দিল্লি পুরভোটে জয়ের পরে আপ নেতাদের সঙ্গে কেজরীওয়াল। ছবি: পিটিআই।
প্রচারপর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করে গেলেও দিল্লির পুরভোটে প্রথম বার জয়ের পর সে পথ মাড়ালেন না অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বুধবার গণনার ফল স্পষ্ট হতেই সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধানের মন্তব্য, ‘‘আমাদের দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে, দিল্লিকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। দিল্লির উন্নয়নে আমি কেন্দ্রের সাহায্য এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আশীর্বাদ চাইছি।’’
তার পরই দিল্লির আমজনতার উদ্দেশে কেজরীর বার্তা— ‘‘এই জয় মানুষের জয়। যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। যাঁরা আমাদের ভোট দেননি, আমরা প্রথমে তাঁদের উদ্বেগের জায়গাগুলি খতিয়ে দেখে সমাধানের চেষ্টা করব।’’ সেই সঙ্গে দিল্লিবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আপ প্রধান বলেন, ‘‘আই লাভ ইউ দিল্লি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শুধু জয় নয়, এটা বড় দায়িত্ব।’’
অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষায় আপের বিপুল জয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও বুধবার ভোটগণনা শুরু হওয়ার পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আপ এবং বিজেপি প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গিয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগোতে থাকে কেজরীর দল। বেলা যত বাড়তে থাকে বিজেপির সঙ্গে জয়ের ব্যবধানও ততই চওড়া হতে থাকে। বিকেল গড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ১৫ বছর পরে দিল্লি পুরভোটে হারতে চলেছে বিজেপি।
২০১৭ সালে দিল্লির তিন পুরসভা মিলিয়ে মোট ২৭২ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮৩টিতে জিতেছিল বিজেপি। কয়েক যোজন দূরে থেকে মাত্র ৪৪টি ওয়ার্ডে জয় পায় জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের শাসকদল আপ। কংগ্রেস জিতেছিল ৩০টিতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিল্লির ৭টি আসনের সব ক’টিতে জিতলেন। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ে পদ্ম শিবির। এ বার সদ্য-সংযুক্ত তিন পুরসভার ভোটেও হারল তারা। কী ভাবে এই ‘ম্যাজিক’ করল আপ? দেশজোড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে হওয়া দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেই ধাক্কা খেয়েছিল বিজেপি। ২০২০ সালের ওই বিধানসভা ভোটে রাজধানীর ৭০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৮টি জিতেছিল বিজেপি। ৬২টি আসনে জিতেছিল আপ।
আপের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সেই ফলাফলের পর থেকেই দু’বছর পরের দিল্লি পুরভোট নিয়ে কৌশল তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। দিল্লি সরকারের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাকে হাতিয়ার করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছনোর পাশাপাশি নিশানা করেছিলেন দেড় দশক ধরে পুরসভার ক্ষমতায় থাকা বিজেপির ‘নাগরিক পরিষেবার ব্যর্থতাকে’। বিশেষ করে জঞ্জাল সাফাই এবং যমুনা দূষণ নিয়ে বারে বারেই পুর কর্তৃপক্ষকে ‘কাঠগড়ায়’ তুলেছেন কেজরী ও তাঁর দল।
এ বারের পুরভোটে কার্যত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকারের’ স্লোগান ধার করেই দিল্লির উন্নয়নের জন্য বিধানসভা ও পুরসভায় এক দলকে ক্ষমতায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন কেজরী। গত ৭ বছরে তাঁর সরকারের আমলে দিল্লির স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় যে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে তা তুলে ধরেছিলেন আমজনতার কাছে।
অন্য দিকে, বিজেপির তরফে কেজরী সরকারের ‘আবগারি দুর্নীতি’ এবং জেলবন্দি মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে বেআইনি সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে প্রচার চালানো হয়েছিল। পদ্ম-শিবির গোপন ক্যামেরায় সত্যেন্দ্রর ‘পা টেপানোর’ ভিডিয়ো ‘ফাঁস’ করছে, কেজরী তখন বলেছেন, ‘‘ওদের (বিজেপি) মানুষ ভোট দিয়েছিল পুর পরিষেবা পেতে, আর এখন পাচ্ছে স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো!’’ এক দশক আগে অন্না হজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সওয়ার হয়ে রাজনীতিতে আসা প্রাক্তন আমলার এমন মন্তব্যের ‘জবাব’ শেষ পর্যন্ত আর খুঁজে পাননি মোদী-শাহেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy