটফট করছেন।’’
অনেকদিন ধরেই আরএসএস বলে আসছে, এই মামলায় নির্দোষ হিন্দুদের ফাঁসানো হয়েছে। তাদের দাবি, পি চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় তিনি নিজে তদারকি করতেন এই মামলাটি। যাতে হিন্দুদের আরও বিপাকে ফেলা যায়। আজ আরএসএসের মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের নেতা গিরীশ জুয়াল বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে তো সরকার এঁদের ফাঁসানোর জন্য সবরকম জোর লাগিয়েছিল। তাতেও কিছু করা যায়নি। কেউ দোষী হলে শাস্তি হোক। কিন্তু মামলায় যা দেরি হচ্ছে তাতে নির্দোষদের আটকে রাখার কোনও মানে হয় না।’’
বিজেপি নেতাদের দাবি, সরকার কোনও ভাবে তদন্তে হস্তক্ষেপ করছে না। যদি রোহিনী এতটাই বিরক্ত, তাহলে যে এনআইএ অফিসার তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন তাঁর নাম করলেন না কেন? যিনি গোটা কেন্দ্রীয় সরকারের বদনাম করছেন, তাঁর
এক জন অফিসারের নাম করতে অসুবিধে কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy