মহারাণা প্রতাপ
মোট ১৮২টি পাঠ্যবই। পরিবর্তনের সংখ্যা ১৩৩৪। শুধু সমাজবিজ্ঞানেই ৩১৬টি। যার অধিকাংশ পরিবর্তনই ঘটেছে ইতিহাসের পাঠ্যে। এনসিইআরটি’র পাঠ্যবইয়ে নতুন এ সব পরিবর্তন নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ওই সব পাঠ্যবইয়ে অনেক বেশি জায়গা পেয়েছে ঋষি অরবিন্দের পরবর্তী জীবন, বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতা, পেশোয়া বাজিরাও বল্লালের হার না মানা মনোভাব, জাঠ রাজা সুরজ মলের সাহস, রাজপুত রাজা মহারাণা প্রতাপের বীরত্ব, ছত্রপতি শিবাজীর রাজত্ব। বিরোধীদের একাংশের ব্যাখ্যা, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কোনও কোনও ব্যক্তিত্বকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিজেপি। তা তাঁদের কর্মকাণ্ডের জন্য নয়, ধর্মীয় দিকটি তুলে ধরার জন্য। এনসিইআরটি’র পরিবর্তিত বইয়েও সে বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে।
আর ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য, এর কোনও কিছুই অনৈতিহাসিক নয়। তবে স্কুলপাঠ্য তৈরির সময় সার্বিক ভারতের চিত্র তৈরি করার চেষ্টা চালানো হয়। প্রাদেশিক কিংবা ব্যক্তিনির্ভর ইতিহাসকে গুরুত্ব দিলে তা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের বলেন, ‘‘যাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাঁদের অনেকেই স্কুলপাঠ্যে ঢোকানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নন। নাম ঢোকানোর কায়দা দেখলেই বোঝা যায়, এর পিছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’’ তবে এর মধ্যেও একটি সদর্থক দিক পেয়েছেন হাবিব। জানিয়েছেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রাচীন ভারতে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারির ইতিহাস খুঁজে বার করতে পারেন, সেখানে এমন পরিবর্তন স্বাভাবিক।
ইতিহাসবিদ সুগত বসু অবশ্য বিষয়টিকে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করতে চাইছেন। তাঁর মতে, বরাবরই এ দেশের স্কুলপাঠ্য ইতিহাসে সামঞ্জস্যের অভাব। বর্তমান রাষ্ট্রশক্তিও ব্যতিক্রম নয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদের মতবাদ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘একটা বিশেষ মতবাদ পড়ানোর চেষ্টা চলছে। ফলে ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না। আবার যাঁদের নিয়ে কথা হচ্ছে, অতীতে তাঁদের সাম্প্রদায়িক বলে বাদ দিয়ে দেওয়া হত। সামঞ্জস্য জরুরি। আমি নিজেই অরবিন্দকে নিয়ে কাজ করেছি। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষরা যে অরবিন্দকে ঠিক মতো বুঝতে পারেননি, সেটি সেখানে স্পষ্ট।’’ তবে একইসঙ্গে সুগতের বক্তব্য, মহারানাপ্রতাপ কিংবা বাজিরাওদের নিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আর এর ফলে মার খাচ্ছে মুঘল ইতিহাস।
আরও পড়ুন: বেরোল ফল, নিটে থাকতে নারাজ বাংলা
পরিবর্তনের বিষয়টি জানা ছিল না সমাজবিজ্ঞানী দীপেশ চক্রবর্তীর। সরাসরি না জড়ালেও বিষয়টিকে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চেয়েছেন দীপেশ। বলেছেন, ‘‘জাতীয়তাবাদের ইতিহাস একটি রাজনৈতিক বিষয়। ক্ষমতাসীন দল তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার চাইবে, সেটা আশ্চর্যের নয়। উন্নত গণতন্ত্রে ইতিহাস বা পাঠ্যপুস্তক রচনায় সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করে না। আমাদের বাস্তব হল, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার তা করে। তথ্যের বিকৃতি বা ভ্রান্তি না হলে এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব না হলে নালিশের সুযোগ কম। নইলে জাতীয়তাবাদী ইতিহাস সর্বত্রই বিতর্কিত বিষয়। বিতর্কের মাধ্যমেই বিষয়টি গবেষণাপুষ্ট হয়ে ওঠে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy