নওয়াজ শরিফ। ফাইল ছবি।
চার বছর আগের মে মাসে নওয়াজ শরিফ যখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন, ভারতে ইউপিএ সরকারের তখন প্রায় বেলাশেষ। সেই শেষ বছরটিতেই পাকিস্তান সফরে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। পাক-প্রশ্নে সাউথ ব্লকে তখন আশার আবহাওয়া। কিন্তু প্রত্যেক বারই যখন শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় এই প্রসঙ্গ উঠত, তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মনমোহনকে নিবৃত্ত করে বলতেন, ‘পাকিস্তান নিয়ে রোমান্টিসিজমের কোনও অবকাশ নেই।’ আজ যখন পানামা কাণ্ডের জেরে তখত খোয়ালেন পাকিস্তানের পাঞ্জাবি নেতা নওয়াজ, সাউথ ব্লকের কাছে প্রণববাবুর ওই মন্তব্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে ফের।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ এসে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিলেন। গত চার বছরে মোদীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত রসায়ন বারবার সামনে উঠে এসেছে সেটাও সত্যি। কিন্তু কঠোর বাস্তব এটাই যে, নওয়াজের এই দফার শাসনকালেই ভারত-পাক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। ঘরোয়া ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, নওয়াজের বিদায়ের পরে তাঁর পরিবার বা দলের অন্য কোনও নেতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেও দু’দেশের সম্পর্কে আদৌ ইতরবিশেষ হবে বলে মনে করা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে ভারতীয় চ্যানেলে নওয়াজ যা যা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তার সব ক’টিই মাটিতে আছড়ে পড়েছে। নওয়াজ কথা দিয়েছিলেন, ২৬/১১-র ঘটনায় আইএসআইয়ের ভূমিকার তদন্ত করাবেন। কার্গিল তদন্তের সমস্ত তথ্য দেবেন ভারতকে। ভারত-বিরোধী বা অন্য কোনও রকম সন্ত্রাসের কাজেই পাকিস্তানের জমিকে ব্যবহার করতে দেবেন না। এমনকী নিয়ন্ত্রণ করবেন হাফিজ সইদকেও। সর্বোপরি যৌথ ভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন। নওয়াজের পক্ষে বাস্তবে এ সবের কতটা করে ওঠা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল প্রথম থেকেই। চার বছর পরে এখন তো এটা প্রমাণিত সত্য যে, ওই প্রতিশ্রুতিগুলি ছিল নিছকই ফাঁকা আওয়াজ। উল্টে নওয়াজেরই জমানায় উরি, পঠানকোটে হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রবল অবনতি ঘটেছে কাশ্মীর পরিস্থিতির। চিনের সঙ্গে নতুন অক্ষ গড়ে বারবার ভারতকে বেজিং-জুজু দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদ।
তবে কূটনীতিকরা এটাও মানছেন যে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নওয়াজ ক্ষমতায় আসার পরে সাউথ ব্লকে কিছুটা হলেও আশা জেগেছিল যে, এই সরকার হয়তো পাক সেনাবাহিনী তথা আইএসআই-এর প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে খানিকটা সক্ষম হবে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সেতু গড়তে পারবেন নওয়াজ। কারণ আগেও প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে সেনা এবং মোল্লাতন্ত্রের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে নওয়াজ লাহৌর বাসযাত্রা করিয়েছিলেন। সেটা ১৯৯৯ সাল। কিন্তু এর জন্য হাত পোড়াতে হয়েছিল তাঁকে। নওয়াজের সেই ‘ভারত-প্রেমের’ প্রতিক্রিয়ায় মাথা তোলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ।
নওয়াজ যে সেই স্মৃতি ভোলেননি, সেটাই বারবার প্রমাণিত হয়েছে গত কয়েক বছরে। মুখে যা-ই বলুন, কার্যক্ষেত্রে দেশের ভিতরের সমীকরণ মাথায় রেখেই ভারত-নীতি রচনা করেছে তাঁর তৃতীয় দফার সরকার। ফলে নওয়াজের বদলে এখন যিনিই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোন, বকলমে তিনি পাক সেনা, মোল্লাতন্ত্র এবং আইএসআই-এর আজ্ঞাবহ হবেন— এমনটাই মনে করছে নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy