আরও বড় সঙ্ঘাতের সম্মুখীন হতে হবে সরকারকে, ইঙ্গিত স্পষ্ট রাহুল গাঁধীর। ছবি: প্রেম সিংহ।
সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন রাহুল গাঁধী। এই প্রথম বার ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। ১৬টি বিরোধী দলকে পাশে নিয়ে কংগ্রেস সহ-সভাপতি বুধবার ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন, সরকারের সঙ্গে আরও বড় সঙ্ঘাতে যাচ্ছেন বিরোধীরা। রাহুলের বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতির তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যই আমরা সংসদে তুলে ধরতে চাই। সরকার ভয় পেয়েছে। সেই কারণেই আমাদের বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
বুধবার অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে ১৬টি বিরোধী দলের নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। বিরোধীদের যদি আগে বলতে দেওয়া হয়, তা হলে সংসদ সচল রাখতে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে, এমনই সিদ্ধান্ত হয় বিরোধী দলগুলির বৈঠকে। কংগ্রেস সহ-সভাপতি তথা অমেঠির সাংসদ রাহুল গাঁধী লোকসভায় বিরোধীদের তরফে প্রথম বক্তা হবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সরকার পক্ষ লোকসভায় আগে বিরোধীদের বলতে দিতে রাজি হয়নি। সরকারের তরফে জানানো হয়, বিরোধীরা সরকার পক্ষকে অপদস্থ করার নতুন ছক কষেছেন বলে তাঁরা শুনছেন। রাহুল গাঁধীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর নাকি সংসদ আবার অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই রাহুল গাঁধীকে আগে বলতে দেওয়া হবে না। আগে সরকার পক্ষ নিজেদের বক্তব্য রাখবেন, তার পর রাহুল গাঁধী এবং অন্য বিরোধী নেতাদের বলতে দেওয়া হবে, জানানো হয় সরকারের তরফে। এতেই উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা সরকারের প্রস্তাব মানতে রাজি হননি। ফলে লোকসভা ফের অচল হয়ে যায়।
বিরোধী দলের নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল গাঁধীর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: প্রেম সিংহ।
এর পর তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এনসিপির তারিক আনোয়ার সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল গাঁধী যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই বিস্ফোরক মন্তব্যটি করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রত্যেকটি শব্দ মন দিয়ে শুনুন। আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতির তথ্য আছে। আমাদের সবার কাছে আছে। সেই তথ্যই আমরা সংসদে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু সরকার আমাদের বলতে দিল না।’’ রাহুল সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকেই আক্রমণ করেন এর পর। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়ে গিয়েছেন। সেই কারণেই সংসদে আসছেন না, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’ কংগ্রেস সহ-সভাপতির তোপ, গত এক মাস ধরে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চাইছেন বিরোধীরা, কিন্তু তিনি কিছুতেই সংসদে কথা বলছেন না। রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পপ কনসার্টে গিয়ে কথা বলতে পারছেন, কিন্তু সংসদে কিছুতেই মুখ খুলছেন না।’’
সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা নিয়ে প্রত্যেকটি বিরোধী দলই এ দিন সংসদে মুখ খুলেছে। রাহুল বিস্মিত ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘এই প্রথম বার দেখছি, সরকার আলোচনায় বাধা দিচ্ছে।’’
বিজেপি অবশ্য সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। দলের মুখপাত্র জিভিএল নরসিমহা রাও বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধী নিজেই নিজেকে হাস্যাস্পদ করে তুলছেন, তাঁর দল কংগ্রেসই সংসদের অচলাবস্থার জন্য দায়ী।’’ রাহুলকে আক্রমণ করে বিজেপি মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক মূল্য দিন দিন কমছে এবং তাঁর কৌতুক মূল্য বাড়ছে।’’
আরও পড়ুন: আডবাণীর রাশ টানতে প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি পদের
নোট বাতিল নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই উত্তাল সংসদ। বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে চেপে ধরতে এ সবের মাঝেই মনমোহন সিংহ সরকারের আমলের অগুস্তা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে হইচই শুরু করেছে মোদী সরকার। কিন্তু তাতে দমে যাওয়া দূরের কথা, আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে কংগ্রেস। মঙ্গলবারই কংগ্রেস একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এনে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজেপি নেতা কিরেণ রিজিজুর বিরুদ্ধে ৪৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। রাত না পোহাতেই কংগ্রেসের নিশানায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রী। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গাঁধী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারিক আনোয়ারদের ইঙ্গিত, অনেক দূর গড়াতে চলেছে এই জল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy