Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
maharashtra

Maharashtra Crisis: এই পাঁচ কারণেই একনাথ শিন্ডেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ল বিজেপি?

বালাসাহেবের একনিষ্ঠ ভক্ত একনাথ শিন্ডে ছিনিয়ে নিলেন বালাসাহেব-পুত্রের কুর্সি। অঙ্ক কষেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিল বিজেপি।

একনাথ শিন্ডে এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস।

একনাথ শিন্ডে এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২ ০৮:৪৭
Share: Save:

প্রশ্নটা ২২ বছর আগেই উঠেছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। ‘লেজ কুকুরকে নাড়াবে, না কি কুকুর লেজকে?’

বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহারের জেরে ভিপি সিংহের সরকারের পতনের পরে জনতা দল বিদ্রোহী নেতা চন্দ্রশেখরকে প্রধানমন্ত্রী পদে কংগ্রেস সমর্থন করার পরে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। ১৯৭ সাংসদের দল কংগ্রেস কেন দলছুট ৫৯ সাংসদের সমাজবাদী জনতা দলকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে দিল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, ‘বিশ্বাসঘাতক’ ভিপিকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য রাজীব গাঁধীর আকুলতা।

পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসাবে অনেক এগিয়ে থেকেও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বিদ্রোহী শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডেকে বিজেপির সমর্থনের পর দু’দশকের পুরনো সেই প্রশ্নটাই আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আর উঠে এসেছে তার বেশ কিছু উত্তরও।

প্রথমত, ২০১৯ সালে বিধানসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাপড়েনের জেরে উদ্ধব ঠাকরে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ছেড়ে হাত মিলিয়েছিলেন এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে। গড়েছিলেন নয়া জোট, ‘মহাবিকাশ আঘাডী’। তখন থেকেই ঠাকরে পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর ছিল পদ্মশিবির। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য ফডণবীসদের সামনে এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। কারণ, শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করা না হলে মহারাষ্ট্রে ‘অপারেশন পদ্ম’ ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ, সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বিদ্রোহী বিধায়কদের একাংশ ফের উদ্ধবমুখী হতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন তাঁরা। প্রয়াত বালাসাহেবের ছেলেকে ‘শিক্ষা’ দিতেই তাই মুখ্যমন্ত্রীর আসন শিন্ডেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অমিত শাহ, ফডণবীস এবং জেপি নড্ডা।

অমিত শাহ, ফডণবীস এবং জেপি নড্ডা। ফাইল চিত্র।

দ্বিতীয়ত, মরাঠা জনসমাজে প্রয়াত বালাসাহের ‘আবেদনও’ বিজেপিকে ‘আত্মত্যাগে’ বাধ্য করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে। অমিত শাহ-জেপি নড্ডাদের ‘অঙ্ক’ অতএব, শিন্ডের মতো এক জন পরিচিত শিবসৈনিককে কুর্সিতে বসানোর ফলে মরাঠা অসন্তোষের নিশানা হবে না বিজেপি। ক্ষমতাচ্যুত উদ্ধবের পক্ষেও বাবার নাম ব্যবহার করে সহানুভূতির হাওয়া তোলা কঠিন হয়ে যাবে।

তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক কালে কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিধায়ক কিনে ক্ষমতা দখল করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। মহারাষ্ট্রের মতো রাজনৈতিক ভাবে ‘স্পর্শকাতর’ রাজ্যে দলছুট নিয়ে জোট সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল করে ‘চক্রান্তের অংশীদার’ হতে চায়নি বিজেপি। বরং প্রথম থেকেই শিন্ডেদের বিদ্রোহের বিষয়টি ‘শিবসেনার ঘরোয়া সমস্যা’ বলে চিহ্নিত করেছে তারা। শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় সেই যুক্তি কিছুটা মান্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা। অনেকে মনে করছেন, এর ফলে বিজেপি ‘ক্ষমতালোভী’ ভাবমূর্তিও তৈরি হবে না। অথচ, বড় দল হওয়ার সুবাদে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি দখল করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সরকারি নীতিনির্ধারণের বিষয়টি।

একনাথ শিন্ডে এবং উদ্ধব ঠাকরে।

একনাথ শিন্ডে এবং উদ্ধব ঠাকরে।

চতুর্থত, ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটের পর এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বিদ্রোহী ভাইপো অজিতের সমর্থন পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন বিজেপির ফডণবীস। অজিত হন উপমুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এনসিপি পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরাতে ব্যর্থ হয়ে ৮০ ঘণ্টার মধ্যেই ইস্তফা দিতে হয়ে তাঁকে। অজিত ফের কাকার শিবিরে আশ্রয় নেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এ বারও মুখ্যমন্ত্রীর আসনের জন্য অনড় হয়ে থাকলে যে পরিস্থিতি ‘বদলে’ যেতে পারে, তার আঁচ পেয়েই শিন্ডেকে সামনে রেখে সরকার গড়তে রাজি হয় বিজেপি।

পঞ্চমত, দু’বছর পরের লোকসভা ভোট এবং আড়াই বছর পরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে বিজেপি মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে জনভিত্তি দৃঢ় করতে সক্রিয়। শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করা সেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বলেও শোনা যাচ্ছে। সে রাজ্যের দলিত ও সংখ্যালঘু ভোটের উপর এনসিপি, কংগ্রেস এবং অম্বেডকর প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনগ্রসর এবং আদিবাসী ভোটের পাশাপাশি পদ্ম-শিবিরের ‘নজর’ বালাসাহেবের গড়ে তোলা মরাঠা ভোটব্যাঙ্কে। এ ক্ষেত্রে শিন্ডেকে সামনে রেখে উদ্ধবের ‘পায়ের তলা মাটি’ কাড়াই তাদের মূল লক্ষ্য। সেই অঙ্ক মেনেই শুক্রবার সন্ধ্যায় হয়েছে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রথম পর্ব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy