Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৪
Rupa Ganguly

রাতভর থানায় ধর্নার পর লালবাজারের লক আপ হয়ে জামিনে খালাস, রূপা কি ‘প্রাসঙ্গিক’ হতে পারলেন

অনেক দিন রাজনৈতিক আলোচনার বাইরেই ছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদকে নতুন করে পথে নামতে দেখা গিয়েছে বুধবার। রাতভর থানায় ধর্না দিয়ে গ্রেফতারও হন তিনি।

Why BJP leader Rupa Ganguly is in field politics after a long time

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০৪
Share: Save:

রূপা কি আবার ‘নেত্রীরূপেণ সংস্থিতা’? রাজ্যসভার সাংসদ পদের মেয়াদ ফোরানোর পরে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শারীরিক কারণও ছিল, আবার ২০২১ সালে কলকাতা পুরসভার ভোটের সময়ে নিজের দল বিজেপির সঙ্গে মনোমালিন্যও হয়েছিল তাঁর। পর্দার ‘দ্রৌপদী’ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় অনেক দিন পর আবারও একটু একটু করে প্রত্যক্ষ রাজনীতির অঙ্গনে। আরজি কর-কাণ্ডের পরে দলের ধর্না কর্মসূচি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেটা ছিল বাকি সকলের সঙ্গে। কিন্তু বুধবার রাতে প্রচারের সব আলো কেড়ে নেন একা।

বুধবার সকালে বাঁশদ্রোণীতে পথ দুর্ঘটনায় পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার দাবিতে এবং পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগে ধৃত স্থানীয় বিজেপি নেত্রী রুবি মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে বুধবার রাত থেকেই থানায় ধর্নায় বসেছিলেন রূপা। জানিয়েছিলেন, যত দিন না দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন তিনি থানায় বসে থাকবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, রূপা থানার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। পরে আলিপুর আদালত থেকে জামিন পান তিনি। পুরো পর্বেই দল তাঁর পাশে ছিল জানিয়ে রূপা শুক্রবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি দলের কর্মসূচিতেই বারুইপুরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বাঁশদ্রোণীর ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। একটা সময়ে মনে হয়, বিচারের জন্য প্রতিবাদটা চালিয়ে যেতে হবে। সঙ্গীদের নিয়ে ধর্নায় বসি। বাকিদের রাতে বা ভোরে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও আমি সারা রাত বসে থাকি।’’ এত দিন পরে আবার রাস্তার রাজনীতিতে আসা কি নতুন করে ‘নেত্রী’ হয়ে ওঠার জন্য? রূপা বললেন, ‘‘আমি ওই ভাবে ভাবি না। সেই সময়ে নিহত বাচ্চাটার কথা, পরিবারের কষ্টের কথাই আমার মাথায় ছিল। অত রাতে থানার সামনে স্লোগানের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা হবে ভেবেই ধর্নার সিদ্ধান্ত নিই।’’

এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির কোনও দায়িত্বে নেই রূপা। তবে রয়েছেন দলের জাতীয় কর্মসমিতিতে। রাজনৈতিক জীবন যদি দেখা হয়, তবে পা রেখেই আলো ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। মূলত হিন্দি ধারাবাহিক ‘মহাভারত’-এ দ্রৌপদী হিসেবে গোটা দেশ চিনলেও বাংলা আরও অনেক চরিত্র হিসেবে চেনে অভিনেত্রী রূপাকে। রাজনীতিতে যোগ ২০১৫ সালে। প্রথম ও শেষ নির্বাচনে লড়া ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে। হাওড়া উত্তরে পরাজিত হলেও সেই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত হন। প্রসঙ্গত, ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিংহ সিধু বিজেপি ছেড়ে যাওয়ার পরে রাজ্যসভায় তাঁর জায়গায় অভিনেত্রী রূপাকে মনোনীত করে গেরুয়া শিবির। ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর শপথ নেন।

২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীও ছিলেন। সেই সময়ে রাজনীতিক রূপার লড়াকু চেহারাও দেখেছে বাংলা। যা আবার দেখা গেল বুধবারে। শুক্রবার কথার মধ্যেই রূপা জানালেন, এমনই এক ৪ অক্টোবর, ২০১৬ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। একই সঙ্গে বললেন, ‘‘এখনও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে ভাল লাগে। কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে চাই।’’

রূপার এই ভূমিকায় খুশি দলের রাজ্য নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘উনি তো নেত্রীই। সর্বভারতীয় দায়িত্বে রয়েছেন। রাজ্যসভায় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর মতো প্রতিবাদী কণ্ঠ বেশি করে পেতে চায় দল। তিনিও সব সময়ে দলের সঙ্গে, আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন।’’ একই মত রূপার পরে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি ও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হওয়া লকেট চট্টোপাধ়্যায়ের। হুগলির প্রাক্তন সাংসদ বলেন, ‘‘এখন রাজ্যের যে অবস্থা তাতে কেউই বাড়িতে বসে থাকার অবস্থায় নেই। আর রূপাদি তো বরাবরই প্রতিবাদী মুখের অন্যতম। তিনি যেমন, তেমন কাজই করেছেন। এর মধ্যে আলাদা করে নতুন কিছু দেখছি না।’’

তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে, বা পরে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সে ভাবে প্রচারে দেখা যায়নি রূপাকে। তারও আগে কলকাতা পুরসভার গত নির্বাচনের সময়ে আগের বারের জেতা ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে বিজেপির ঘরোয়া যুদ্ধ চরমে ওঠে। তাতে রূপার নামও জড়ায়। ভোটের আগে আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় ওই ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা দাস বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এর পরে মনে করা হয়েছিল, ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন তিস্তার স্বামী গৌরব বিশ্বাস। কিন্তু শেষবেলায় দেখা যায়, রাসবিহারী বিধানসভা এলাকার ওই ওয়ার্ড থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজর্ষি লাহিড়ীকে। এর পরেই ক্ষোভ তৈরি হয় বিজেপির অন্দরে। শেষে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন জমা দেন গৌরব। স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, গৌরবের পিছনে রয়েছে দলেরই সাংসদ রূপার সমর্থন। এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, তবে বিজেপি আর জিততে পারেনি ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড। গৌরব মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে রূপাকে নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। ভার্চুয়াল সেই বৈঠক ছেড়ে রূপা আচমকাই বেরিয়ে যান। সেই সঙ্গে জানা যায়, ‘ভাটের বৈঠকে ডাকেন কেন’ জাতীয় মন্তব্যও করেন তিনি।

সে সব বিতর্ক এখন অতীত। ঘটনাচক্রে, এক পথ দুর্ঘটনার পর বিজেপির ‘অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে’ রাজনীতির রাস্তা থেকে নিজেকে প্রায় সরিয়ে নিয়েছিলেন রূপা। প্রায় তিন বছর পর আর এক পথ দুর্ঘটনাই নেত্রী রূপাকে ফিরিয়ে দিল নতুন করে। রাজ্য বিজেপির অনেক নেতা-নেত্রীই চাইছেন, এই প্রত্যাবর্তন ‘স্থায়ী হোক’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rupa Ganguly BJP Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE