রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই এই চার্জশিট গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দাবি প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের। —ফাইল চিত্র।
দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করল দিল্লি পুলিশ।
জেএনএউ-তে যে সভা ঘিরে দেশবিরোধী স্লোগানের অভিযোগ উঠেছিল কানহাইয়াদের বিরুদ্ধে, সেই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর এই মামলায় চার্জশিট দিল পুলিশ। একে ‘রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে ধন্যবাদ দেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া। নিজেকে নির্দোষ বলে তাঁর দাবি, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই এই চার্জশিট গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যদিও পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার নয়াদিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে প্রায় বারশো পাতার ওই চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। এ দিন আদালত চত্বরে ওই দীর্ঘ চার্জশিট ট্রাঙ্কে ভর্তি করে নিয়ে আসেন পুলিশ আধিকারিকেরা।
Delhi: Police reaches Patiala House Court to file 1200-page chargesheet in 2016 JNU sedition case. pic.twitter.com/zN8H10Yr3J
— ANI (@ANI) January 14, 2019
২০১৬-র ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) চত্বরে সংসদ হামলায় দোষী আফজল গুরুর সমর্থনে এক সভার আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদেরা। বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র দাবি ছিল, জেএনইউ ক্যাম্পাসের ওই সভায় দেশবিরোধী স্লোগানদেন কানহাইয়া। পুলিশেরও দাবি, সেই সভায় দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছিলেন তিনি। যদিও কানহাইয়া বরাবরই বলেছেন, ওই সভায় কোনও দেশবিরোধী স্লোগান দেননি। এর পর দেশদ্রোহের অভিযোগে কানহাইয়া, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ ছ’জনকে গ্রেফতারও করে দিল্লি পুলিশ। তবে পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। ওই ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পুলিশ বিজেপি সরকারের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করে বিরোধীরা দলগুলি।
২০১৬-তে কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে দিল্লির রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল। —ফাইল চিত্র।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ ছাড়াও অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ সাত জন কাশ্মীরি পড়ুয়া— আকিব হুসেন, মুজিব হুসেন, মুনিব হুসেন, উমর গুল, রাইয়া রসুল, বশির ভট্ট এবং বশারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাদের হাতে উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে।
(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)
জেএনইউ ক্যাম্পাসের ওই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর এই মামলার চার্জশিট পেশ করল দিল্লি পুলিশ। চার্জশিট পেশ করতে এই দীর্ঘ সময় কেন লাগল? এই প্রশ্নের উত্তরে দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক জানিয়েছিলেন, এই মামলার তদন্তে বয়ান রেকর্ড করতে অন্য রাজ্যেও গিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ফলে তদন্ত শেষ করতে বেশ সময় লেগেছে। তা ছাড়া, এই মামলাকে জটিল বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি আসন সমঝোতা চূড়ান্ত, দাবি পওয়ারের
তবে এত দিন পর চার্জশিট দাখিল নিয়ে কানহাইয়ার কুমারের কটাক্ষ, “চার্জশিট গঠনের খবর সত্যি হলে আমি পুলিশ আর মোদীজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।” তাঁর দাবি, “প্রায় তিন বছর পর ঠিক নির্বাচনের আগে এই চার্জশিট দেওয়াতেই স্পষ্ট যে এটি রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।”
আরও পড়ুন: চার বছর ধরে লাগাতর ধর্ষণ, ভিডিয়ো রেকর্ড করে হুমকি খুড়তুতো দাদার
কানহাইয়ার মতো এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত উমর খালিদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি বলেন, “নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই নির্বাচনের এই বছরে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
দিল্লি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, এই মামলায় আরও ৩৬ জন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। তবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে কোনও সময় সমন পাঠাতে পারেন তাঁরা। ওই অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে সিপিআই নেতা ডি রাজার মেয়ে অপরাজিতা রাজার নামও।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy