সাংগঠনিক উপস্থিতি নেই। স্রেফ ইন্টারনেটকে হাতিয়ার করে যে ভাবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ভারতে সক্রিয়, তাতে প্রমাদ গুনছে কেন্দ্র।
ভারত তাদের আগামী লক্ষ্য বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আইএস। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইরাক-সিরিয়ার লড়াইয়ে অংশ নিতে ঘর ছেড়েছেন বেশ কিছু মুসলিম যুবক। ইতিমধ্যেই দেশের বারোটি রাজ্যে কম-বেশি আইএসের সমর্থকের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারেরা জানিয়েছেন, আইএস মতবাদে বিশ্বাসীর সংখ্যাটি এ দেশে খুব বেশি নয়। কিন্তু যে ভাবে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে পরিকল্পিত ভাবে আইএসের মৌলবাদী চিন্তাধারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তাই চলতি সপ্তাহেই আইএসের মৌলবাদী ভাবধারা ও জেহাদ প্রচারের অভিযোগে দু’টি ওয়েবসাইট ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে চলতি বছরে এই ধাঁচের প্রায় ৬০টির কাছাকাছি ওয়েবসাইট ভারতে বন্ধ করা হল। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এ দেশে সন্ত্রাস ছড়ানোর কাজে সক্রিয় ছিল।
এই সব ওয়েবসাইটে জঙ্গি মতবাদের খুল্লমখুল্লা প্রচার ছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কী ভাবে বোমা বানিয়ে নাশকতা ঘটানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল। গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার নজরদারির পরে ওই দু’টি ওয়েবসাইট এ দেশে ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ওই দুই ওয়েবসাইটের উপর নজর রেখে আসছিল কেন্দ্রের ইন্টারনেটে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ (সিইআরটি)। তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক দেশে জেহাদের মতাদর্শ ছড়ানোর অপরাধে ওই দু’টি ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়। ওই একই কারণে জম্মু-কাশ্মীরের এক অজ্ঞাত ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হয়েছে। সেটির মাধ্যমেও আইএসের ভাবধারা প্রচার করা হচ্ছিল। সূত্রের খবর, এ ছাড়াও এ ধাঁচের প্রায় গোটা পঁচিশেক ওয়েবসাইটের উপরে নিয়মিত নজর রাখছে সিইআরটি।
আইএসের জেহাদি ওয়েবসাইটগুলি বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা, জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য হল সংখ্যালঘু সমাজের কিশোর ও তরুণেরা। মূলত ভারতে যে সব রাজ্যে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত বা সরকারের দমননীতির শিকার হচ্ছেন সেই সব রাজ্যেই এই ওয়েবসাইটগুলির বেশি রমরমা দেখা যাচ্ছে। সিইআরটি সূত্র বলছে, অসম, জম্মু-কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র বা গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে ওয়েবসাইটগুলি সবথেকে বেশি দেখা বা লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যে যত বেশি সম্ভব তা ছড়িয়ে দেওয়ার। আর এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুককেও।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, ওয়েবসাইটগুলির বক্তব্যকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে থাকছে সংগঠনের মৌলবাদী চিন্তাধারা। আইএস কী এবং কেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা থাকছে। সেই সূত্র ধরেই ভারতেও সংখ্যালঘুরা কী ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছেন এবং তার প্রতিবাদে যে দিল্লির বিরুদ্ধে জেহাদে নামা উচিত সেই যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে ওযেবসাইটে। দ্বিতীয় অংশে থাকছে, কী ভাবে সহজলভ্য জিনিসের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব। সহজে বোমা বানানোর কৌশলের কী ভাবে এক বা দু’জনের মাধ্যমে বিস্ফোরণ বা হামলা চালানো যায় তার বিবরণ রয়েছে ওই ওয়েবসাইটে। এবং জেহাদের এই লড়াইতে সংখ্যালঘু যুবকদের স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy