মনসুখ মাণ্ডবিয়া। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান বা দিল্লির মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্য তো বটেই, মোদী সরকারের তথাকথিত বন্ধু রাজ্য বলে পরিচিত ওড়িশা, তেলঙ্গানা কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশেও প্রতিষেধকের আকাল। বাড়তি টিকা চেয়ে গত কাল প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সরব হয়েছিলেন বিজেপি-শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। অথচ টিকা চেয়ে রাজ্যগুলির এই হাহাকারকে ‘অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা’ বলে দিলেন সদ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মনসুখ মাণ্ডবিয়া। একই সঙ্গে টিকাকরণে অব্যবস্থার অভিযোগের দায়ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপরে চাপিয়ে দিলেন তিনি।
গোড়া থেকেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের টিকা-নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই অন্তত ছ’বার বদলেছে টিকা-নীতি। সরকারের লক্ষ্য, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আঠারো বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গের মতে, সেই লক্ষ্য ছুঁতে হলে রোজ অন্তত ৮০ লক্ষ টিকাকরণ হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে রোজ গড়ে ৩৪ লক্ষের কাছাকাছি টিকাকরণ হচ্ছে। এর জন্য দেশে টিকার অভাবকেই দায়ী করেছেন বিরোধীরা। বহু রাজ্য চাহিদা মতো টিকা না-পাওয়ায় টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতির চাপে অনেক রাজ্য শুধু বয়স্কদের এবং দ্বিতীয় ডোজ়ের গ্রাহকদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কথায়, ‘‘জুমলা আছে, কিন্তু প্রতিষেধক নেই।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আজ বিরোধীদের অভিযোগ খণ্ডন করতে নেমেছেন মনসুখ। টুইটারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘প্রতিষেধক পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার ও নেতাদের চিঠি এবং বিবৃতির কথা আমি জেনেছি। প্রকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করলে পরিস্থিতি ভাল বোঝা যায়। কেবল জনমানসে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই এই ধরনের অহেতুক কথা বলা হচ্ছে।’’ রাজ্যগুলি টিকা কম পাওয়ার যে অভিযোগ করেছে, তা-ও উড়িয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, গত জুন মাসে রাজ্যগুলিকে ১১.৪৬ কোটি টিকা পাঠানো হয়েছিল। জুলাই মাসে ১৩.৫০ কোটি টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। জুলাইয়ে কত টিকা রাজ্যগুলি পাবে, তা ১৯ জুন তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২৭ জুন ও ১৩ জুলাই ফের রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, পরবর্তী ১৪ দিনে তারা কত টিকা পাবে। তাই রাজ্যগুলি খুব ভাল করেই জানে যে, তাদের হাতে মাসের কোন দিনে কেন্দ্র থেকে কত টিকা পৌঁছবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যগুলি যাতে সুষ্ঠু ভাবে টিকা দিতে পারে, সেই জন্যই তাদের আগে থেকে টিকার সংখ্যা জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আগেভাগে তথ্য পাঠানো সত্ত্বেও যদি টিকাকরণ কর্মসূচিতে অব্যবস্থা হয়, তা হলে সেই সমস্যার দায় রাজ্যের।
বিরোধীদের অভিযোগ, গোড়া থেকেই সরকারের টিকা নীতিতে ভ্রান্তি ছিল। সরকার কেবল মাত্র দেশীয় টিকা সংস্থাগুলির উপরে ভরসা করে টিকাকরণে যাওয়ায় দেশ জুড়ে টিকার অভাব দেখা দিয়েছে। দেশীয় সংস্থাগুলির উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। এই সামান্য বিষয়টি অনেক দিন পরে বুঝতে পারে সরকার। তার পরেই বিদেশি প্রতিষেধক সংস্থাগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও টিকার জোগান বাড়েনি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘প্রতিষেধকের ঘাটতি এ বার মোদী সরকারের বন্ধু রাজ্য ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানাতেও। এই পরিস্থিতি সমাধানের উপায় হল, দ্বিগুণ হারে টিকা সংগ্রহ ও স্বচ্ছ ভাবে রাজ্যগুলিতে তা বণ্টন করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy