মানুষের পাশাপাশি পোষ্যদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে। ছবি সৌজন্য: এনডিআরএফ টুইটার।
টানা ১১ দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন কেরল। রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলাই জলের তলায়। আলাপুঝা, কোট্টায়ম, পালাক্কড়, ইদুকি, ত্রিশূরের মতো বহু জায়গায় এখন জলে-মানুষের লড়াই চলছে। রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে জায়গাগুলি, তার মধ্যে ত্রিশূরের নামও রয়েছে। যখন সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আকুতি করছে, ঠিক সেই সময় এই ত্রিশূরেরই এক এলাকায় ধরা পড়ল অন্য এক ছবি। উদ্ধারকারীরা বাড়ির মালিককে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। কিন্তু মালিক কিছুতেই বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না!
কেন?
জানা যায়, তাঁর বাড়িতে ২৫টি কুকুর রয়েছে। সেগুলোকে অকুলপাথারে ফেলে দিয়ে মোটেও বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। বাড়ি ছাড়তে হলে পোষ্যদের সঙ্গে নিয়েই ছাড়বেন।
প্রায় এক মানুষ সমান জল। প্রবল স্রোত বইছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বেশিরভাগই। গোটা ত্রিশূরের ছবিটা এখন এ রকমই। সেখানেই উদ্ধারকারীরা খুঁজে খুঁজে সুনীতার বাড়ির হদিশ পান। গিয়ে দেখা যায় বাড়ির বেশির ভাগটাই জলের তলায় চলে গিয়েছে। ঘরের একটা উঁচু জায়গায় সুনীতা, তাঁর স্বামী এবং ২৫টি পোষ্য কুকুর জবুথবু হয়ে বসে আছে। হু হু করে জল ঢুকছে বাড়িতে।
এনডিআরএফ জওয়ানরা উদ্ধার চালাচ্ছেন। ছবি সৌজন্য: এনডিআরএফ টুইটার।
উদ্ধারকারীরা সেখান থেকে সুনীতা ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেঁকে বসেন সুনীতা। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর পোষ্যদেরও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। উদ্ধারকারীরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও বিফল হন। উদ্ধারকারীদের ফেরত পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে খবর পেয়ে এক পশুপ্রেমী সংস্থার লোকজন সুনীতার বাড়িতে যান। তাঁদের প্রত্যেককেই উদ্ধার করেন। সুনীতা, তাঁর ও ছানাপোনাদের ঠাঁই আপাতত এখন ত্রাণ শিবিরে।
আরও পড়ুন: ত্রাণের জন্য হাহাকার, এরই মধ্যে আশার কথা, কেরলে কমছে বৃষ্টি
পশুপ্রেমী সংস্থার এক সদস্য স্যালি বর্মা বলেন, “সুনীতা তাঁর পোষ্যদের ছেড়ে আসতে চাইছিলেন না। যখন আমরা তাঁর বাড়ি পৌঁছই, তাঁর বাড়ি তত ক্ষণে পুরো জলের তলায়। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।”বর্মা আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সুনীতার বাড়িতে পোষ্যদের একটি আশ্রয়স্থল বানানো হবে।
সুনীতা একটা উদাহরণ। শুধু সুনীতার পোষ্যই নয়, গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে বহু রাস্তার কুকুর ও পোষ্যদের উদ্ধার করা হয়েছে। কখনও কোনও গাড়ির ভিতর থেকে, ফুটপাথ থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে সেই সব কুকুরকে। কোট্টায়ম থেকে ১৮টি কুকুর উদ্ধার করা হয় এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। বাড়িতে ১০ ফুট সমান জল। সেখান থেকেই উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় বাড়ির মালিক ও তাঁর পোষ্যদের।
আরও পড়ুন: মাছ বেচে ট্রোল হওয়া সেই ছাত্রী কেরলের বন্যায় দিলেন দেড় লাখ
এই সেই কেরল, বছর তিনেক আগেই নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল রাস্তার কুকুরদের। বহু বিতর্ক, ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছিল সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সালটা ২০১৫। সেই ঘটনার ঠিক তিন বছরের মাথায় সেই কেরলেই সম্পূর্ণ উল্টো ছবি দেখল দেশবাসী। কেরলের ভয়াবহ বন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকুদের বাঁচিয়ে সেই পাপক্ষালন করলেন কেরলবাসী!
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy