হায়দরাবাদ–জেএনইউ কাণ্ডের পর যে উগ্র জাতীয়তাবাদকে মূলধন করে আক্রমণাত্মক লাইন নিয়েছিল বিজেপি, এখন নরেন্দ্র মোদী সেই রাজনৈতিক লাইনে ধীর গতিতে পরিবর্তন আনতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। আর সেই উগ্র জাতীয়তাবাদের বদলে বিজেপি সামনে তুলে ধরছে ‘গরিব মানুষের বাজেট’কে।
স্মৃতি ইরানিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, লোকসভায় আক্রমণাত্মক বক্তৃতা গিয়ে দলের অবস্থান তিনি তুলে ধরেছেন ঠিকই। কিন্তু, এখন এটাকে আর খুব বেশি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি, স্মৃতি ইরানির সঙ্গে বসপা নেত্রী মায়াবতীর বিরোধের পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্মৃতিকে পরামর্শ দেন, আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মায়াবতীকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য কোরো না। মুলায়ম-প্রতিরোধে ভবিষ্যতে মায়াবতীকে বিজেপি-র প্রয়োজন হতে পারে।
শুধু স্মৃতি নন, বিজেপি-র অন্য বহু নেতাই স্মৃতিকে অনুকরণ করে বিভিন্ন রাজ্যে আক্রমণাত্মক ভাবে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদেরকেও নিরস্ত করা হয়েছে। কিন্তু, কেন বিজেপি এই কৌশলের পরিবর্তন আনছে? বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বললেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল জেএনইউ বিষয়ে আক্রমণাত্মক লাইন নেওয়া হলে দলের রাজনৈতিক ফায়দা হবে। আরএসএস তথা সংঘ পরিবারের সে ব্যাপারে সমর্থন ছিল। কিন্তু, ক্রমশ দেখা গেল এর ফলে রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস এবং বামপন্থীরাও জাতীয় রাজনীতিতে আরও পরিসর পেতে শুরু করেছে।’’ অরুণ শৌরির মত নেতারাও বলেই দেন যে, এর ফলে মৃত কংগ্রেস আর কমিউনিস্টকে বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে।
বিজেপি-র মনে হয়েছিল যে, এই আক্রমণাত্মক প্রচারে আরও বেশি করে মেরুকরণ হবে। পাশাপাশি, এতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে এবং তার পর উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপি-র রাজনৈতিক ফায়দা হবে। অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কর প্রমুখ নেতারা বলেছিলেন, ‘‘আমরা সন্ত্রাসবাদ এবং দেশাত্মবোধের প্রশ্নে সহিষ্ণু হতে পারছি না। কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেসরা হচ্ছেন।’’ অনুপম খেরের মত বিজেপি সমর্থক তো বলেই দেন, জেএনইউ নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরশোলা মারার ওষুধ দেওয়া হয়েছে! যার জন্য চারদিক থেকে আরশোলা বের হতে শুরু করেছে! বিজেপি-র ধারণা ছিল, বাজপেয়ী জমানায় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। সেই কারণে তাঁরা এই উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচারক হতে পারেনি। কিন্তু, এখন সংঘপরিবারের ডিএনএ অনুসরণ করে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারে থাকার সুবাদে আরও আক্রমণাত্মক লাইন নেবে। কিন্তু, গোটা দেশ জুড়ে নাগরিক সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমের প্রচার দেখে এমনকী ভারতীয় শিল্প জগৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দেখে বিজেপি নেতৃত্বের মনে হয়, এক কদম এগিয়ে এ বার দু’কদম পিছোনোর রণকৌশল নেওয়াই শ্রেয়। কিন্তু, বিজেপিএই মুহূর্তে এই ধারণাটাও প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না যে, মেকি বামপন্থী ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্বকে খারিজ করে, জাতীয়তাবাদী লাইনকে প্রতিষ্ঠা করার কৌশল থেকে তারা ডিগবাজি খাচ্ছে। সেই কারণে খুব ধীর গতিতে বাজেটের অস্ত্র দিয়ে গোটা দেশ জুড়ে বিজেপি এক নতুন প্রচার অভিযান শুরু করছে, যার বিষয়বস্তু হল ‘মোদী সরকার গরিবের সরকার’। কৃষক এবং গরিব মানুষদের স্লোগান তুলে রাজ্যে রাজ্যে এক নতুন প্রচার অভিযান শুরু করা হবে, ঠিক যেমনটা ইন্দিরা গাঁধী করেছিলেন ‘গরিবি হঠাও’-এর মাধ্যমে।
দলীয় কৌশলে এ এক নিঃশব্দ রূপান্তর পর্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy