S Jaishankar said India did not share the vision for Asian NATO proposed by Japan dgtl
Jaishankar on Asian NATO
চিনকে ঘিরতে জাপান প্রস্তাবিত ‘এশিয়ান নেটো’য় যোগ দেবে ভারত? নয়াদিল্লির পরিকল্পনা জানালেন জয়শঙ্কর
আগ্রাসী চিনকে প্রতিরোধ করতে ভারত ও আমেরিকাকে নিয়ে ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল জাপান। যা ওয়াশিংটনের পর এ বার খারিজ করে দিয়েছে নয়াদিল্লিও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আগ্রাসী চিনকে ঠেকাতে ইউরোপের মতো এশিয়াতেও ‘নেটো’ শক্তিজোট তৈরি করতে চাইছে জাপান। ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব দিয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। এই শক্তিজোটে ভারতকে পাশে পেতে চাইছে টোকিয়ো। এই বিষয়ে কী হবে নয়াদিল্লির পদক্ষেপ? এই নিয়ে দুনিয়া জুড়ে তুঙ্গে উঠেছে তরজা।
০২১৮
জাপান প্রস্তাবিত ‘এশিয়ান নেটো’র অংশ ভারত হবে কি না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনে ‘কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ভাষণ দেন তিনি। সেখানেই ‘এশিয়ান নেটো’তে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জয়শঙ্কর।
০৩১৮
ওয়াশিংটনের অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারত কখনই অন্য দেশের সহযোগী হিসাবে কোনও চুক্তির অংশ হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের কৌশলগত স্থাপত্য তৈরির বিষয়টি কখনই আমাদের মনে আসেনি। আমাদের ইতিহাস ভিন্ন। অন্য ভাবে আমরা বিষয়গুলিকে দেখি।’’
০৪১৮
নয়াদিল্লির আগে অবশ্য জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব খারিজ করেছে ওয়াশিংটনও। ওয়াশিংটনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভান ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ‘নেটো’র মতো কোনও শক্তিজোট তৈরির প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন। যা টোকিয়োকে হতাশ করেছিল।
০৫১৮
তবে শুধু জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাই নন, আমেরিকার বিদেশ দফতরের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সচিব ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিঙ্কও এই বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের কথা বলার সময় এখনও আসেনি।’’
০৬১৮
প্রথমে আমেরিকা এবং তার পর ভারত। পর পর দু’টি শক্তিধর রাষ্ট্রের তরফে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরির প্রস্তাব খারিজ হওয়ায় এটির বাস্তবায়ন যে সম্ভব নয়, তা এক রকম বুঝে গিয়েছে টোকিয়ো। সূর্যোদয়ের দেশটির বিদেশমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া স্পষ্ট ভাষাতেই তা জানিয়ে দিয়েছেন।
০৭১৮
এ প্রসঙ্গে জাপানি বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এশিয়ায় পারস্পরিক প্রতিরক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করবে এমন একটি ব্যবস্থা অবিলম্বে স্থাপন করা কঠিন। তাই এশিয়ান নেটো তৈরি ভবিষ্যতের একটি দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও রাস্তা নেই।’’
০৮১৮
২০০৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের উদ্যোগে চতুঃশক্তি জোট তৈরি করে জাপান। এর বাকি তিন সদস্য হল আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। তবে এটি কোনও সৈন্য চুক্তি নয়। কোয়াডের সদস্য দেশগুলির ফৌজকে অবশ্য প্রায়ই একসঙ্গে যুদ্ধের মহড়া দিতে দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে বহু বার আপত্তি তুলেছে চিন।
০৯১৮
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পদস্থ কর্তাদের দাবি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ভারসাম্য রক্ষা করতে কোয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। তাই নতুন করে কোনও সৈন্য চুক্তির প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরি হলে অন্য সমস্যাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাপান-চিন যুদ্ধ শুরু হলে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে সামরিক সাহায্য দিতে বাধ্য থাকবে নয়াদিল্লি। এতে আপত্তি রয়েছে সাউথ ব্লকের।
১০১৮
অন্য দিকে ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরি হলে প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার বিভিন্ন সেনাঘাঁটিতে ফৌজ মোতায়েন করতে পারবে জাপান। যার মধ্যে গুয়াম ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ। এই শর্ত কিছুতেই মানতে রাজি নয় ওয়াশিংটন।
১১১৮
সেপ্টেম্বরে আমেরিকার হাডসন ইনস্টিটিউটে ভাষণ দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইশিবা। সেখানেই ‘এশিয়ান নেটো’র নীল নকশা তুলে ধরেন তিনি। এই রাষ্ট্রজোট কী ভাবে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি।
১২১৮
এশিয়ান নেটোয় চতুঃশক্তি জোট ‘কোয়াড’ ও তিন দেশের ‘অকাস’কে চেয়েছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে নিয়ে ২০২১ সালে তৈরি হয় ওই ত্রিদেশীয় রাষ্ট্রজোট। এই সব দেশ নিয়ে এশিয়ান নেটো তৈরি হলে বিপদে-আপদে ভারত, আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো তিনটি পরমাণু শক্তিধর দেশকে পাশে পেয়ে যেত টোকিয়ো।
১৩১৮
১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল আমেরিকার উদ্যোগে তৈরি হয় উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন বা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন (নেটো)। প্রাথমিক ভাবে ১২টি দেশ নিয়ে এটি তৈরি হলেও বর্তমানে এরসদস্য সংখ্যা ৩২। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে রয়েছে নেটোর সদর দফতর।
১৪১৮
নেটো আসলে একটা সৈন্য-চুক্তি। তাতে বলা আছে, এর আওতাভুক্ত কোনও দেশ অন্য রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হলে তা ৩২টি দেশের উপর হামলা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তখন বাকি দেশগুলি আক্রান্ত রাষ্ট্রটিকে সামরিক সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে। এতে দু’টি মাত্র ইসলামীয় দেশ রয়েছে। তারা হল তুরস্ক ও আলবেনিয়া।
১৫১৮
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের উপর পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। যার জেরে ওয়াশিংটনের কাছে আত্মসমর্পণ করে টোকিয়ো। শুধু তা-ই নয়, আণবিক বোমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সূর্যোদয়ের দেশটির শাসকেরা তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বও আমেরিকার হাতেই তুলে দিয়েছিলেন।
১৬১৮
বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের নিরাপত্তায় সেখানে বিমানবাহী রণতরী ও ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। দ্বীপরাষ্ট্রটির পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বও রয়েছে আমেরিকার ফৌজের হাতেই।
১৭১৮
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিন এই এলাকায় দাদাগিরি শুরু করায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ২০২২ সাল থেকে শুরু করে একাধিক বার জাপানের প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানকে যুদ্ধজাহাজ দিয়ে ঘিরে মহড়া চালিয়েছে বেজিং। টোকিয়োর আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সমুদ্রে আছড়ে পড়েছে চিনের পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র।
১৮১৮
আর তাই ২০২২ সালে তাঁদের দেশে পরমাণু হাতিয়ার মোতায়েনের জন্য ওয়াশিংটনের কাছে আর্জি জানিয়েছিল টোকিয়ো। যা সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করেছিল আমেরিকা। এর পরই অসন্তুষ্ট জাপান বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সৈন্য চুক্তি করার জন্য সুর চড়াতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত এশিয়ান নেটো তৈরির প্রস্তাবও এসেছে এই দ্বীপরাষ্ট্রের থেকে। যা পূরণ না হওয়ায় বিকল্প কোন রাস্তায় জাপান হাঁটে, সেটাই এখন দেখার।