রাহুল গাঁধী এবং হার্দিক পটেল
গাঁধীর ছবি দেওয়া কড়কড়ে নোট, ঘুষের অভিযোগ, লুকনো বৈঠক, গব্বর সিং কর, হা হা হা হা, ড্রামাবাজ নম্বর ওয়ান, আন্টি নম্বর ওয়ান— উৎসবের মরসুম শেষ হতেই জমজমাট নাটক ফিরে এল গুজরাতের ভোটে।
প্রথম বোমাটি ফাটালেন হার্দিক পটেলের সহযোগী নরেন্দ্র পটেল। নতুন নোটের দশ লক্ষ টাকা সাংবাদিকদের সামনে রেখে বললেন, এটা এক কোটি টাকা ঘুষের প্রথম কিস্তি। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য। এর পরেই নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন, ‘‘আমিও নরেন্দ্র, আপনিও। আপনাকে চ্যালেঞ্জ, আমার আওয়াজ বন্ধ করে দেখান।’’
মোদীর রাজ্যে এই সাহস এ যাবৎ কেউ দেখাতে পারতেন না। ব্যাপারটা ধাপে ধাপে বাড়ছে, যখন থেকে রাহুল গাঁধী সক্রিয় হয়েছেন। বিস্ফোরণ ঘটতেই তা লুফে নিলেন রাহুল। বললেন, ‘‘১ কোটি, ১০ কোটি, ৫০ কোটি, ১০০০ কোটি, দেশের গোটা বাজেট, দুনিয়ার সব টাকাপয়সা দিয়ে দিলেও গুজরাতের আওয়াজ কেনা যাবে না। গুজরাত অমূল্য। নরেন্দ্র মোদী আসলে ভয় পেয়েছেন, তাই গুজরাতের আওয়াজ কিনতে চাইছেন। এত দিন বলতেন— খাবেনও না, খেতে দেবেনও না। আর এখন খাওয়াতেও শুরু করেছেন। অমিত শাহের ছেলের ব্যবসা নিয়ে তিনি চুপ।’’ রাহুল বলেন, ‘‘মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকেও দমনের চেষ্টা করেছিল ইংরেজ। আর সেই সময়ের সুপার পাওয়ারকে ভারত থেকে তাড়িয়েছিল গুজরাত।’’
আজ গুজরাতে পা দিয়েই একটি পাঁচতারা হোটেলে রাহুল বৈঠক করেন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়া তরুণ নেতাদের সঙ্গে। এর মধ্যে অল্পেশ ঠাকোর আজই কংগ্রেসে যোগ দেন। হার্দিক পটেলের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন নিখিল সোয়ানি। তিনিও আজই মোদীর দল ছেড়েছেন। সঙ্গে জোর জল্পনা এই হোটেলে রাহুলের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে হার্দিকের। দুই পক্ষ তা অস্বীকার করলেও হার্দিককে সেই হোটেলেই কাল রাত থেকে থাকতে দেখা গিয়েছে। এর পরেই গাঁধীনগরের সভায় রাহুল অল্পেশ, হার্দিকদের নাম করেন। বলেন, ‘‘তরুণ নেতাদের থামানো যাবে না, মোদী সবাইকে অশান্ত করেছেন।’’
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের দু’নম্বরে আস্থানা, শুরু বিতর্ক
এই তরুণ নেতারা সঙ্গ দিলে জাতপাতের অঙ্কে কংগ্রেস এগিয়ে যাবে— এই আশঙ্কায় তড়িঘড়ি পাল্টা রণনীতি ঠিক করতে নামেন অমিত শাহ। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের জবাব দিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে নামানো হয় দিল্লিতে। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে নয়ের দশকে ‘আন্টি নম্বর ওয়ান’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’ সিনেমা হতো— সে ভাবেই কংগ্রেস এখন ‘ড্রামাবাজ নম্বর ওয়ান’। কংগ্রেস শিবিরের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া গুজরাতের তরুণ নেতাদের গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি। আর ঘুষের টাকার অভিযোগ নিয়ে রবিশঙ্করের প্রশ্ন, ‘‘এক কোটি টাকাই যদি দেওয়া হয়, বাকিটা কোথায় গেল?’’
তালমিল: গাঁধীনগরের এক জনসভায় কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
গুজরাতে রাজ্যসভার ভোটের সময়েও কংগ্রেস বিধায়কদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু মোদী সরকারের আয়কর দফতর হানা দেয় কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধেই। আর আজ ফের কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে গুজরাত সরকারের পুলিশি সক্রিয়তার অভিযোগ এনেছে। দলের তরফে গুজরাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অশোক গহলৌত সকালে হার্দিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরেই রাহুল ও হার্দিক যে হোটেলে ছিলেন, সংবাদ মাধ্যমে তার সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়ে যায়। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যের গোয়েন্দা দফতর এই ফুটেজ সামনে আনতে সাহায্য করেছে। গহলৌত যেখানে ছিলেন, সেখানেও খোঁজ শুরু করে পুলিশ। কংগ্রেসের ক্ষোভ, সিসিটিভি ফুটেজ সামনে নিয়ে আসা গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ।
এই জমিতেই মোদীকে নিশানা করে ফের তোপ দেগেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলেন টাটাদের ন্যানো কারখানার জন্য। সে ন্যানো এখন দেখা যায় না। অথচ সেই টাকা দিয়ে কৃষকদের ঋণ মাফ হয়ে যেত! আর জিএসটি হল- গব্বর সিং ট্যাক্স। নরেন্দ্র মোদী এটা গায়ের জোরে করেছেন। ঠিক যে ভাবে ‘হা হা হা হা’ বলে নোট বাতিল করেছেন তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy