মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিলেন একনাথ শিন্ডে। ছবি পিটিআই।
সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। আজ একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনীতির অনেকেরই মতে, সব দিক ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অমিত শাহের দল।
আড়াই বছর আগে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ঘিরে শিবসেনার সঙ্গে জোট ভেঙে গিয়েছিল শরিক বিজেপির। পরবর্তী ধাপে এনসিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাঁচ দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দেবেন্দ্র ফডনবীস। পাঁচ দিনের মাথায় ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। সংখ্যা না থাকা সত্ত্বেও তাঁর ওই ভাবে শপথ নেওয়া নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয় দলের মধ্যে। বিজেপি তথা দেবেন্দ্রকে ‘ক্ষমতালোভী’ বলেও সরব হন বিরোধীরা। আজ শিন্ডেকে এগিয়ে দিয়ে দেবেন্দ্রর সেই ‘ক্ষমতালোভী’ অপবাদ মুছতে আপাত ভাবে অনেকটাই সক্ষম হল বিজেপি। একই সঙ্গে ক্ষমতার রাশও নিজের হাতে রেখে দিতে পারল তারা।
বিহারে বিজেপি যেমন নিজেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও জেডিইউয়ের নেতা নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে, এ ক্ষেত্রেও সে ভাবেই পিছন থেকে কলকাঠি নাড়াতে পারবেন দেবেন্দ্ররা। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের পিছনে অল্প বিধায়কের সমর্থক থাকায় তিনি গোড়া থেকেই দুর্বল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ইনিংস শুরু করতে চলেছেন।
প্রথম আড়াই বছরে সরকারে ক্ষমতায় ছিল শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট। আগামী দিনে খাতায়কলমে মূল ক্ষমতা থাকছে বিক্ষুব্ধ শিবসেনা গোষ্ঠীর হাতে। ফলে ভবিষ্যতে এই সরকারের কোনও দুর্নীতি বা অনুন্নয়নের দায় এড়ানোও বিজেপির পক্ষে অপেক্ষাকৃত সোজা হবে।
তবে এই মুহূর্তে বিজেপি, বিক্ষুব্ধ শিবসেনা ও নির্দলদের বিধায়কের সংখ্যা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনেক বেশি হলেও বিজেপি শিবিরে আশঙ্কার চোরাস্রোত রয়েছে যে, বিক্ষুব্ধদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আগামী দিনে ফের ঠাকরে শিবিরে চলে যেতে পারেন। তাতে সরকার ফের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও হতে পারে। সে কারণেও নতুন করে আর বিজেপি মুখ পোড়াতে চাইল না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আগামী দিনে যদি বিক্ষুব্ধ শিবসেনার বড় অংশ ঠাকরে শিবিরে হাত মেলায় এবং সরকার পড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে বিজেপির কোনও দায় থাকবে না। তবে অনেকেই মনে করছেন, শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আগামী দিনে ঠাকরে শিবিরে যাওয়া কঠিন করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
গত কাল ইস্তফা দেওয়ার সময়ে বা গত ক’দিনের টানাপড়েনে যে ক’বার উদ্ধব ঠাকরে মুখ খুলেছেন, তাতে বালাসাহেবের উত্তরাধিকারীকে অপমান করার অভিযোগই তুলেছেন তিনি। তাই মুখ্যমন্ত্রী পদে বালাসাহেবের হাতে গড়া শিবসৈনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন অমিত শাহরা। তা ছাড়া সরকারের রাশ বিজেপির হাতে থাকলে বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের সঙ্গে দেবেন্দ্ররা বঞ্চনা করছেন বলে সরব হতে পারত ঠাকরে পরিবার। শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় কার্যত সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেল। দেবেন্দ্র নিজে প্রথমে এতে অখুশি হলেও পরে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে নেন।
আড়াই বছর আগে যখন বিজেপি ও শিবসেনার জোট ভাঙে, সে সময়ে দুই দলের পরিবর্তে দেবেন্দ্র ও উদ্ধবের ব্যক্তিগত অহং-এর লড়াইকে দায়ী করা হয়েছিল। দেবেন্দ্র দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, উদ্ধবের মনোভাবের কারণে জোট ভেঙেছে। আজ শিন্ডের মতো বিক্ষুব্ধ শিবসেনা নেতাকে ক্ষমতায় বসিয়ে বার্তা দেওয়া হল যে, শিবসেনার সঙ্গে দলগত ভাবে বিজেপির কোনও সমস্যা নেই। সমস্যার কেন্দ্রে ছিলেন উদ্ধবই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy