চিনের মেগা যোগাযোগ প্রকল্প ‘ওবর’ (ওবিওআর)-এর পাল্টা হিসেবে এক সুপ্রাচীন সমুদ্রপথকে জাগিয়ে তুলতে সক্রিয় হলো ভারত। আর সেই কাজে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে চিনের সঙ্গে যুযুধান এক রাষ্ট্র— জাপান। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চলতি মাসের মাঝে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফরে এই প্রকল্পে সিলমোহর পড়তে চলেছে।
এই সমুদ্রপথের আনুষ্ঠানিক নাম ‘এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডর’ অথবা এএজিসি। মূল লক্ষ্য— ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে মুক্ত যোগাযোগ তৈরি করা, বাণিজ্যপথ ও মানুষের সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো। এই নতুন সমুদ্রপথে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হবে আফ্রিকার দেশগুলি ও দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এই প্রকল্পটি সফলভাবে রূপায়িত হলে তা অনেক কম খরচে বাণিজ্য সারতে পারবে। সড়ক পরিবহনের তুলনায় কার্বন নিঃসরণও অনেক কম হবে। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মায়ানমার, বাংলাদেশ, কাম্বোডিয়ার মতো দেশগুলি।
জাপান সম্প্রতি জানিয়েছে এএজিসি প্রকল্পে তারা ২০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে। উচ্চপ্রযুক্তি, পরিকাঠামো তৈরি ক্ষেত্রে তারা মূল দায়িত্ব নেবে বলে ভারতের সঙ্গে ইতিমধ্যেই জাপানের শীর্ষ পর্যায়ে কথা হয়েছে। দু’দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলিও আফ্রিকার পরিকাঠামো, শক্তি, কৃষিবাণিজ্য ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে উৎসাহী বলে জানাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক।
এই এএজিসি প্রকল্পের সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৬-র নভেম্বরে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে। তখনই কথা হয় এশিয়া ও আফ্রিকায় ভারত-জাপান যৌথ উদ্যোগে বাণিজ্যিক করিডর তৈরি করা হবে। সম্প্রতি গাঁধীনগরে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার মধ্যে আনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সূত্রের খবর, ১৩ তারিখ থেকে দিল্লিতে শুরু ভারত-জাপান বাণিজ্য বৈঠকে এএজিসি-র রূপরেখা ঘোষণা
করবেন মোদী-আবে। এশিয়া ও আফ্রিকায় চিনের বাণিজ্যিক একাধিপত্য স্থাপনের চেষ্টার পাল্টা চাল হিসেবেই কূটনৈতিক মহল। সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর জানান, ‘‘আমরা চাই এই এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডরের মতো উদ্যোগ আন্তর্জাতিক আইন মেনেই চলবে।’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট। ওবর থেকে ভারতের সরে দাঁড়ানোর কারণ— সেই প্রকল্প নিয়ে চিন ভারতের সঙ্গে আলোচনাই করেনি। অথচ কাশ্মীরের উপর দিয়ে গিয়েছে ওবর-এর প্রস্তাবিত বাণিজ্যপথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy